নিউ ইয়র্কে সমাহিত হলেন ‘পাঠাও’ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ

  
    
ফাহিম সালেহ

প্রশান্তিকা ডেস্ক: বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস ‘পাঠাও’-এর অন্যতম উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহকে নিউ ইয়র্কে সমাহিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার নিউ ইয়র্ক সময় দুপুর ১২টায় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্ক শহরের পোকেস্পী রুরাল সেমিট্রিতে জানাজা শেষে তাকে সেখানেই সমাহিত করা হবে। এসময় বাংলাদেশী কমিউনিটি এবং তার শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে শোক বিহ্বল দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাত্র ৩৩ বছর বয়সেই ফাহিমের মতো উদীয়মান এবং সফল একজন উদ্যোক্তার জীবনাবসান হলো।

গতকাল নিউ ইয়র্ক শহরের পোকেস্পী রুরাল সেমিট্রিতে জানাজা শেষে সমাহিত করা হয় ফাহিমকে।

জানা গেছে, ভাইয়ের জানাযায় অংশ নিতে ফাহিমের বড় বোন ও তার স্বামী মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিউ ইয়র্কে পৌঁছেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞার কারনে নিহত ফাহিমের পরিবার গণমাধ্যমের সঙ্গে তেমন কোন কথা বলেননি। তার জানাযায় করোনার নিষেধাজ্ঞার পরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী, তার বন্ধুরা এবং পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেলে ফাহিম সালেহ’র খণ্ড-বিখন্ড মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় তার মরদেহের পাশে একটি ইলেকট্রনিক করাত পাওয়া যায়। পরবর্তীতে হত্যার অভিযোগে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী টাইরিস হাসপিলকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, সন্দেহ এড়াতে পেশাদারি ছকে ফাহিমকে নৃশংসভাবে খুন করে হাসপিল। ফলে শুরুতেই পুলিশ ধারণা করে, এই কাজ কোনো পেশাদারি খুনির। গ্রেফতারের দিন হাসপিল ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড দিয়েই বান্ধবীর জন্য জন্মদিনের গিফ্ট কেনে। খুনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ যখন মরিয়া তখন বান্ধবী নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন।
ফাহিমকে হত্যার পর ওই তরুণীর সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা গেছে ঘাতক হাসপিলকে। অন্যান্য কেনাকাটার পাশাপাশি বান্ধবীর জন্মদিনের বেলুনও কিনেন তিনি। আর সব কেনাকেটা করেন ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। ভিডিওতে একই বিষয় প্রকাশ পায়।
শুক্রবার সকাল ৮.৪৫ টায় হাসপিলকে ম্যানহাটনের সোহো এলাকায় তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি)।

ফাহিমের খুনের অভিযোগে গ্রেফতার টাইরিস হাসপিল।

তার বিরুদ্ধে ‘সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক টাইরেস ডেভো হাসপিলের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার অভিযুক্ত হাসপিলকে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে নেয়া হলে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন করা হয়।

অভিযুক্ত হাসপিল বস ফাহিমের ৯০ হাজার ডলার চুরি করেছিলেন। আর সে কারণেই ফাহিম তাকে বরখাস্ত করেন এবং টাকা ফেরৎ দেবেন এই প্রতিশ্রতি দেয়ার কারণে ফাহিম পুলিশকে জানায়নি। আর সেটাই কাল হলো ফাহিমের জন্য। তাকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার জন্যই এই খুনটি করে হাসপিল।

হত্যার পর বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে ফাহিমকে কাটা হয়েছে। করাতটি পাশেই পড়ে ছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশ ভরা ছিল একটি ব্যাগে।
ফাহিমের মরদেহ টুকরো করা শেষে সেগুলো ব্যাগে ভরে ফেলার পরিকল্পনা ছিল হাসপিলের। তবে তার আগেই ফাহিমের কাজিন বোন এসে কলিংবেল চাপতে থাকলে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায় সে।

ফাহিম প্রযুক্তি জগতে নিজের পথচলা শুরু করেন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে। এরপর ধীরে ধীরে নিজেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পাঠাওয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে নাইজেরিয়া ও কলম্বিয়ায় রাইড শেয়ারিং ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত হন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments