এখনও বিষাদমাখা রাত্তিরের ঘোর অন্ধকার কাটেনি এতটুকু,
অগণন নক্ষত্রবীথির মৌনমেলা ভেঙে পৃথিবীর আলো ফোটেনি কোথাও;
এখনও অনেকটা পথ বাকি। অনন্ত মহাকাল ছুঁয়ে পরিযায়ী ইচ্ছেগুলোর
অপমৃত্যু ঘটছে অহর্নিশি, খুব গোপনে বুকের ভেতরে আবাস গেড়েছে
পাহাড়ি শঙ্খচূড়- অথচ কি নিশ্চিন্ত বসবাস তার!
প্রোথিত গ্রন্থিতে নীলাভ ব্যথা লুকিয়ে দায় মেটাতে চায়-পরিত্যক্ত জীবনের।
বসন্ত দিনগুলোর নির্বাসন হয়েছে সেই কবে! তবু তারেই খোঁজে-
পোড়ামাটির গন্ধমাখা অস্ফুট বৃষ্টির ঘ্রাণে, শরতের শেষ বিকেলে।
অকস্মাৎ চমকটা কাটতেই চোখে পড়ে- কেউ কাছে নেই;
তখন নিঃসঙ্গ গাঙচিল একাকী ফিরে চলে- নীড়ে।
বহমান নদীর গর্ভে বিবর্ণ পাথরে প্রাচীন শিলালিপি খুঁজতে গিয়ে
শুনতে পায় নিবিড় নৈশব্দের বুক চিরে হাওয়ায় ভেসে আসা কান্নার গান,
কে যেন পেছন থেকে বলে- পথের শেষে দাঁড়িয়ে কী খোঁজ তুমি?
ওখানে প্রাগৈতিহাসিক মানুষের পায়ের আওয়াজ শোনা যায়;
ঠিক তখনই চলমান ঘড়ির কাঁটাটা আর্তনাদ করে ওঠে-
সময় শেষের ঘণ্টা বাজিয়ে যায়।
সেদিন অবনমিত সত্তা আবিষ্কার করেছিল গুঢ় সত্যটা-
সনির্মিত গণ্ডির ভেতরে নিজেকে আড়াল করে কোন লাভ নেই,
কবে কোন মৌন প্রহরে অলক্ষ্যে ভেসেছিল বেহিসেবী জীবন,
শ্রাবনে প্লাবনে একাকার করে দিয়ে যখন হারিয়েছিলো
ভালবাসাহীন বিজন পথের বাঁকে! সেই বিস্রস্ত সত্তা জেনে গেছে-
অভিশপ্ত বলয়ের সীমানা পেরিয়ে নির্মম মুহূর্তগুলো
প্রতিশোধের নেশায় মাদল নৃত্যে মেতেছে।
বিসর্জনের সমস্ত আয়োজন যখন শেষ- তাকে আটকায় সাধ্য কার!
বুকের মধ্যে একটা পাথুরে নদী বয়ে যায়- অবিরাম,
পাহাড়-জঙ্গল ছাড়িয়ে আরও দূরে- পিপাসিত সমুদ্রের কাছে,
শুধু কারো কারো বুকে জমে থাকে হাহাকার- বাজে সকরুণ সুর,
তখন মঞ্চস্থ হয় শোকতপ্ত নাটকের শেষ পরিচ্ছেদ।
চূর্ণ আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব খুঁজতে গিয়ে ফিরে তাকায়
ইতিহাসের পোড়া পাতায়- যেখানে অন্ধকারের দেয়ালে
আঁকা আছে তার প্রতিটি পদক্ষেপ, হাসি-কান্নার ইতিবৃত্ত।
বিয়োগান্তক নাটকের সমস্ত দৃশ্যের পরিসমাপ্তি হলে
কে মনে রাখে নির্বাক অক্ষিযুগলের নোনাজলের ইতিহাস?
পাখি উড়ে গেলে কেবল পড়ে থাকে শূন্য খেলাঘর ।