সাম্প্রতিক সব খবর দেখে মনে হচ্ছে পরীমণির কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল, যেমন রাত দশটার পরে বাসা থেকে বের হবে না, মদ না খেয়ে ফানটা জুস খাবে, হাতা কাঁটা জামা পরবে না, বিয়ে করে এক স্বামীর ঘর করবে … ইত্যাদি ইত্যাদি। পরীমণি সেইসব প্রত্যাশার মুখে ছাই ঢেলে দিয়েছে, কিন্তু তাই বলে মানুষ পরীমণির এহেন আচরণে হতাশ হচ্ছে ? না মজা নিচ্ছে সেটাই বোঝা যাচ্ছেনা। তাছাড়া ও যাদের সাথে রাত ১০টার পরে বাইরে গেলো, যাদের সাথে মদ্যপান করলো তারা কেন কোনো আলোচনার বিষয়বস্তু নয় সেটাও বোধগম্য হচ্ছে না। ওদের সম্মন্ধে জানবার কারো কোন আগ্রহ নেই ? কেন?
আমার আবার ওদের নিয়েই বেশী আগ্রহ, সেইসাথে-
এই পরীমণির গ্রেফতার দেখার মহা উৎসবে সেদিন যত লোক ওর বাসার সামনে গিয়ে গায়ে গায়ে মাখামাখি করে রেকর্ড করবার চেষ্টা করছিল আমি তাদের কোভিড স্ট্যাটাস জানতে চাই।
সমাজের যেই তথাকথিত ভদ্রলোকেরা সেদিন ওর বাসায় মদ্যপান করছিল ওরা কি সজ্ঞানে পরীমণির বাসায় যায়নি? নাকি ভুল করে গিয়েছিল?
কিংবা পরীমণিকে যারা বোটক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল তারাও কি ভুল করে ওখানে গিয়েছিল? নাকি পরীমণি তাদের ফাঁদে ফেলে নিয়ে গিয়েছিল? এখন ওরা কোথায় আছে সেটা জানতে চাই।
এমন কি গতকাল পরীমণির নানা, পরীমণির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল বলে যতগুলো সাংবাদিক অত্যন্ত সিনসিয়ারিটির সাথে সেই বৃদ্ধ মানুষটার ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন তাদের কোভিড স্ট্যাটাস জানতে চাইছি।
এইসব মানুষগুলো আরো কতো হাজার মানুষের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে সেটাও জানতে চাই।

ব্যাক্তিগত ভাবে পরীমণির জীবনযাত্রা আমাকে কোনভাবেই উদ্বেলিত করে না। সে কি করে, কিভাবে চলাফেরা করে, কি কাপড় পরে, কি খায়, কোথায় যায়, কার সাথে বন্ধুত্ব করে এসবের কোনকিছুতেই আমার কোনরকম উৎসাহ বা কৌতুহল নেই। আমি বাংলাদেশ এবং পুরো পৃথিবীর মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়া কোভিড নিয়ে চিন্তিত। কিভাবে মানুষ আবার নিরাপদে নিশ্চিন্তে হেসে খেলে বাঁচতে পারবে সেই দিনের অপেক্ষায় দিন কাটাই। আমার কৌতুহল বা উদ্বেগের সাথে সাংবাদিকদের কৌতুহল বা উদ্বেগের কোন মিলই নেই দেখছি, তাহলে কি কোভিড এই মানুষগুলোকে বিন্দুমাত্র নাড়া দেয়নি ? এরা কি কাছের কাউকেই হারায়নি ? কারো চাকরী যায়নি? কেউ সর্বশান্ত হয়নি?
কিভাবে সম্ভব? এরা তো বাংলাদেশেই থাকে, কিভাবে এক মানুষের নিঃশ্বাসের বিষে আরেক মানুষ মারা যাচ্ছে ওরা কি বুঝতে পারছে না? কিভাবে পৃথিবীর কত দেশে কাতারে কাতারে মানুষের মৃতদেহ কবর দেবার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, এসব দেখেও কি মানুষের টনক নড়ে না? এই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল হলো, যারা কোভিড ছড়িয়ে পুরো পৃথিবীকে অচল করে ফেলছে।
বুঝলাম, পরীমণি খুব খারাপ, কিন্তু সে তো একা কিছু করে ধরা পড়েনি। ওইসব ভালো মানুষেরা এসব অবৈধ কাজে লিপ্ত হলো কেন? পরীমণি নিজে থেকে ডাক দিলেও তো দশবার চিন্তা করা উচিৎ ছিল, নাকি ভুল বললাম? আজকাল ভুল আর সঠিকের পার্থক্য বুঝতে পারছি না!
সবশেষে দু’টা কথা-
১/ যারা পরীমণিকে বাজারে মেয়ে বলছেন, তাদের বলি, একজন বাজারে মেয়ের কাছে এক হাজার মানুষ যায়। তাদের কি নামে ডাকেন আপনারা ? পৃথিবীর কোন বাজারে মেয়েই এমনি এমনি বাজারে মেয়ে হয়না, তাদের পেছনে যারা টাকা ঢালে তাদের নামকরণ করবে কে?
২/ একজন সেক্স ওয়ার্কারকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছোঁয়া দন্ডনীয় অপরাধ। ধর্ষণের জন্য কেবলমাত্র ধর্ষকই দায়ী, তার শিকার নয়। সেটা যেই সময়ে, যেই জায়গাতে, যেই মানুষের সাথে এবং যেই মুহূর্তেই হোক না কেন, সেটার দায় ধর্ষকের।
চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল, প্রত্যেকটা মানুষ অনিশ্চয়তায় ভূগছে, মানুষের জীবন ওলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে, শিশুদের ভবিষ্যৎএখন কঠিন প্রশ্নের মুখে আর আজ কয়েকদিন যাবৎ টিভি চ্যানেলগুলোতে লাইভ শো হচ্ছে, খবরের কাগজ, সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, ভাবখানা এমন যেন বহু বছর পর, অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে একজন বিখ্যাত ডন বা সিরিয়াল কিলার ধরা পড়েছে।
পৃথিবীর ধ্বংশ হবার মুহূর্তেও মেয়ে মানুষের স্ক্যানডালটা বরাবরই জমে ভালো। এর কোন বিকল্প আজ পর্যন্ত দেখলাম না।
শিল্পী রহমান
গল্পকার, কবি, সংস্কৃতিকর্মী, কাউন্সেলর ও গবেষক। স্থায়ী নিবাস ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়ায়।
প্রকাশিত গ্রন্থসমুহ: ধর্ষণ ধর্ষক ও প্রতিকার; উৎকণ্ঠাহীন নতুন জীবন; মনের ওজন; সম্ভাবনার প্রতিচ্ছায়ায়; যুদ্ধ শেষে যুদ্ধের গল্প; পথের অপেক্ষা; পাহাড় হবো ইত্যাদি।