গত ২৯ আগস্ট ২০২১ রবিবার একটা ভার্চুয়াল প্রকাশনা উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। বইয়ের নাম- বঙ্গবন্ধুঃ নেতা, নেতৃত্ব ও আজকের বাংলাদেশ। লেখকঃ শামস্ রহমান। বইয়ের নাম দেখে মনে হলো- আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়, এরকম বই-ই তো প্রকাশিত হবে। শুনেছি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে বাংলাদেশে এক হাজারেরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তম্মধ্যে কয়টা বই-ই প্রকৃতপক্ষে উল্লেখ করার মতো? এই প্রশ্ন বিদগ্ধজন ইতোমধ্যেই করেছেন এবং করবেন।
যাই হোক, সিডনি প্রবাসী নির্মাতা ও শিক্ষক গোলাম মোস্তফা সাহেবের সূত্রে আমন্ত্রণ পেয়েছি। বইটির লেখক পেশাগতভাবে সফল এবং সুনাম অর্জনকারী একজন অধ্যাপক। কাজ করছেন আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁর সম্পর্কে এতটুকুই জানি।
অতঃপর অধ্যাপক সাহেব ফোন করে উক্ত প্রকাশনা উৎসবটির সঞ্চালক হবার জন্য আমাকে অনুরোধ জানালেন। তাঁর কথায় পরিমিতি এবং মার্জিতবোধ বেশ লক্ষ্যনীয়। আমি তাই রাজি হয়ে গেলাম।
উক্ত ভার্চুয়াল প্রকাশনা উৎসবে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করা বেশ স্বনামধন্য বিজ্ঞজনের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো- (১) একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক এবং লেখক অজয় দাশগুপ্ত (২) ড. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, সাবেক প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, তথ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ (৩) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি এবং রাষ্ট্রদূত (৪) অধ্যাপক ড. ফিরোজ আলম, আরএমআইটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া (৫) অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া (৬) অধ্যাপক ড. আব্দুল মঈন, ঢাকা বিশবিদ্যালয় (৭) ড. রোনাল্ড পাত্র, পরিবেশ বিজ্ঞানী (৮) সুভাষ সিংহ রায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষক (৯) গোলাম মোস্তফা, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং শিক্ষক (১০) মাহবুবুর রহমান বাবু, প্রকাশক, বইপত্র প্রকাশন এবং (১১) আতিকুর রহমান শুভ, সম্পাদক, প্রশান্তিকা নিউজ।

এ ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণত ‘থোরবড়িখাড়া, খাড়াবড়িথোর’ জাতীয় আলোচনা হয়। মান্য-গণ্য অতিথিরা খুব একটা মান্য-গণ্য কথা-বার্তা বলেন না; ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো একই রাজনৈতিক গলাবাজী-চাপাবাজীতে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে- উক্ত অনুষ্ঠানে সেরকম কিছুই ঘটেনি। আলোচকগণ বইটি শুধু পড়েই আসেননি, নোটও নিয়ে এসেছেন। তাই দেড় ঘন্টার অনুষ্ঠান তিন ঘন্টায় গড়াল।
বইটির প্রচ্ছদ নজরকাড়া সুন্দর এবং বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৭২ পৃষ্ঠায় মোট ১৩টি নিবন্ধে সজ্জিত। উক্ত নিবন্ধগুলি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বইটি দুটি ভাগে বিভক্তঃ
প্রথম অংশে মূলতঃ রাজনৈতিক বিষয়াদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে- (১) বঙ্গবন্ধু নেতা হিসেবে কেমন ছিলেন? (২) ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল? (৩) স্বাধীনতা অর্জণই কি ৬ দফার চুড়ান্ত লক্ষ্য ছিল? (৪) একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ, এবং স্বাধীনতার ঘোষনাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুর কৌশলসমুহ কি ছিল? (৫) কোন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু বাকশাল পদ্ধতি প্রনয়ণ করেন?
দ্বিতীয় অংশে প্রধানত আজ এবং আগামী দিনের সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে আরো ত্বরান্বিত করার জন্য নিন্মোক্ত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে- (১) মানব সম্পদ আহোরণে ‘ব্রেইন-গেইন’ কৌশলের তাৎপর্য (২) আজকের সমতল পৃথিবীতে (গ্লোবালাইজেশন) তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কৌশল কেমন হওয়া উচিৎ? (৩) বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিটেন্স নির্ভরতা কিভাবে কমানো যায়? (৪) বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিভাবে প্রবাসীদেরকে সম্পৃক্ত করা যায়? জাতীয় সংসদে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতিনিধিত্ব কি থাকা উচিৎ? (৫) কোভিড ও কোভিডোত্তর ‘নতুন বাস্তবতায়’ তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিৎ?
প্যাপিরাসের দুঃসম্পর্কের বোন কার্টিস পেপারে মুদ্রিত গ্রন্থখানির মূল্য ৩৫০ টাকা মাত্র। অস্ট্রেলিয়ায় ১০ ডলারের বিনিময়ে প্রশান্তিকা বইঘরে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
লেখক পরিচিতিঃ
ড. শামস্ রহমান অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক। পাশাপাশি চীনের সাংহাইয়ে অবস্থিত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবে কাজ করছেন। আরএমআইটিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শামস্ রহমান পড়াশুনা করেছেন যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড ও বেলারুশে। এ যাবৎ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নাল ও কনফরেন্সে তাঁর লেখা দু’শোরও বেশি গবেষণা পেপার প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গবেষণার বিষয় মূলত সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কোয়ালিটি অ্যান্ড অপারেশন ম্যানেজমেন্ট, সাসটেইনেবিলিটি ইত্যাদি।
লেখালেখির পাশাপাশি তাঁর প্রিয় শখ হল, সমুদ্র সৈকত ধরে দীঘল পথ হাঁটা আর জানালায় দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি দেখা।
ড. শাখাওয়াৎ নয়ন
কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।