সেমন্তী মঞ্জরী এই প্রজন্মের রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতিভাময়ী শিল্পী। বাবা ও মা গান করেন, বড় মামী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। সুতরাং গানের সঙ্গেই সেমন্তীর বেড়ে ওঠা। মাত্র ১০ বছর বয়সে ছায়ানটে ভর্তি। শুধু রবীন্দ্রনাথের গানই নয়, কাজী নজরুল ইসলাম, অতুল প্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, শচীন দেব বর্মণ বা আধুনিক বাংলা গান চর্চা করছেন। তার সুরেলা কন্ঠে ধ্রুপদী বা শুদ্ধ সঙ্গীতের মাধুর্য যেই শুনেছেন সেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন। প্রশান্তিকার সাথে একটি ছোট্ট সাক্ষাৎকারে আসুন জেনে নিই প্রতিভাময়ী এই শিল্পী সম্পর্কে।

প্রশ্ন: আপনার গানের হাতেখড়ি কিভাবে?
সেমন্তী: আমার বাবা ও মা দু’জনেই গান করতেন। আমার গানের হাতেখড়ি হয় আমার বাবার কাছেই। আমার গানের অনুপ্রেরণা আমার বড় মামী। তিনি বাংলাদেশের কিংবদন্তী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক।এই কারণে ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক সূত্রে আমি গানের সঙ্গে আছি। বাবা ও মা গান করতেন আর আমার কান তৈরি হয়েছে ভালো ভালো গান ও সুর শুনে। তারপর আমার কন্ঠেও গান এসেছে। আর সেজন্যই হয়তো ১০ বছর বয়সেই আমাকে ছায়ানটে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। ছায়ানটে পেয়েছি অসংখ্য গুণীজনদের সান্নিধ্য। সেখানেই আমি আরও আগ্ৰহী হয়েছি আবহমান বাংলা গান চর্চার প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য। সেখান থেকেই আমার চর্চা, চেষ্টা ও গান করে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পাই।
প্রশ্ন: গান শেখার পাশাপাশি আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথাও জানতে চাই।
সেমন্তী: বাংলাদেশে ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে আমি অর্থনীতি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করেছি। পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টারে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। সেখানে আমার বিষয় ছিলো কালচারাল এন্ড ক্রিটিক্যাল স্টাডিজ। এখন কাজ করছি ‘ওয়াটার এইড বাংলাদেশ’-এ।
প্রশ্ন: আমরা জানি আপনি ছায়ানটের একজন শিক্ষক এবং গানও শেখাচ্ছেন। সে সম্পর্কে জানতে চাই।
সেমন্তী: আমি ছায়ানটে ৯ বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছি। তারপর ২০১২ থেকে আমি সেখানেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলাম এবং এখন অব্দি সেখানেই শিক্ষকতা করছি। গান শেখানোর পাশাপাশি আমাদের চেয়ে যারা তুলনামূলক ভাবে নবীন, তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি শুদ্ধ ধারার সঙ্গীতের প্রতি।
প্রশ্ন: রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাইরে আর কি ধরনের গান গাইতে পছন্দ করেন আপনি?
সেমন্তী: আমার বরাবরই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের প্রতি আগ্ৰহ ছিল বলে এদিকেই মনোযোগ বেশি দিয়েছি। তবে কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, ডি.এল.রায়, রজনীকান্ত সেন, শচীন দেব বর্মণ এবং আধুনিক বাংলা গানের প্রতিও আমার আগ্ৰহ আছে। যদিও আমি মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত করি, তবে তিন কবি এবং শচীন কর্তার গান আরও মনোযোগ দিয়ে করতে চাই ভবিষ্যতে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সুস্থ ধারার সঙ্গীত বা আবহমান বাংলা গানের ভবিষ্যত কেমন?
সেমন্তী: আমি যেহেতু শিক্ষকতা করছি, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আবহমান বাংলা গানের ধারা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। এই ধারায় আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শিক্ষার্থী ও শিল্পী যুক্ত হচ্ছেন যারা সুন্দর ভাবে চর্চা করছেন ও নিজেদেরকে দর্শক শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরছেন। শুদ্ধসঙ্গীত ও পঞ্চগীতিকবিদের গান আরও মানুষকে আকৃষ্ট করছে এটা একটা ভালো বিষয়। তবে এই ধারার গানকে professionalization করা নিয়ে তেমন কোন কাজ হচ্ছে না, যা ইতিমধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এই ব্যাপারটিতে আমাদের মনোযোগ দেয়া উচিৎ।
প্রশ্ন: আপনার কন্ঠ শৈলীর মাধুর্য ছড়িয়ে পরুক দেশ থেকে দেশান্তরে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই বাঙালি রয়েছে সেখানেই পৌঁছুক আপনার সুরের ধারা, গীতিকবিদের বাণী। প্রশান্তিকাকে সময় দেবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সেমন্তী: আপনাকে এবং প্রশান্তিকার পুরো টীমকেও ধন্যবাদ। প্রবাসে আপনারা ব্যস্ততার মাঝেও যে বাংলা চর্চা করছেন সেজন্য সাধুবাদ জানাই। আবারও ধন্যবাদ।