
ঢাকা শহরের ৪২ শতাংশ রোগী ঠিক কোন এলাকায় সে হদিস সরকারী হিসেবে নেই। সংখ্যার হিসেবে চার (৪) হাজারেরও বেশী রোগী কোন এলাকার সেটা জানা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠান ‘রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট’ (আই.ই.ডি.সি.আর.) দেশের করোনা রোগের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আই.ই.ডি.সি.আর. তাদের ওয়েবসাইটে (https://www.iedcr.gov.bd/) প্রতিদিন পিডিএফ ফাইল আকারে সারা দেশের জন্য জেলা ভিত্তিক আর ঢাকা শহরের জন্য এলাকা ভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু জেলার তালিকায় দেয়া ঢাকা শহরের মোট রোগীর সংখ্যা আর এলাকাভিত্তিক তালিকার মোট রোগীর সংখ্যায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে।
এই গড়মিল দিন দিন বেড়েই চলেছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে মাত্র দুই (২) শতাংশ ঠিকানাবিহীন করোনা রোগী থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝি ৪০ শতাংশ পার হয়েছে (চিত্র ১)। এখানে ঠিকানাবিহীন বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই সব রোগী যারা কোন এলাকার সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে দেখা যাচ্ছে শুধু ঢাকা শহরে নয় সারা দেশে জেলা ভিত্তিক যে তালিকা সেটা যোগ করলে সারা দেশের মোট রোগীর সংখ্যা মিলছে না। দেশের প্রায় ২৬ শতাংশ রোগী কোন জেলার সে হিসেব মেলে না।

আই.ই.ডি.সি.আর.-এর তথ্য অনুযায়ী মে মাসের ১৭ তারিখে ঢাকা শহরের মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৯,৫৬৫ জন (চিত্র ২)। তবে এলাকা ভিত্তিক তালিকার সংখ্যাগুলো যোগ করলে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৫,৫১০ জনের হিসাব। তার মানে প্রতি ১০ জন রোগীর প্রায় ৪ জন (বা ৪২ শতাংশ রোগী) কোথা থেকে এসেছে সেটা জানার সুযোগ থাকছে না। একটা বড় সংখ্যক রোগীর হদিস না থাকায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার করোনা আক্রমণের মাত্রা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না।

তবে তার থেকে বড় যে প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় সেটা হলো – যদি রোগীর ঠিকানাই না জানা যায় তাহলে ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’ কি করে করা হচ্ছে? অর্থাৎ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সম্ভাব্য আর কাকে কাকে রোগটা দিয়ে থাকতে পারে সেটা কি করে জানা যাবে? দেশে লকডাউন শিথিল করার পরও করোনা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র সমাধান হতে পারতো ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’। কিন্তু সেরকম কিছু হচ্ছে বলে কোথাও কোন খবর নেই।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া যে সব পদক্ষেপের কারণে করোনা রোগের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে তার অন্যতম উপায় ছিল ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’। রোগীর সংখ্যা একেবারে কমে এলেও ম্যানুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি এখন অস্ট্রেলিয়াতে মোবাইল ফোন আ্যপ-এর মাধ্যমে ‘কনটাক্ট ট্রেসিং’ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সেখানে রোগীর ঠিকানাই সঠিকভাবে রাখা হচ্ছে না।

উদ্বেগের বিষয় হলো, ইতিমধ্যে ঢাকা শহরে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা সরকারী হিসেব অনুযায়ী ১০ হাজার ছুঁই ছুঁই করছে। দেশের প্রায় অর্ধেক রোগী ঢাকা শহরের আর এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। গত দুই সপ্তাহে (৫ মে থেকে) ঢাকা শহরে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বস্তুত ঢাকা শহর বাংলাদেশে করোনা রোগের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে (চিত্র ৩)। শহরের যাত্রাবাড়ী (২১৪), মহাখালী (২০৪) এবং রাজারবাগ (২০২) এলাকায় রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। এছাড়া মুগদা, মোহাম্মদপুর, কাকরাইল, তেজগাঁ, লালবাগ, বাবুবাজার এবং উত্তরায় রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী (চিত্র ৪)। এসব এলাকায় রোগীর সংখ্যা ১০০ থেকে ২০০ জন। রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বাবুবাজার, মহাখালী, মুগদা এলাকায়। গত দুই সপ্তাহে এই এলাকাগুলোতে রোগীর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বা তারও বেশী হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা রোগের আরো বেশী বিস্তার রোধ করতে চাইলে ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের জেলাগুলোকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এবার ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও বিভিন্ন জেলা শহর থেকে গ্রামের দিকে জনস্রোত ঠেকাতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ জারি করতে হবে।
Palash Basak: PhD Researcher, School of Environmental and Life Sciences (Environmental Science and Management), University of Newcastle, Australia, email: Palash.Basak@newcastle.edu.au, Palash.Basak@gmail.com