পরবাসী যে আমি আজ বা আপনি একটা স্বপ্ন বুনে, একটা নুতন জীবন পাবো বলে, কেউ বা নিয়তির টানে। যে আমি বা আপনিটা দেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছি সাত সমুদ্দুর, নিজ মাটির মায়া ছেড়ে সেই আমরা প্রবাসী, আমি বলি পরবাসী। নুতন এই দেশকে করেছি আপন, এই দেশও বুকে টেনে দিয়েছে ঠাই। নাহ আমাদের অনেকেই হয়তো একদমই চাপা দিয়ে ফেলেছি ফেলে আসা মাতৃভূমিকে ঘিরে থাকা দীর্ঘশ্বাসটা… যখন তখন আর বুকের মাঝে নেমে আসেনা কোন সাইবেরিয়া!!!
তবুও কেউ কেউ কোন না কোন সময় হঠাৎ কাজের ফাঁকে ট্রেনে চেপে বাড়ী ফেরার পথে এক টুকরো মেঘ কাটা নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কি টের পান বুকের মাঝে কাশবনের লুটোপুটি, করে উঠে কি ঝিকমিক শৈশবের নদী তীরের বালু চিকচিক সেই দিগন্ত জোড়া মাঠ!!!
আপনার কি মনে পড়ে, শেষ কোন তীব্র খর তাপের চৈত্র দিনের কথা। কোন একদিন আপনিও কি কুড়াতে পেরেছিলেন অবেলায় ঝড়ে পড়া মুঠো মুঠো আম। কোন কৃষ্ণচুড়ায় তাকিয়ে ফেলেছেন কোন দিন দীর্ঘশ্বাস প্রিয় মানুষটিকে মনে করে।
ঝুম বৃষ্টিতে শেষ কবে ভিজেছিলেন। ভর দুপুরে একদিন ঘুমিয়ে গিয়ে পেয়েছিলেন কি একটা কনে দেখা আলোময় সন্ধ্যা। আচ্ছা আপনার কি মনে আছে কোন একদিন আপনার শৈশবে দেখেছিলেন ঠিক, ঝুম বৃষ্টি শেষে সবুজ ঘাগরী পড়া পুরো একটা প্রকৃতি!!! প্রাণ জুড়ানো সবুজ, বৃষ্টিস্নাত সবুজ দেখেছেন আপনি। দিগন্ত জোড়া পাকা ধানের মাঠের সরু আলপথ ধরে হেটেছিলেন কোনদিন। আহা ধানের গন্ধ কেমন, কেমন তবে আমের বৌল… মনে পড়ে? আচ্ছা আপনি কোনদিন কুয়াশায় পা ভিজিয়েছেন। নরম ঘাসে পা ছুঁয়ে দেখেছেন কোনদিন বিলের ধারের পান কৌড়ির উড়ে যাওয়া। শীতের সকালের সোনা রোদে ভিজেছেন কোনদিন? বাংলার বসন্ত বর্ণনায় কবিগুরু যে বলেছেন ‘কত ফুল ফুটে’ আপনার মনে আছে কত ফুল সুবাস আপনাকে মাতিয়ে গেছে আশৈশব, আদৌ ও কি গেছে। কোকিলের ডাক কি শুনেছেন সত্যি কান পেতে? কোকিলের ডাক আসলে কি বলে যায় কানে কানে, প্রথম না পাওয়া প্রেম বিরহ নাকি ‘দুজনে দেখা হলো’ সেই অনুভব!!!
নাহ আমি বোধ হয় একদমই কাব্যময় এক পৃথিবী ধরে হাঁটছি আপনাকে নিয়ে। ফিরে আসি বাস্তবে। কি লাভ এই সব স্মৃতি মনে করে, বেদনা খুঁড়ে। একদিন জীবনে যা ছিলো পরদিন তা নাই থাকতে পারে, এই তো জীবন ধারা। সে আমি আপনি পরবাসীই হই, দেশান্তরি হই বা না হই…
নিজ দেশে থাকলেই কি যে বাংলা আমার সোনার বাংলা। যে বাংলার রুপ দেখে মাতোয়ারা হয়ে গাই এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সেই বাংলায় করতে পারি বাস। না জীবন বাস্তবতা, পরা বাস্তবতা ভৌগলিক নানান ব্যাত্যয় আজ আমাদের চেনা পৃথিবীকে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ বদলে দিচ্ছে অল্প অল্প করে ভিতর ও বাহিরে।
বদলে যাচ্ছে আমাদের জীবন ধারা। শুধু প্রকৃতিকে ঘিরে প্রেম বা সেই ফেলে আসা শৈশবের যে বাংলাদেশ তার অনেকটাই আজ আসলে আছে শুধু আমাদের কবিদের সাহিত্যিকদের কালি ও কলমে। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল আছে আমাদের প্রিয় পিসির লক স্ক্রিনে। কুয়াশা ভেজা যে সবজী ফলানো কৃষক আমাদের অনেক দূরের কেউ। না সে আমাদের আত্মীয় না। তাকে নিয়ে লিখতে ভালো লাগে, কিন্তু তাঁকে জড়িয়ে ধরে আমাদের বলার অবকাশ কি কারো আছে, ‘’তুমি আমাদের সব সাধকের বড় সাধক’’ তুমিই আমার বাংলাদেশ, ফলাও সোনা গড়ছো এই দেশ!!!
বাংলাদেশ ছেড়ে যে আপনি এসেছেন এক যুগ বা দুই যুগ তাঁর ফেলে আসা বাংলাদেশ আজ অনেক বেশীই বদলে গেছে। বদলে গেছে আপনার চেনা মুখ। দেশের নদীগুলো সেই ধার আর নেই। এখন নদী বাঁচাতেও লড়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ।
নদীর একুলে থাকা মানুষেরা ভাবে ওপারের নদীগুলো আছে বেশ
তাদের বুঝি নেই কোন দুঃখ নেই কোন বিদ্বেষ
এই পারের নদী ভাবে দুঃখ সব থাকুক চাপা নিয়ে সুখের রেশ!!!
নাদিরা সুলতানা নদী
সহযোগী সম্পাদক, প্রশান্তিকা
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া