নির্বাচনে জিতলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে : ক্যাম্বেলটাউন কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল সরকার

  
    

আসছে ৪ ডিসেম্বরে সিডনির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিল নির্বাচন। নির্বাচনে কমিউনিটি ফার্স্ট টীম দলের পক্ষ থেকে কাউন্সিল পদে দাঁড়িয়েছেন বাঙালির পরিচিত মুখ আবুল সরকার। এলাকায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিডি হাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী ভোটার অধ্যুসিত কাউন্সিলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন এবার সকলের ভালোবাসায় তিনি জয়ী হবেন। প্রশান্তিকা সম্পাদক আতিকুর রহমান শুভ’র সঙ্গে নির্বাচনে প্রস্তুতি, উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন আবুল সরকার।

কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল সরকার

প্রশান্তিকা: প্রথমেই একটি সরাসরি প্রশ্ন- মানুষ আপনাকে ভোট দেবেন কেন?

আবুল সরকার : ধন্যবাদ আতিকুর রহমান সরাসরি মূল প্রশ্নটি করার জন্য। উত্তরটি বিভিন্ন ভাবেই দেয়া যায়। তবে সহজ ভাবে বলতে গেলে, কেউ যখন কোন কিছু কেনার পরিকল্পনা করেন তখন যেই সব জিনিস বিবেচনায় নিয়ে আসেন, ভোটের বেলাতেও তাই ঘটে। যেমন ধরুন আপনি একটি গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছেন, আপনার নিশ্চয়ই একটি চাহিদা আছে, পছন্দ আছে এবং সেটা সামর্থ্যের আওতায়। আপনি তখন সেই গাড়ির ফিচারগুলোর সাথে অন্য সব গাড়ির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবেন। এভাবে এক পর্যায়ে আপনার পছন্দের গাড়ি নির্ধারণ করা সহজ হবে। এই তুলনামূলক বিশ্লেষণ সবকিছুর বেলাতেই ঘটে। ভোটের প্রার্থী বাছাই করা এর থেকে ব্যাতিক্রম নয়। আমি ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলে স্ব-পরিবারে বসবাস করছি গত ২০ বছর যাবত। এই দুই দশকে কমিউনিটির সকল সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সুচিন্তিত মতামত এবং সহযোগিতা প্রদান করেছি যা কিনা আমি আমার জীবন বৃত্তান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের কমিউনিটির প্রত্যেকটি ভোটার খুবই সচেতন। তুলনামূলক বিশ্লেষণে আমার কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে তাঁরা আমাকেই ভোট দিবেন, ইনশাল্লাহ।

প্রশান্তিকা : প্রবাসী বাঙ্গালীদের অনেক উন্নয়ন চোখে পড়ে। আপনিও কমিউনিটিতে একটির পর একটি সাফল্য অর্জন করে চলেছেন। সেই সাফল্যের শেষ ধাপটাই কি নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাউন্সিল হওয়া ? এই বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা জানতে চাই।

আ স : বাংলাদেশীরা খুবই ইনটেলিজেন্ট এবং কর্মঠ জাতি। তাঁরা পৃথিবীর যেখানেই থাকেন না কেন, উন্নয়নের স্বাক্ষর তাঁরা ঠিকই রেখে চলেছেন। অস্ট্রেলিয়াতেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। এখানেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত সফলতা অর্জন করেছেন এই বাঙ্গালীরাই। তার মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা, কমিউনিটি সার্ভিস, চিকিৎসা, কৃষি এবং ব্যবসা অন্যতম। আমরা এগুলোকে নিয়েই সমষ্টিগত ভাবে কাজ করছি যদিও আমার ব্যাক্তিগত তহবিলে এই ধাঁচের কোন সফলতা নেই। তবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমার পদচারনা দীর্ঘদিনের। অস্ট্রেলিয়াতে আমি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত গত ২৫ বছর ধরে। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েও আমি সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। কখনই নির্বাচন ভাবনা মাথায় ছিল না। এত দীর্ঘ সামাজিক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সময় দিয়ে আমি মাত্র একবার কমিউনিটির অনুরোধে নির্বাচন করেছিলাম ২০১২ সালে। এবারের নির্বাচনও ঠিক একই ধারাবাহিকতায়।

কমিউনিটি ফার্স্ট টীমের ঘোষণায় আবুল সরকারের পরিচিতি।

প্রশান্তিকা : সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গিয়েছিলেন। আমি আপনার কাছে শুনেছিলাম সেটা সত্যি দুঃখজনক ছিল, এবারের নির্বাচনে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

আ স : প্রতিযোগিতা মানেই জয়, এই কথাটি আমি বিশ্বাস করিনা। ২০১২ সালে আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন প্রার্থী ছিলাম। সেই সময় আমাদের কমিউনিটির ভোট ছিল সাড়ে তিন হাজার। আমরা সর্বমোট ৩৩৩৩ ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু সঠিক ভাবে ভোট না দেয়ার কারনে আমাদের ১২% ভোট বাতিল হয়ে যায়। ফলে জয়ের জন্য আমাদের ১৫১ ভোটের প্রয়োজন ছিল। এই ফলাফলকে আমি হেরে যাওয়া বলব না। আমি বলবো এটি ছিল এই অঞ্চলের রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের প্রবেশের মাইলফলক, যার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে লেবার পার্টি একজন বাংলাদেশীকে মনোনয়ন দেয়। বর্তমানে এই কাউন্সিলে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশী ভোটার আছেন। আছে একাধিক কমিউনিটির ভোটারদের সমন্বয়। আমার বিশ্বাস এই নির্বাচনে এই অঞ্চলের ভোটারগণ দলীয় পছন্দের চাইতে ব্যাক্তি পছন্দকে প্রাধান্য দিবেন। যদিও এই অঞ্চলের একজন প্রার্থী দলীয় ভাবে ভোট দেবার কথা বলছেন কিন্তু আমাদের ভোটাররা অনেক সচেতন। আর তাই আমার বিশ্বাস বাংলাদেশীরা ২০১২ সালের মত এবারও যোগ্য প্রার্থী চিনতে ভুল করবেন না।

প্রশান্তিকা : আপনি যে দল থেকে নির্বাচন করছেন সেই দল সম্পর্কে জানতে চাই।

আ স : আমি যে দল থেকে নির্বাচন করছি তার নাম “কমিউনিটি ফার্স্ট টীম”। এটি একটি ইন্ডিপেনডেন্ট দল। দলের প্রেসিডেন্ট পল লেক যিনি ২০০৪ সাল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর। বিভিন্ন সময় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন, যার সাথে আমার পরিচয় ২০১২ সাল থেকে। এই দলের ভোট প্রায় ৯ শতাংশ। পল এবার অবসরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন স্বচ্ছ চরিত্রের মানুষ পল আমাকে যখন নির্বাচন করার অনুরোধ করলেন তখন আমাদের কমিউনিটির সবার সাথে পরামর্শ করে আমি এই দল থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিই।

প্রশান্তিকা : দীর্ঘ প্রবাস জীবনে দেখেছি এখানকার প্রবাসী বাঙ্গালিরা অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করেছেন, আপনার দৃষ্টিতে সেই ক্ষেত্রগুলোর কথা জানতে চাই।

আ স : আমাদের সফলতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এ্যামিরেটস প্রফেসর ড: রফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক জনাব কামরুল চৌধুরী OAM, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সির প্রফেসর ড: আনিছ চৌধুরী, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরী, স্বনামধন্য কৃষি গবেষক, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গম ব্রিডার ড: নিজাম আহন্মেদ, তরুন উদ্দোক্তা টেলিঅজের সিইও প্রকৌশলী জাহাংগীর আলম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর আতিকুল ইসলাম এবং তাঁর মেয়ে ড: নাবিলা ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড: অমিত চাকমা অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আরও অনেকের মতই তাঁরা আমাদের অহঙ্কার।

প্রশান্তিকা : আপনি নির্বাচনে জয়লাভ করলে এলাকার উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি?

আ স : সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার একটি পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনাগুলো নির্বাচনে হারা জেতার উপর নির্ভরশীল নয়। তবে নির্বাচনে জিতলে এই সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে। তার মধ্যে একটি পরিপূর্ণ কমিউনিটি হাব, মুসলমানদের অংশিদারিত্বে একটি কবরস্থান, একটি ফিউনারাল পার্লার স্থাপনে সহযোগিতা প্রদান। এ ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় শহীদ মিনার এবং স্মৃতিসৌধের আদলে একটি স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা। সমসাময়িক কমিউনিটির চাহিদা সংক্রান্ত সকল বিষয়ে আমার সুচিন্তিত মতামত ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে আমার সার্বিক কর্মপন্থা।

প্রশান্তিকা : আমাদের জানামতে এই কাউন্সিলে আপনাকে আর দুই প্রবাসী বাংলাদেশীর সাথে লড়তে হচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?

আ স : এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবার আগে স্থান পাওয়া উচিত। ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিল একটি অবিভক্ত সিটি কাউন্সিল। এখানে ১৫ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। প্যানেল ভিত্তিক এই নির্বাচনে যেই ১৫ জন সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তারাই নির্বাচিত হবেন। এখানে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। এই নির্বাচনে লাইনের উপরে দলকে টিক দিয়ে ভোটাররা যেমন তাদের গনতান্ত্রিক দায়িত্ব শেষ করতে পারবেন তেমনি লাইনের নীচে তাঁদের পছন্দের ন্যূনতম ৮ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এখানে ক্রমিক নাম্বার নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

প্রশান্তিকা : আপনার জন্ম, শিক্ষা এবং কর্মস্থল বিষয়ে জানতে চাই।

আ স : আমার জন্ম বাংলাদেশে, গ্রামের স্কুল থেকে শিক্ষা জীবন শুরু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার অফ সাইন্স এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করি। ১৯৯৬ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করি। পরবর্তীতে উলংগং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে একজন শিক্ষক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করি। বর্তমানে আমি কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিক সারভেন্ট হিসেবে কর্মরত আছি। আমার স্ত্রীও একজন চাকুরে। দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়েরা পড়াশুনা শেষ করে চাকরি জীবন শুরু করেছে। ছেলে নবম শ্রেণীতে পড়াশুনার পাশাপাশি দক্ষ ক্রিকেটার। সংক্ষেপে এটাই আমার পারিবারিক পরিচয়।

প্রশান্তিকা : প্রশান্তিকাকে সময় দেবার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনার সর্বাঙ্গীন সাফল্যের জন্য শুভ কামনা রইল । 

আ স : আমার পক্ষ থেকেও প্রশান্তিকাকে অনেক ধন্যবাদ।

বিজ্ঞাপন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments