
সামাজিক অসঙ্গতি বা অন্যায় গুলিকে সংশোধন করার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার পূ্র্বশর্ত হলো পদক্ষেপটির প্রকৃতি, প্রভাব এবং এর পরিণতির বিস্তারিত বিষয় গুলির উপর মনোনিবেশ করা। সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ এসব পদক্ষেপের ডিটেইল এনালাইসিস করে তার উপযোগিতা যাচাই করা । এর জন্য সমাজবিজ্ঞানীদের সমাজের সম্ভাব্য যাবতীয় কার্যকলাপ , কার্যকলাপের উৎপত্তি , চর্চা এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও ব্যক্তির উপর তার প্রভাব তথা প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকা আবশ্যক। অন্যথায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনাই বেশী।
সমসাময়িক অনলাইন প্লাটফর্ম Me Too এর গঠন, বিস্তার , উপযোগিতা ও এর দ্বারা সৃষ্ট সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাতের জন্যই উপরোক্ত ভূমিকার অবতারনা।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি নারীবাদী, পুরুষবাদী এই শব্দদ্বয়ের পরিবর্তে একটি শব্দ মানববাদী বিশ্বাস করার পক্ষে। নারী কিংবা পুরুষের উপর সামাজিক অন্যায়, অত্যাচার এবং জুলুমের বিষয়টিকে আমি মানবিক লাঞ্ছনার পর্যায়ে চিন্তা করি। সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে সর্বদাই ন্যায়বিচার অন্তর্নিহিত থাকে না। শৃঙ্খলাটি রাষ্ট্রের জন্য যেমন জরুরী তেমনি ন্যায়বিচার মিশ্রিত শৃঙ্খলা ব্যক্তিসত্ত্বার প্রশান্তির জন্য জরুরী।
সমাজকল্যাণ তথা মানবকল্যাণের জন্য ব্যক্তিগত অথবা সমষ্ঠিগত যে কোন পদক্ষেপ সর্বদাই প্রসংশনীয়। Me Too প্লাটফর্মটিও সম্ভবত সে উদ্দেশ্যে গঠিত। এখানে ‘ সম্ভবত’ শব্দটির আশংকা কাটিয়ে ‘অবশ্যই’ শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষন আবশ্যক। যারা Me Too প্লাটফর্মের সাথে পরিচিত তারা অবশ্যই অবগত আছেন এ প্লাটফর্মে উপস্থাপিত বিষয় সর্ম্পকে। কারন ইতোমধ্যে এই বিষয় আন্তর্জাতিক গন্ডি পেরিয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। প্রায় প্রতিদিন আমরা এই প্লাটফর্ম ব্যবহার হতে দেখছি।
এতে আহবান করা হচ্ছে মেয়েদের চলার পথে বিভিন্ন সময়ের ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো তুলে ধরার। তুলে ধরার মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি হয়রানিকারক ব্যক্তিকে লজ্জিত করে এর প্রবনতা রোধ করা। যৌনতাকে যেন মানুষ সামাজিক শালীনতার পরিধিতে রেখে চর্চা করে এটাই সর্বশেষ উদ্দেশ্য। শালীনতার পরিধি বলতে পারষ্পরিক সম্মতিকেই বুঝায়। এই পরিধির বাইরে যে কোন প্রকার যৌনতা অবশ্যই হয়রানি বা শ্লীলতাহানির সামিল।
কিন্তু ভাবনার বিষয় অন্য কোথাও, তা হলো এর প্রভাব। উপস্থাপিত ঘটনাগুলোর সত্যতা, উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে ব্যক্তিকে সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত করা, ঘটনাগুলোর বর্ননায় যৌনরসের ছোঁয়া যা কিনা শালীন পরিবেশ নষ্ট করে এবং পরিশেষে ঢালাওভাবে পুরুষজাতিকে যারা কিনা আদর্শ বাবা, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ ভাই, আদর্শ স্বামী তাদের মর্যাদা ক্ষুন্নের বিষয়গুলো কতটুকু বিশ্লেষন স্বাপেক্ষে প্রকাশ করা হচ্ছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক সংস্কারের নামে সমাজ দূষনেই সহায়তা করা হবে।
সর্বদাই একটি নারীর ভাষ্য শুধুমাত্র নারী বলেই গ্রহনযোগ্য হবে এ ধারনা আর যা কিছুই বহন করুক, এটা প্রভাবমুক্ত সমমানসিকতার জন্ম দেয় না। আমি মানুষের পক্ষে , আমি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সুস্থ মানসিকতার পক্ষে।
দীন মোহাম্মদ মনির
লেখক, কলামিস্ট
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।