ধোঁয়ার অন্ধকারে আচ্ছন্ন সিডনি, ফেরী চলাচল বন্ধ

  
    

প্রশান্তিকা রিপোর্ট: সিডনির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই, বিকেল নাগাদ কোথাও কোথাও ৪৩ ডিগ্রিতে উঠবে। অন্যদিকে দাবানলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পুরো সিডনি ও দাবানল এলাকায় অন্ধকার হয়ে আসছে। সিডনি হারবারে ফেরী চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ধোঁয়ার কারনে ১০০ মিটার দূরের কিছু দেখা যাচ্ছেনা। ফেরী রুটগুলোতে যাত্রী আনা নেয়ার জন্য বিশেষ বাস মোতায়েন করা হয়েছে। সিডনির ধোঁয়া গত পাঁচ বছরের মধ্যে তিনগুণ ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে। দুপুরেই সূর্যের আলো রক্তিম আঁকার ধারন করছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সিডনিবাসী এই দৃশ্য অবলোকন করছে।

সিডনি এয়ারপোর্টে ফ্লাইটগুলোও দেরিতে উঠানামা করছে। দাবানলে বনভূমিতে বৃক্ষ যেমন পুড়ে শেষ হচ্ছে তেমনি আশেপাশের বাড়িঘর রক্ষা করতে দমকল বাহিনীর সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন। পুড়ে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার বন্যপ্রাণী।

ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সিডনি এয়ারপোর্টের রানওয়ে, ছবিটি তোলা হয়েছে মাত্র ১০০ মিটার দূর থেকে।

নিউ সাউথ ওয়েলস’র দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকা ব্লু মাউন্টেন, শোল হ্যাভেন, ইলাওয়ারা থেকে শুরু করে পশ্চিমাঞ্চলের কফ্স হার্বার, হাক্সবেরী, টারী সহ অসংখ্য এলাকার বনভূমি জ্বলছে। বাতাসের বেগে সেখানকার ছাই উড়ে আসছে সিডনি শহর ও সাবার্ব এলাকায়। রুরাল ফায়ার সার্ভিসের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে, আজ দুপুরে রাজ্যের ৮৫ বনভূমি জ্বলছে যারমধ্যে ৪২ টিতে দমকল বাহিনী কিছুতেই নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছেনা। এরমধ্যে গ্রীন ওয়াটল, গসপার্স মাউন্টেন, থ্রি মাইল, কেরী রিজেজে ভয়াবহ আঁকার ধারন করেছে। প্রায় ২৭০০ দমকল কর্মিরা একটানা কাজ করেও হিমশিম খাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দমকল কর্মী নিয়ে আসছে। তারা শীঘ্রই অস্ট্রেলীয় কর্মিদের সহযোগিতায় নেমে পড়বেন। নীচের রুরাল ফায়ার সার্ভিসের দেয়া ম্যাপে খেয়াল করুন ক্যানবেরা থেকে কুইন্সল্যান্ডের সীমানা পর্যন্ত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের অসংখ্য বনভূমিতে আগুন জ্বলছে ।

জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস ধরে জ্বলতে থাকা ভয়াবহ আমাজন দাবানলের চেয়েও ৯গুণ ভয়াবহ অস্ট্রেলিয়ার এই দাবানল। অন্যদিকে আবহাওয়ার খবরে আগামী জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি নাগাদ বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। সামনে গ্রীষ্মকালের দাবদাহ, সেই হিসেবে দাবানল বন্ধের কোন ইঙ্গিত নেই।

দুপুরের দিকে সূর্যের রক্তিম আভা

সিডনি শহরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষ ধোঁয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করছে। বিশেষ করে শিশু এবং আ্যসমা, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে আক্রান্ত রোগীদের কোনমতেই মাস্ক ছাড়া বাইরে যেতে বারণ করা হয়েছে। পাবলিক ও প্রাইভেট স্কুলগুলোতে ক্যাম্পিং, এসেম্বলীসহ যেকোন বাইরের এক্টিভিটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

চীনের শাংহাই, বেজিং, ভারতের দিল্লী, বাংলাদেশের ঢাকা শহর সহ পৃথিবীর অনেক শহরের বায়ু দূষণ মারাত্মক পর্যায়ের। প্রচলিত ছিলো অস্ট্রেলিয়ার ব্লু মাউন্টেন থেকে ফ্রেশ বাতাস সিলিন্ডারে ভরে চীনে রপ্তানী করা হতো। আর সেই ব্লু মাউন্টেনে দাবানলে এখন বেজিংয়ের চেয়ে এগারো গুণ বেশি মাত্রায় দূষণ রয়েছে। এমনকি সিডনির বায়ু নিশ্বাসে মানুষ ৪০ টি সিগারেটের সমপরিমাণ কার্বন গ্রহণ করছে। এরকম অবস্থা সিডনিতে স্মরণকালে ঘটেনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments