জন্ম-সন্ন্যাসী
সন্ন্যাসী তোমাকে হতেই হবে! যৌবনের কঠিনতম মোহ ত্যাগ করে যেতেই হবে! প্রতিদিন রূপটানে মধ্যচল্লিশে যৌবনের রূপ ছাড়তে ছাড়তে যেতে হয়। প্রতিদিন শোয়ার আগে রাত-আয়নায় দাঁড়াতে হয়। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগে ভেতরকে সইয়ে নিতে হয় নিত্য! ত্যাগই নিগূঢ় সত্য!
যেমন ত্যাগ করতে হয়েছিল দ্বিধা থরথর বিকচন্মুখ যৌবন । বহু প্রগলভতার কৌশল। অনেক ভুলের মায়া। কতো আবেগের ছায়া ও কায়া।
যেমন ত্যাগ করতেই হয়েছে চিরচঞ্চল কৈশোর! হারাতে হয়েছে ডাংগুলি, গজি, আসপাশ, বোম্বোবোস… । হারিয়ে গেছে এলোটিং বেলোটিং সইলো ! ঋষির মতো মনোযোগের জগৎ ভোলানো ‘খেলা ভাঙার খেলা’ গুলো…
আত্মজকে ঘিরে আনমনে শৈশবে ফিরে মুছে দিতে হয় নিমেষ! ত্যাগ করতে হয় লজ্জার উন্মেষ। প্রৌঢ়ত্বের শেষ মায়ায় রোহিত করতে হয় সন্তান প্রীতি। ত্যাগ, ত্যাগ, ত্যাগ… সমস্ত দ্যুতি!
আমরা তো জন্ম-সন্ন্যাসী!
কালে কালে কাল ত্যাগ করেছি।
আমরা তো জন্ম-সন্ন্যাসী!
পরিশেষে শ্বাসটাও ত্যাগে
হয়ে যাবো পর্ণমোচী!
আমরা তো জন্ম-সন্ন্যাসী!
ধ্রুপদী পলাশ
পলাশ গ্রাম ছেড়ে এসেছি অনেকদিন
মাঝে মাঝে গ্রাম উঠে আসে এখানে
কোথায় বসাই তাকে এ কঠিন বন্দরে
বেখাপ ধোঁয়াশায় বিবর্ণ পিঙ্গল মলিন
এখানে তো মাটির চাষ নেই
কাঁকর নেই পথ ভোলাবার
ভূমির কাঠিন্য অসহ্য সবার
শুধু রচনার এলোমেলো খেই
থেকে যাক যেখানে যা ছিলো ভূমি
পাথর রমণীর শ্রমময় বনময় গীতি
পাহাড়ে ভূয়াং এর দ্রিমি দ্রিমি ধ্বনি
ধ্রুপদী শিলাতেই ফিরে যাবো আমি
গান যাপন
(অভিমুখ নিরুপমা রহমান)
বাবা-মা দেহভাণ্ড থেকে একটি
সুরের জন্ম দিতে চাইলেন,
বিশুদ্ধ সুর!
কার্পেট প্রস্তুত রাখলেন তার আবাহনে।
জয়তশ্রী আবির্ভূতা হলো
দশ মাস দশ দিনে!
কল্যাণীর ত্রিবর্ণচ্ছটায়
ভরে উঠল মায়ের আঁচল,
কান্নায় ঝরে পড়লো মেঘ পঞ্চম।
হিন্দোল হাসিতে পলাশের রঙ।
কৃষ্ণচূড়া আকাশ জুড়ে বিলাবলি ঢঙ!
উঠোনজুড়ে শীতল ছায়া
উঠোন জুড়ে মায়া
উঠোন ভরে শিউলি কাশে
মন পাবনের কায়া।
এমনি করে সুরের চলা
তিনের সন্ধ্যাবেলা
ছোট্ট পরীর আঙ্গুল ছুঁয়ে
উদরা থেকে তারা
এমনি করে খেলনাপাতি
সাতটি তারের মায়ায়
আটকে গেল চারের সকাল
তানপুরাটার ছায়ায়
কায়ার থেকে ছায়া বড়ো
ভারের থেকে ভর
শ্রী’র কোলে সাঁঝের তারা
ভোর আকাশে ভৈরব
এমনি করেই সুরের চলা
এমনি করে বিনুনী-বেলা
নদীর মানে গাঙের ভাষা
উথল গানের ভেলা
মান্দাস ভাসিয়ে কুমারী সুর
উজান বেয়ে উঠলো গেয়ে
পথের শেষে বিদেশ ভূঁয়ে
অলীক সুরের ঘুম
সুর চেয়েছিলো বাবা-মা…
বিশুদ্ধ সুরের
এক
অনাবিল নিরুপমা….
১৪২৭, মহালয়া।
বিভাসকান্তি মণ্ডল
অধ্যক্ষ, কাশীপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ।
শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক ও কবি।
কাশীপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের উদ্যোগে লোকায়ত সংস্কৃতি এবং লোকগান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার পরিচালনা করেন তিনি। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেছেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র কাশীপুর, জন্মভূমি ও স্থায়ী আবাস পূর্ব মেদিনীপুর জেলা।