
কিন্তু আজ লিখতে বসেই নস্টালজিক হয়ে গেলাম। একটা চাপা কষ্ট নিয়ে সবার আগে নিজের কথা বলি, ছোট্ট করে, খুব বেশী ভালো কিছুই ঘটেনি যার স্মৃতি দিয়ে সবটুকু আবেগ উচ্ছ্বাস নিয়ে আপ্লূত হয়ে বলবো, দারুণ একটা ২০১৮ গেল আমার। উল্টোটা ঘটেছে অনেকবার। নিজের কিছু স্বপ্ন এসে ধরা দিয়েও, যখন ছুঁয়ে দেব দেব এমন একটা সময়ে আবেশে চোখ বুজে জীবন সুন্দর বলবো, ঠিক তখনই পেয়েছি স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট। নিজের ভিতরের সবটুকু ইতিবাচকতা দিয়েও হিমশিম খেয়েছি জীবনকে ভালোবেসে আগলে রাখতে। কেউ কেউ বুঝেই হোক না বুঝেই হোক ব্লেসিংস হয়ে জীবনে এসে দুর্দান্ত কিছু লেসন দিয়ে গেছে। নুতন করে বুঝেছি জীবন কী ভীষণ অনিশ্চয়তায় ভরপুর। মানুষের জীবন কতোটা রহস্যময়। কিছু সময়কে মেনে নিতে না পারলেও মানিয়ে নিয়েছি। এর বাইরে মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত ডেন্টাল একটা প্রবলেমে কাটিয়েছি বিমর্ষ লম্বা একটা সময়।
তারপরও একদম বছরের শেষদিকে এসে নুতন করে আবার মনে হয়েছে, না জীবনে ইতিবাচকতা ধরে রাখার জন্যে কিছু না কিছু থাকেই। দৃষ্টিভঙ্গি একটু বদলাতে পারলেই ছুঁয়ে থাকা যায় জীবন। থাকে কিছু মানুষ, কোথাও না কোথাও, হয়তো ঠিক সময়ে ঠিক মানুষকে আমরা কেউ কেউ পাশে পাইনা বলেই এমন ভাবি, জীবন প্যারাময়, জীবন মানেই ভালো থাকার একটা চলমান যুদ্ধ। অনেকের মত এমন দর্শনের মাঝে চলতে চলতেই আরো একবার সেই জীবন ভালোবেসেই হয়েছি ‘’বিভোর’’ ২০১৮ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই।
পরবাসী অন্তর নিয়ে আছি এই বিভূঁইয়ে… কিন্তু অনেকের মতোই বুকের মাঝে দেশকে ঘিরে থাকা টানটা আমাকে একটু বেশীই ভোগায়, যখন তখন। দেশ ভালো আছে, দেশে থাকা প্রিয় মানুষেরা ভালো আছে এই শুনবো বলে দক্ষিণা জানালায় চোখ রেখে দূর আকাশ পানে থাকি চেয়ে প্রতিদিন।
গেল বছর কেমন ছিলো পুরো বিশ্ব, কেমন ছিল, বাংলাদেশ। মিডিয়া আজ আমাদের সবটুকু নাগালে। কম আর বেশী সবার জানাই আছে তা।
অস্ট্রেলিয়া আছি, এখানে বছরের শেষদিকে এসে প্রধানমন্ত্রী বদলে গেছে এটা একটা নিউজ, শুধুই নিউজ। পুরো অস্ট্রেলিয়ার জীবন যাত্রা বা আবহে ওভাবে কোন প্রভাব রাখেনা বললেই চলে এই পরিবর্তন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসেছে অবিশ্বাস্য এক পরিবর্তন এবং সেটা এই নুতন বছরে পা দেয়ার ঠিক দুই দিন আগেই। এই নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে বসে আসলে ঠিক কী ভাবছিলাম, কী ই বা আশা করেছিলাম, যা হলো তাঁর থেকে কী, খুব অন্যরকম কিছু।
দেশ ছেড়ে আছি তবে আমি মনে করি বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ নিয়ে পুরোপুরি অজ্ঞ নই। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে ছিলাম পুরোপুরি সক্রিয়। এই অভিজ্ঞতার বাইরে সব সময়ই দেশের যেকোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নিজের ভিতরের অল্প বিস্তর পড়াশোনা আর বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসাটুকু নিয়ে সব সময়ই সরব থেকেছি। কী হচ্ছে জানার চেষ্টা করি বা নেই তথ্য দেশে থাকা কারো না কারো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে। আমার প্রতিক্রিয়া জানাই, সেটা আমার কলম দিয়ে হলেও।
আজ তাই ইতিহাসের অন্যতম এই সময়টুকুতেও কিছু বলতেই চাইবো। আমার সব কথাতে আপনি একমত নাই হতে পারেন, আমি হয়তো আমার আবেগ দিয়ে সবকিছুর বিচার বিশ্লেষণ ঠিক ঠাক না ই করতে পারি কিন্তু অল্প কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে আশা করি যে আপনি সময় করে পড়ছেন, একটু ভাববেন।
নির্বাচন হয়েছে দেশে। নানান ঘটনা অঘটনার পর রাজনীতিতে সক্রিয় দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে মনেই হচ্ছিলো ‘’আজ কিছু হতে চলেছে’’। অন্যরকম কিছু। মানুষ ভোট দেবে এবং এবং… সেটা সত্যিই যারা সুখস্বপ্ন দেখেছেন তাঁদের জন্যে এসেছে দুঃস্বপ্ন হয়ে!!!
আপনাদের মাঝে অনেকেই হয়তো খুব করে আশা করে ছিলেন, গত প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। এমন যারা ভেবেছেন ঠিক কে কি কারণে!!!
১। তাঁদের নেতাদের কারো কারো দুর্নীতি, আবোল তাবোল কথা, কিছু মন্ত্রীর সীমাহীন ব্যার্থতা!
২। ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা হাওয়া, পাচার বা লুট, যাই বলি!
৩। বিরোধী দলকে নানানভাবে কোন ঠাসা করে রাখা! বিশেষ করে মামলা, হামলা!
৪। বিচার বহির্ভূত হত্যা গুম !
৫। ছাত্রলীগের ছায়াতলে এসে নানান অপকর্ম!
(আমি সবচেয়ে বেশী হতাশ এই দলে থাকা কিছু মানুষের উদ্ধত্য এবং অন্য সব দলের নেতা সমর্থকদের ঘিরে কী ভীষণ তাচ্ছিল্য তারা দিনের পর দিন প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে তা দেখে। সেই ৭১ পূর্ব সময় বিশেষ করে ৫২, ৬৯, এবং পরবর্তিতে ৭১, ৯০ এ ছাত্ররাই ভুমিকা রেখেছে সবচেয়ে সাহসী এবং উজ্জ্বল। কিন্তু আজকের ছাত্রলীগের ভুমিকা মাঝে মাঝেই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কি ভীষণ দলছুট এই তারুণ্য। বেয়াদবীটা শিখেই করতে হয়, ওটা সবাইকে মানায়না, কে বুঝাবে!)
তবে যা বললাম, মোটা দাগে আওয়ামী বিরোধী এবং সমালোচকদের এই তো অভিযোগ।
বাংলাদেশের নানান প্রেক্ষাপট জন্ম দেয়া এবং স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যতম অংশীদার হিসেবে এই দলের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ সত্বেও তাঁদের আছে রাজনৈতিক নানান কৌসুলি অভিজ্ঞতা। এটাকে বিবেচনা করলে এই দীর্ঘ সময়ের এমন সব অভিযোগের পরও বাংলাদেশকে ভিতরে বাহিরে পাল্টে দেয়ার কাজগুলোতে যতটুকু ভূমিকা রেখেছে, তাকে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ যে আজ নেই তা এই মুহূর্তে বড্ড তেতো মন নিয়ে হলেও বলতে হচ্ছে।
লম্বা এই সময়টুকুতে দেশকে এককভাবে চালাতে গিয়ে এক সময়ের বিরোধী দলে থাকা বিশেষ করে বিএনপিকে একেবারেই কোনঠাসা করে ফেলেছে শাসক এই দল। কোন রকম আন্দোলনকেই তাঁরা আর দানা বাঁধাতে পারেনি।
না বিষয়টা এমন না যে, বিএনপির উপর ক্ষেত্র বিশেষে এমন আচরণের জন্যে আমরা ক্ষুব্ধ হইনি, আমাদের প্রতিবাদ বা নিন্দা জানাইনি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামীলীগের নানান রাজনৈতিক কৌশলের কাছে তাঁদেরকে রীতিমত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে।
তবে এটা বলতেও দ্বিধা নেই, সরকারের দুর্নীতি নিয়ে তাঁদের কথা বলা, তারেক রহমানের মত একজনকে নেতা মানা দলের মুখে বড্ড বেমানান। কার্যত অনেকটাই নেতাশুন্য বিএনপি। দেশপ্রেমী, প্রখর ব্যাক্তিত্ব এবং একই সাথে চৌকষ এমন কেউ নাই বললেই চলে। তার উপর রাজনৈতিক কারণে বললেও জামাতের সাথে তাদের জোট নিয়ে যে কর্মকান্ড তাতে করে নানান ভাবেই প্রমাণিত যে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির জন্ম পরিচয় যাই হোক একটা সময়ে এসে জনগণের কাছে এসেও শেষমেষ জামায়াতের মত একটি বাংলাদেশ বিরোধী এবং ধর্ম আশ্রয়ী দলের কাছে তাঁদের রাজনৈতিক আদর্শ পুরোপুরিই কুপোকাত। জামায়াত আজ জাতীয় রাজনীতিতে নিষিদ্ধ কিন্তু তাদের সব রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং অপরাজনীতি চর্চার ভূত যেন চেপে আছে বিএনপি নামক দলটির নেতা এবং কর্মীদের। কেন বলছি এমন?
১। আপনি এমন বিএনপি নেতা বা কর্মী পাবেননা বললেই চলে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভুমিকা বা তাঁকে যথাযথ সম্মান পোষণ করে কথা বলেন বা হৃদয়ে ধারণ করেন!
২। আওয়ামী বাকশাল কেন হয়েছিল, কি হয়েছিল, অনেক নেতা কর্মীর স্বচ্ছ ধারণা না থাকলেও ঘেন্নাটা ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন এবং এটা আপনারা এগিয়েই নিয়ে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সাথে। ৭৫ এর হাতিয়ারের স্বপ্ন আজও কেন দেখেন, কিভাবে দেখেন লাখ কোটি কর্মী কথায় কথায়, কে জানে!
৩। বিএনপি নেতা বা কর্মীদের মনের মাঝে আলাদা করে বাংলাদেশ থাকলেও, বাংলাদেশের জন্মের সাথে নিবিড় করে জড়িয়ে থাকা যে ইতিহাস, যে অহংকার গৌরব আমাদের আবেগ, সেটাকেই তাঁরা করেনা ধারণ, খুব দুঃখজনক ভাবে, শুধু আওয়ামী বিরোধিতা করতে গিয়ে!
৪। ৭১ এ পাকিস্থানের সাথে আমাদের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাদের কিছু সূর্য সন্তান বুকের রক্ত অকাতরে ঢেলে দিয়ে আমাদেরকে দিয়ে গেছে লাল সবুজ পতাকা, আমাদের স্বাধীন মানচিত্র। এই আবেগটুকু অনেক দামী এবং এই অহংকারটুকু নিয়েই যে আজ রাজনীতি করতে হবে, করা উচিত এই সত্য থেকে তাঁরা আজও দূরে।
৫। শুধু বিরোধিতার জন্যেই বিরোধিতা না করে দলটির উচিত তাঁদের লাখ কোটি সমর্থকদের মাঝে ইতিবাচকতা এবং যে ভুল কুৎসিত বিশ্বাসগুলো তাঁরা আগলে নিয়ে বসে আছে তা পরিবর্তন করা। এটাই আজ সময়ের দাবী, খুব বেশী। তবেই আমি নিশ্চিত আপনাদের ঘিরে অনেকের মাঝেই কাঁটার মত বিঁধে থাকা অস্বস্থিটা কাটিয়ে উঠে আপনাদেরকেও একটা রাজনৈতিক দলের মর্যাদা দেবে অতীত ভুলে!
বিএনপি রাজনীতি করেন এমন খুব কাছের অল্প কিছু বন্ধুকে আমি চিনি, তাঁদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং পড়াশোনা থাকলেও, যখনই এইসব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি, খুব অসহায় বোধ করি। না দেশকে ঘিরে মূল অহংকারের জায়গাটেই তাঁরা নেই। এই প্রবাসে দেখেছি অনেক অনেক তরুণ তরুণী, শুধু আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করতে যেয়ে নিজেদের কী ভীষণ ছোট করে প্রকাশ করে।
নির্বাচন প্রশঙ্গেই ফিরে আসি। অনিয়ম হয়েছে। ভোট শুধু আওয়ামী লীগ সমর্থক মানুষেরাই দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক জাল ভোট হয়েছে এ যেমন নির্লজ্জ সত্য তার চেয়েও সত্যি বিএনপি নামক দলটির নির্বাচনে এলেও শেষ দিন পর্যন্ত তাঁদের কোথাও সেভাবে কোন সরব এবং বিপ্লবী ভূমিকা ছিলোনা। এই যে থাকা না থাকা সেটাই একটা হতাশা হয়ে নেতা কর্মীদের মাঝে ছিলো প্রকট হয়ে।
সরকার দলে থাকা আওয়ামী লীগের জন্যে ছিল, টিকে থাকার শেষ লড়াই। নানান অভিযোগের বাইরেও তাঁদের মূল শ্লোগান এক সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং এখন উন্নয়নের মহা সড়কে দেশ এই নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে আপাত সাড়া তাঁরা যে ফেলেছে এটা আপনাকে বিশ্বাস করতেই হবে।
ইলেকশনকে তাঁরা যে প্রভাবিত করবে সেটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিলোনা। কিন্তু পাশাপাশি দেখেছি কী ভীষণ সিরিয়াস তাঁরা ছিল প্রচারে। দেশের শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য অঙ্গনের চেনা উজ্জ্বল মুখ সাড়ি বেঁধে ছিল তাঁদেরই পাশে। প্রচারণায় তাঁরা ছিলেন সবটুকু সরব। এমনিতেই ভোটে এই প্রভাব থাকতোই, কিন্তু এতোটা কী আওয়ামী লীগ নিজেই চেয়েছে?
শেখ হাসিনাকে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। আমিও তাঁর গুনমুগ্ধ নই। কিন্ত এটা আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, রাজনীতিতে তিনি একটা ব্র্যান্ডিং। গ্লোবালি তাঁর একটা স্বীকৃতি আছে। কিছু অপকৌশল দেশের রাজনীতিতে তিনি নিয়ে এসেছেন, সেটাও শুধু টিকে থাকার জন্যেই।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি শুধু সাহস দেখাননি, দেখিয়েছেন দুঃসাহস। ইতিহাসে তাঁর নাম কালো কালিতে লেখা হবে, না স্বর্ণাক্ষরে তা সময়ই বলে দেবে। চ্যালেঞ্জ আজ আকাশ চুম্বী, এমন হতেই পারে অতীতের ভুলগুলো শুধরে দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে যে অভিযোগ তা নিয়ে তিনি সত্যিই অনেক বেশী সিরিয়াস হয়ে হয়তো বাংলাদেশকে আরো বেশী মর্যাদার স্থানে বসিয়ে নিজেকেও করবেন কলংকমুক্ত! এমন একটা সময়ের জন্ম দিয়েছেন যার প্রাপ্য তাঁকে হয়তো পেতেই হবে। কিন্তু কী পেতে যাচ্ছেন বা কবে এই মুহূর্তে আমাদের জানা নেই। তবে সবকিছুর শেষ আছে এই আমার বিশ্বাস।
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, শুধু এই কথা বলে দুই একটা ব্যাঙ্গাত্নক ভিডিও পোস্ট বা ক্ষোভ দেখিয়ে আর যাই হোক এই সময়ের আওয়ামীলীগকে মোকাবেলা করতে পারবেননা। দিনের মত যা সত্য সেটা মেনে নিয়ে, মনে নিয়ে এখন দেয়াল যত শক্ত তা ভাঙ্গার জন্যে তেমন শক্তিশালী হাতুড়ীই লাগবে সেটা ভাঙ্গতে এই সত্য অনুধাবণে মনোযোগী হওয়াটাই সময়ের দাবী। হাতুড়ী হোক আপনার রাজনৈতিক সততা, নিষ্ঠা এবং লেগে থাকা।
আমি বিশ্বাস করতে চাই, বাংলাদেশে আজও সবচেয়ে সৎ এবং স্কলার কিছু মানুষ বাম ধারার রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। আছে ছাত্র রাজনীতি করে আসা ঝকঝকে চিন্তার কিছু তারুণ্য শক্তি। তাঁরা আছে বলেই আজও আপনি আমি বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া যেকোন সাদা কালো বা রঙিন বিষয়গুলোর ঠিক ঠিক রঙটাই দেখতে পাই আমরা সেই কাজটি নীরবে করে আসছে এবং করবে, যতোই গালি দিন, বামাতি বলে!
রাজনীতি আজ যে জায়গায় শুধু আদর্শিক জায়গাটা ঠিক ঠাক থাকলেই বাম নেতাদের গণ মানুষ বেঁছে নেবেনা, নিচ্ছেনা। কৌশল এবং বাস্তব কার্যক্রম নিয়ে আরো কিছু ভাবনা এবং কর্মপন্থার অবকাশ বোধ হয় থাকছেই তাই। যেতে হবে বহু দূর… পেশী শক্তির মোকাবেলা যদি শুধু বুদ্ধি দিয়েই করতে হয় তবে বুদ্ধির জোড় আরো বাড়াতে হবে।
একটু বেশীই কথা বললাম আজ, আরো আছে বলার, বেঁচে থাকলে বলতেই থাকবো এই আমার কাজ। যে আপনি বাংলাদেশী আজ আমাকে পড়লেন তাঁর সাথেই আমি বাঁধলাম আমার প্রাণ। আর এই বন্ধনের নাম হোক ‘বাংলাদেশ’।
এখনও সময় আছে, আসুন, আপনি আমি যে যেখানে আছি, আমরাই ধারণ করি পুরো বাংলাদেশকে। আমরাই হয়ে উঠি এক একটা বাংলাদেশ, আমাদের কর্মে, আমাদের প্রকাশে, আমাদের প্রতিবাদে, আমাদের প্রজ্ঞায়, আমাদের অহংকারে। জামাতের মত কোন ঘৃণ্য রাজনোতিক দলের হাতিয়ার হয়ে না, নিজের মগজের উপর বিশ্বাস রেখে বিবেকের কাছে পরিষ্কার থেকে। এই সময়ের মুখোমুখি হয়ে আজ এই চাওয়াটা আপনার কাছে নুতন করে ফিরে এসেছে।
থাকুক বিশ্বাস বুকের গভীরে, বাংলাদেশ, আমাদের প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা। যে রাজনৈতিক মতাদর্শের হউন আপনি, জামায়াত ই ইসলাম ছাড়া চোখের সামনে আরো একবার মেলে ধরুন ঐ লাল সবুজ পতাকাখানি। বুকে রাখুন হাত। বিশ্বাস করুন, কিছু বিষয় আপনি আমি না পারলেও সময় ঠিক দেবে তার উত্তর, তবে এটাও খুব বেশী সত্য শুধু ঘৃণা বুকে নিয়ে আর যাই হোক দেশ গড়ার কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দুরূহ।
নাদিরা সুলতানা নদী
কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক কর্মী, প্রাক্তন ছাত্রনেতা
উপস্থাপক, রেডিও বাংলা মেলবোর্ন
সহযোগী সম্পাদক, প্রশান্তিকা