
আব্বা, মা, নআব্বা, বড়ভাই, মেজভাই সবার প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ। নিজ নিজ রুচি ও পছন্দ মাফিক বই পড়েন তারা। মার বালিশের পাশে বেশিরভাগই থাকতো দস্যু বনহুর, কুয়াশা, মোহন সিরিজ। ফাল্গুনী, আশুতোষ, নিমাই আরো কতজনের বই। স্কুলে থাকতেই আমার এনাদেরকে পড়া শেষ। “মেমসাহেব” ঠিক কবে পড়লাম সেটি সঠিক মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে সে বইয়ের অদ্ভুত এক মোহন মুগ্ধতায় আমি একেবারে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম।
পরে, এই ৫/৬ বছর আগে আরেকবার পড়লাম… …আসলে পাঠকেরও মৃত্যু হয়।
নিমাই ভট্টাচার্য যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শালিখা থানার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিন বছর বয়সে তিনি মাতৃহীন হন। তাঁর পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর তিনি কলকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
নিমাই ভট্টাচার্য বাংলাদেশের বগুড়া জেলার কালীতলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর কন্যা দীপ্তি ভট্টাচার্যকে বিবাহ করেন।
সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর দিল্লিতে ভারতীয় পত্রিকার রাজনৈতিক-কূটনৈতিক সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ভারতের অনেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদেশ সফর করে নিউজ কাভার করেছেন। ১৯৬৩ সালে তার লেখা একটি উপন্যাস কলকাতার সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় এবং তা ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। এরপর তার চারটি উপন্যাস একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

‘মেমসাহেব’ ছাড়াও ‘রিপোর্টার’, ‘ডিপ্লোম্যাট’, ‘বংশধর’, ‘পিকাডেলি সার্কাস’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘কয়েদী’সহ অসংখ্য বই লিখেছেন নিমাই ভট্টাচার্য। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দেড়শ’র অধিক।
এপার এবং ওপার বাংলা মিলিয়ে তার সবচেয়ে বেশি পঠিত ও জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেমসাহেব’ ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি প্রকাশের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে।
তাঁর ৩৫ বছর বয়সে লেখা এ বইটি জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে বিক্রিত একটি বই যেটি এখন পর্যন্ত সমানভাবে জনপ্রিয়।
বাংলা ভাষার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য চলে গেলেন অনন্তলোকে। বৃহস্পতিবার সকালে টালিগঞ্জের বাড়িতেই মারা যান বর্ষীয়ান এই সাহিত্যিক। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। বেশ কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভূগছিলেন নিমাই ভট্টাচার্য। নিমাই ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৩১ সালে।
কাজী লাবণ্য
কবি ও কথাসাহিত্যিক
বাংলাদেশ।