মুনতাসীর ইবনে আযকার, কানাডা থেকে: অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট তনিমা তাসনিম অনন্যা আমেরিকার বহুল প্রচারিত পাক্ষিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিন “সাইন্স নিউজ”-এর দৃষ্টিতে ২০২০ সালের ১০ জন সেরা উদীয়মান ইয়াং সাইন্টিস্টের একজন হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সাইন্স নিউজ ম্যাগাজিন প্রতি বছর সারা পৃথিবী থেকে ১০ জন সেরা উদীয়মান ইয়াং সাইন্টিস্ট নির্বাচিত করে এবং তাদেরকে ‘সাইন্টিস্ট টু ওয়াচ’ হিসেবে মনোনীত করে। বিশ্বের খ্যাতনামা নোবেল বিজয়ী সাইন্টিস্ট, ইউএস একাডেমী অফ সাইন্সের নির্বাচিত মেম্বার এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোর সাইন্টিস্ট টু ওয়াচ-দের নমিনেশনের মাধ্যমে ৪০ বছরের কম বয়সী বিশ্বের উদীয়মান ইয়াং সাইন্টিস্টদের গবেষণার সাফল্য এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে এই সেরা ১০ জনকে মনোনীত করা হয়।

তনিমা’র গবেষণার বিষয় হচ্ছে ব্ল্যাকহোল। তনিমা তার উদ্ভাবিত মডেলের মাধ্যমে সমগ্র ইউনিভার্সে অবস্থিত সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলগুলোর একটা পরিপূর্ণ ম্যাপিং করার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ তনিমা তার উদ্ভাবিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টের মাধ্যমে ইউনিভার্সে ব্ল্যাকহোলগুলো কোথায় অবস্থান করছে, কিভাবে ডেভেলপ হচ্ছে এবং কিভাবে ব্ল্যাকহোলগুলো গ্যালাক্সির সেন্টারে থেকে তার চারপাশের সবকিছুর উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেসব দেখানোর চেষ্টা করেছেন।
ব্ল্যাকহোলের মাধ্যমেই গ্যালাক্সির উদ্ভব এবং যবনিকা ঘটে। তনিমা বলছেন, যখন কোনো ব্ল্যাকহোল তার কিছু এনার্জি গ্যালাক্সির মধ্যে রিলিজ করে তখন এই অতিরিক্ত এনার্জি থেকেই নতুন নতুন নক্ষত্রের সৃস্টি হতে পারে। অথবা এই অতিরিক্ত এনার্জির প্রভাবে গ্যালাক্সির ভিতরে নক্ষত্র তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর নক্ষত্র তৈরি না হলে ক্রমান্বয়ে গ্যালাক্সির মৃত্যু ঘটবে। সুতরাং কিভাবে ব্ল্যাকহোল থেকে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার এবং সেখান থেকে সোলার সিস্টেম বা স্টার-প্ল্যানেট তৈরি হচ্ছে এবং সর্বপোরি এই ইউনিভার্সে প্রাণের উদ্ভব হচ্ছে – এসব বোঝার জন্য ব্ল্যাকহোলগুলোর ফরমেশন এবং গতি-প্রকৃতি বোঝাটা অত্যন্ত জরুরী। এসব কারনেই অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সাইন্সে তনিমা’র গবেষণাকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
মাত্র ২৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি এই অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট যুক্তরাস্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করে বর্তমানে পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন ডার্টমাউথ কলেজের ফিজিক্স এন্ড অ্যাস্ট্রোনোমি ডিপার্টমেন্টে। এর আগে তনিমা যুক্তরাষ্ট্রের নাসা এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান পার্টিক্যাল ফিজিক্স ল্যাবরেটরিতে (সার্ন) ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের গর্ব, উদীয়মান ইয়াং সাইন্টিস্ট তনিমা তাসনিম অনন্যা’র জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
সোর্স: সাইন্স নিউজ ম্যাগাজিন, ভলিউম-১৯৮, নম্বর-৭, অক্টোবর ১০-২৪, ২০২০।