সব ইস্যু নিয়ে আজকাল কথা বলতে ইচ্ছে করেনা, সময়ও হয়না। কিন্তু, যেহেতু জগত সংসার ছেড়ে আত্নগোপন করে থাকিনা বা সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে যাইনি এখনও; তখন কিছু বিষয় আসলে এড়াতেই পারিনা!
নিজেকে বলি আমি লেখার মানুষ, তাই বলতে ইচ্ছে করে, আবার ছোট করে বলার পরও মনে আরো অনেক রকম ভাব প্রকাশের বুঁদবুঁদ চলতেই থাকে।
প্রসঙ্গ- মন্ত্রীর ফোনালাপ অডিও ফাঁস…
অনেকেই শুনে ফেলেছেন বা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জেনেছেন। সিনেমা অভিনেত্রী মাহিয়া মাহীকে ফোনে ভীষণ অশালীন ভাষায় তার কাছে যেতে বলছে…। বলাই বাহুল্য এই অডিও সামনে এসেছে বলে হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছেন!
(অডিও লিংক এভাবে সামনে আনা ঠিক কী ঠিক না এই নিয়েও কথা বলছেন অনেকে, আমি আপাতত এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিনা)
কিন্তু আমি যে বিষয়টি বলতেই চাইছিলাম তা হচ্ছে, আমার সাথে হয়তো দ্বিমত করবেননা অনেকেই। এই যে ক্ষমতার দম্ভ, অশ্লীল বাক্যবাণ, বিশেষ করে চলচিত্র বা অন্যান্য মিডিয়ায় কাজ করা নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এটা কিন্তু ক্ষমতায় থাকা পুরুষ থেকে শুরু করে নির্বিশেষে সমাজের সর্ব ক্ষেত্রে থাকা পুরুষদের সবচেয়ে বড় অংশের মানসিকতা আজকের বাংলাদেশে।
উদাহরণ দিতে চাই একাত্তর সহ দেশের বড় বড় মিডিয়া অঙ্গনে থাকা নারী সাংবাদিক থেকে শুরু করে, অন্যান্য সব মিডিয়াতে কাজ করা যে বা যারা সরব তাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেকোন বিরোধী পক্ষ এবং ধর্ম প্রচারের নামে চালানো নানান পেজ থেকে যেভাবে এটাক করা হয় তা সুস্থ বিবেকবান মানুষ হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে, ব্যথিত করে এবং ক্ষুব্ধ করে।
মিথিলা ফারজানার মতো আরো যারা উপস্থাপিকা আছেন তাঁদের কোন বোল্ড উচ্চারণ পছন্দ না হলেই কী হিংস্র ভাবেই না সব বয়েসী পুরুষ এবং কিছু নারীও সেই পুরুষ হুংকার নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে…
রাস্ট্রে অনেক উন্নয়নের পাশাপাশি হয়েছে এই মানসিকতার ব্যাপক চাষবাস! এমনকি ধর্মের নামেও চলছে পৃষ্ঠপোষকতা।
প্রতিবাদ আমরা কজন করি… দেখবেন খুবই হাতে গোণা কিছু মানুষ।
এবং নারীদের মাঝে সেই আমরা যে বা যারা প্রতিবাদ করি তাঁদের ছবি নিয়েও চালানো হয় প্রোপাগান্ডা। আমি দেখেছি আমার নিজের ছবি নিয়েও চালানো হয়েছে আরো কজন নারী লেখকদের সাথে একসাথে করে, খুব দুঃখজনকভাবে।
”নারীবাদী” এখন আমাদের দেশে রীতিমত গালি, ভাবা যায় বিষয়টা!
রাজনৈতিক বক্তব্য বা অন্য যেকোন ভূমিকা পছন্দ না হলেই অন্যপক্ষ যদি নারী হউন, তাকে যৌন হয়রানী করা হয় খুব অবলীলায় এবং ধর্ষণের মত একটা হুমকি দেয়া যেন খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়…
এবং এমনও দেখছি এমন আক্রান্ত নারীকেও আমরা প্রাপ্য বিচার বা সম্মান তো দূরের কথা, ভিক্টিম ব্লেমিং গেমে ফেলে মানসিকভাবে প্রায় মেরেই ফেলি যেন তাকে।
ঘুরে আর কজন দাঁড়ায়, বেশীর ভাগই জীবন থেকে যায় ছিটকে, আর বেশীর ভাগ নারী নিতান্তই বাধ্য হয়ে গুটিয়ে নেয় নিজেকে অনেক সময় ধর্মীয় লেবাসে এই সমাজে টিকে থাকবার জন্যেই।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, প্রতিমন্ত্রী মুরাদকে নিয়ে এই অডিও আসার ঠিক আগেই তার যে ভিডিওতে খালেদা জিয়ার নাতনী জায়মা রহমান এমনকি খালেদা জিয়াকে নিয়েও যেসব প্রসঙ্গ এনে এটাক করেছে এই বিষয়টা আমি অত্যন্ত ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দেখি এবং রীতিমত কষ্ট পেয়েছি বলে লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
তার আগেই প্রেক্ষাপট গেল বদলে।
তারপরও বলি, সব সময় প্রতিবাদ করেছি, করবো। একজন মানুষ কার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কে থাকবে বা জড়াবে বা জড়াবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা পারিবারিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন অপরাধের মাঝে না আসে এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলার অধিকার কারো নেই।
এবং নারী হলেই তাকে এমন কোন সম্পর্কের মাঝে দাঁড় করিয়ে চরিত্র হনন করার কূটচাল, অপসংস্কৃতি যে বা যারা ধারণ করে তাদের যেন আমি আপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হই তবে তার তীব্র প্রতিবাদ করি এবং তাদের বয়কট করি।
যদিও এই সময়ে আমাদের পক্ষ এবং বিপক্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক, দার্শনিক, তাত্ত্বিক এবং রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার মতো ব্যক্তিত্ব হাতে গোণা বা নাই বললেই চলে!
জী শুনতে যত খারাপই লাগুক, প্রচন্ড কষ্ট নিয়েই বলি এইটা বাস্তবতা…
এবং… শেষ যে কথাটা বলতেই চাই, তার আগে একটা ছোট ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেই। বাংলাদেশের আরেক নায়িকা পুর্ণিমা একবার কোন এক টিভিতে একটা প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করতে যেয়ে সম্ভবত খলনায়ক মিশাকে প্রশ্ন করছিলেন, সিনেমা পর্দায় কার সাথে ধর্ষণ সিন করতে ভালো লাগে… এই প্রশ্ন করতে যেয়ে দেখতে ভালো এই অভিনেত্রী যেমন করে হাসছিল আমি এবং অনেকেই তার মেধা নিয়ে খুব অসহায় বোধ করছিলাম শুধু মাত্র একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে!
সময়ের সাথে সাথে এটা বুঝতে পারছিলাম, ”ধর্ষণ” বিষয়টি শুনে অনেকের হাসি পায়, বিনোদনের বিষয় মনে করে। সর্বোপরি এইটা একটা যে অপরাধ এবং শুধু ধর্ষকই দায়ী এই বিষয়টিই যেন বুঝতে পারেনা।
এবং এটি দুঃখজনক হলেও সত্যি নারীদের অনেকের মাঝেও নেই বিষয়টিকে ঘিরে থাকা মনোস্তাত্বিক সংবেদনশীলতা বা আক্রান্তের প্রতি সম্মান!
এই সময়ের যেকোন, মিডিয়াতে কাজ করা প্রমিনেন্ট নারীদের কথা বলছি, তাঁদের নিয়ে কোন একটা নিউজ যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠে আসে তার নীচে একশোটা কমেন্টের মাঝে যে কয়টা আপনার দেখার সময় হয় একটু চোখ বুলিয়ে দেখেন অবস্থাটা কতোটা ভয়াবহ। আমার এই লেখার ৭০০ শব্দ এই ভয়াবহতা তুলে আনার জন্যে কোনভাবেই যথেষ্ট নয়, তারপরও বলি, বলার চেষ্টা থাকবে অব্যহত, যতদিন আছি বেঁচে!
নাদেরা সুলতানা নদী
সহযোগী সম্পাদক, প্রশান্তিকা।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।