প্রশান্তিকা ডেস্ক: আফগানিস্তানে পতন হয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির শাসনের। তালেবান কাবুলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বিবিসি জানায়, কোন রকম রক্তপাত ছাড়াই কাবুল দখল করেছে তালেবান বাহিনী। অন্যদিকে দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট গনি। তিনি রোববার রাতে তাজিকিস্তানের উদ্দেশে রওনা হন। এক ফেসবুক পোস্টে গনি বলেছেন, কাবুলে রক্তপাত এড়াতে তিনি দেশ ছেড়েছেন। তালেবানরা বিশ্বাস করছে বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে তারা সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশ শাসন করতে পারবে। দীর্ঘ ২০ বছর পরে সে দেশে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করতে যাচ্ছে। আর নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তালেবানের সহ প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল গনি বারাদারের নাম শোনা যাচ্ছে। আফগানিস্তানে অবস্থিত ব্রিটিশ, আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। পশ্চিমা আর্মিদের সহায়তায় তারা দেশটি ত্যাগ করছেন বলে এবিসি ২৪ জানায়।

প্রথম আলো জানায়, তালেবান যোদ্ধারা গতকাল রোববার রাজধানী কাবুলে প্রবেশে করে। দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে তালেবান বাহিনী। এর পর তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নায়েম কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তালেবানের কয়েকটি সংযোগমাধ্যম (চ্যানেল) রয়েছে। আমরা এসব চ্যানেল আরও সক্রিয় ও উন্নত করবো।’ তালেবানের এ মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা (তালেবান) বিশ্বের সকল দেশকে আহ্বান জানাচ্ছি, যেকোন বিষয়ে আমাদের সঙ্গে বসুন। আমরা নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার ও আফগান নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা রক্ষায় সবসময় সচেতন থাকবো।’ কয়েকদিন থেকেই আফগানিস্তানের একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নেয় তালেবান। রোববার তালেবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার নেটো মিত্ররা। কিন্তু আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রাতের অন্ধকারে – প্রায় চুপিসারে – যখন মার্কিন সৈন্যদের শেষ দলটি কাবুলের নিকটবর্তী বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগ করে – তার মাত্র ৬ সপ্তাহ পার হতে না হতেই আফগানিস্তানের অধিকাংশ ভূথণ্ড দখল করে করে নিয়েছে তালেবান।
তালেবান উৎপত্তি: তালিবান বা তালেবান (পশতু: অনুবাদ ‘ছাত্র’) আফগানিস্তানের একটি দেওবন্দি ইসলামি আন্দোলন এবং সামরিক সংগঠন যারা বর্তমানে দেশের মধ্যে যুদ্ধরত । দেওবন্দি, ইসলামি মৌলবাদ, ইসলামবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ও পশতুন জাতীয়তাবাদ তাদের মূলমন্ত্র। ১৯৯৪ সালে মোল্লা ওমর তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বর্তমানের শীর্ষ নেতা আব্দুল গনি বারাদার ছিলেন সহ প্রতিষ্ঠাতা।
২০১৬ সাল থেকে মৌলভি হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তালেবান নেতা। ২০২১ সালের হিসাবে তালেবানের আনুমানিক ১,৫০,০০০ যোদ্ধা রয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান আফগানিস্তানে ৪ ভাগের ৩ ভাগের ক্ষমতায় ছিলো।১৫ আগষ্ট ২০২১ সালে আবারও দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে এলো তালেবানের হাতে। আল কায়িদা তাদের মিত্র বলে পরিচিত।