প্রবাসে বাঙ্গালিয়ানা….. মুখোমুখি মুক্তমঞ্চ সম্পাদক ও তাঁর পরিবার

  
    

প্রবাসে বাঙ্গালিয়ানা…..
মুখোমুখি মুক্তমঞ্চ সম্পাদক ও তাঁর পরিবার

 

অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকা মুক্তমঞ্চের সম্পাদক আল নোমান শামীম। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৫ বছর ধরে তিনি মুক্তমঞ্চের মতো একটি সম্পূর্ন পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় লেবার পার্টির একজন সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। রাজনীতির ও প্রকাশনার বাইরে তিনি ব্রান্ডিং বাংলাদেশের ব্যানারে প্রতি বছর সিডনিতে বাংলাদেশ থিমের ওপর একটি মেলার আয়োজন করেন। অন্যদিকে মিসেস শামীম দুই সন্তান আর ঘরই শুধু সামলান না, এখনও পড়াশুনা করছেন বিশেষ একটি কোর্সে।
ঘরে বাইরে পুরো দস্তর এই পরিবারের বাঙ্গালিয়ানার খবর নিতে তাদের অন্দর মহলে গিয়েছিলেন প্রশান্তিকার বার্তা সম্পাদক আরিফুর রহমান। সেই হাঁড়ির খবর পাঠকদের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশান্তিকা:আপনাদের প্রবাস জীবন কত বছর হলো ?
নোমান শামীম: আমার ২১বছর এবং আমার স্ত্রী সাথীর ১২ বছর।

প্রশান্তিকা: প্রথমেই জানতে চাই আপনাদের প্রবাস জীবনের ঈদ নিয়ে।কেমন কাটে প্রবাস জীবনের ঈদ?
শামীম: প্রবাস জীবনের ঈদ হলো ছন্নছাড়া। তবুও আমরা চেষ্টা করি আসল বা দেশী ঈদের আমেজ ও আনন্দ নিয়ে আসার। এমন কি সেদিন কোন কাজ কর্ম হাতে রাখিনা।দেশের ঈদ চোখে চোখে ভাসে।মনে হয় দেশে থাকলে ভালো হত কিন্তু বাস্তবতা হলো এখানে থাকি।

প্রশান্তিকা: ভাবির কাছে এ বিষয়ে যদি জানতে চাই? আমরা জানি মেয়ে বা মহিলারা ঈদকে অন্যরকম ভালোলাগা বা আনন্দ নিয়ে কাটান? এখানে তো আপনার বাপের বাড়িও নেই শ্বশুর বাড়িও নেই, এটা হলো প্রবাস বাড়ি।পরবাশ বাড়ির ঈদ কেমন করে কাটান?
সাথী: এখনতো ইউজড টু হয়ে গেছে। তবে ঈদের দিন বাবার বাড়ির সেই সকাল বেলার চিত্র চোখে চোখে ভাসে। খুব কষ্ট লাগে।

প্রশান্তিকা: এখানে তো আপনার স্বামীর সংসার এবং দুই সন্তান নিয়ে থাকেন।ওরা কি ঈদের দিন নামাজসহ বাংলাদেশের সেই সম্পূর্ন চিত্র ওদের মধ্যে ফুটে উঠে কিনা?
সাথী: হুম বাংলাদেশের মতো আমার স্বামী এবং বাচ্চারা মিষ্টি মুখ করে নামাজ পড়তে যায়। তবুও সেই আমার দেশের ছবি চোখে ভাসে।সবাইকে টেবিলে সকল রকমের মিষ্টি পরিবেশন করি। যেমন সেমাই, সুজি, জর্দা। ওরা খেয়ে নামাজে বের হয়।

 

প্রশান্তিকা: নামাজ পড়ে আসার পর কি করেন? ঈদের কেনাকেটা কেমন করেন?
শামীম: সবাই আমাদের বাসায় আসে।
প্রতিবারই অনেক বড় আয়োজন থাকে দীর্ঘ সময় নিয়ে। আমরাও যাই বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবদের বাসায়। হুম ঐ ভাবে কেনা কাটা হয়না। ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের জন্য বাবাই কেনাকাটা করে দিত। তেমনি আমি যখন বাবা হয়েছি বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করা হয়।কেনাকাটা দেশ থেকেও করে নিয়ে আসি।

প্রশান্তিকা: এখানে কি বাংলাদেশের মতো জিনিসপত্র পাননা?
শামীম: ধরতে গেলে তেমনই। তবে এখনও আমরা বাংলাদেশ থেকেই কেনাকাটা করতে পছন্দ করি।আসলে ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটার কনসেপ্টতো এদেশের না। এটাতো আসলে আমাদের দেশের ঐতিহ্য।তাই কেনাকাটা আমরা বাংলাদেশ থেকেই করি।

প্রশান্তিকা: ভাবির কাছে জানতে চাচ্ছি, যেহেতু মেয়েরা বেশিরভাগ সময় ঈদের কেনাকাটা করে থাকে। অর্থ্যাৎ মেয়েদের একটু ঝোঁক বেশিই থাকে ঈদের কেনাকাটার প্রতি। আপনি কি এখানে ঈদের বাজার বাংলাদেশের মতো করে থাকেন? ঈদের ঘুরাঘুরি কেমন হয়?

শামীম: হুম অনেক। বন্ধু বান্ধবদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই কমিটমেন্টের সংখ্যাও অনেক বেশি।সেজন্য বাংলাদেশের মতো এখানেও সবার বাসায় ঘুরতে যাওয়া হয়। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় দু’সপ্তাহ লেগে যায়।

প্রশান্তিকা: সাথী ভাবী কথা প্রসঙ্গে বলেছেন, ঈদের দিনও তার ছুটি নেই? তারমানে কি ঈদের জন্য কোন ছুটি পাওয়া খুব কঠিন?ভবিষ্যতে কি মুসলিমদের জন্য ঈদের ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? যেহেতু অষ্ট্রেলিয়াতে দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। আপনি যেহেতু এদেশের মেইন স্ট্রিটের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।তাই এই বিষয়টা নিয়ে জানতে চাচ্ছি ।
শামীম: হুম এটা অনেক সুন্দর প্রশ্ন। সরকারী ভাবে ঈদের জন্য ছুটি এদেশ দেয়না। সবাইকে ম্যানেজ করে নিতে হয়।আমরা বছরে দুদিন ঈদ উদযাপন করি। ঈমাম কাউন্সিল নামে এক অস্ট্রেলিয়া সরকারের অনুমোদিত সংগঠন আছে, তারা প্রায় দু’বছর হলো ঈদের চাঁদ বা সাইন্টিফিক ভাবে ঈদ ঘোষনা করছে।যেটা সরকারের কাছে বেশ ইমপ্যাক্ট পড়ছে বা গ্রহন যোগ্যতা পেয়েছে।আশা করি এদেশের সরকার দু’এক বছরের মধ্যে ঐচ্ছিক ছুটি ঘোষণা করবে।আমরা এখন এটা আশা করতেই পারি।এবারের ঈদও একই দিনে পড়েছে। এখন পরিষ্কার ভাবে সরকারের কাছে মুসলিম সম্প্রদায় ঐচ্ছিক ছুটি চাইতে পারে।

প্রশান্তিকা: ভাবির কি ঈদের দিন বা ঈদ উপলক্ষে বাবার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করেনা?
সাথী: অনেক করে। ভীষন মনে পড়ে। মনে হয় আবার যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই সময়ে।

প্রশান্তিকা: শামীম ভাইয়ের কাছে জানতে চাই, একটি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে ঈদের খবর কমিউনিটির অন্যান্য খবর বা তার উৎস কিভাবে কাভার করেন বা অন্যান্য পত্রিকা কাভার করে কিনা?
শামীম: হুম এখানকার পত্রিকা গুলো ঈদকে কাভার করার চেষ্টা করে। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের অধিকাংশ পত্রিকা হলো মাসিক। তাই ঐভাবে বাংলাদেশের পত্রিকার মতো ঈদ কে নিয়ে ঐভাবে কাভার করা সম্ভব হয়না। হ্যা তবে অনলাইন পোর্টাল গুলো ঈদের উৎসব কে তুলে ধরে। যেমন এবার প্রশান্তিকা ঈদ সংখ্যা বের করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি তারা চমৎকার একটি ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করবে।

প্রশান্তিকা: আপনি একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির সদস্য আবার বাংলাদেশের আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠন অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সঙ্গেও জড়িত। এখানে আমরা পৃথিবীর কোন দেশের রাজনীতিকে প্রবাসে নিয়ে আসতে দেখিনা। অথচ এখানে বাংলাদেশের সরকারী দল, বিরোধীদল, জামাত, বিএনপি সবার সরব উপস্থিতি। কিন্তু কেনো ?
শামীম: এক কথায় উত্তর দিলে বলা যায় বাঙ্গালী একটি ইউনিক জাতি এজন্যই অন্য কোন দেশের মানুষের সাথে মিল নেই। তবে আমি বিষয়টিকে দেখি এভাবে। আমরা দেশকে ভালোবাসি বলেই সেদেশের দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাই। সরকার কোন অন্যায় করলে যেমন সারা বিশ্বে বাংলাদেশী প্রবাসীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠে তেমনি বিরোধী দল অন্যায় করলে সরকার দলীয় সমর্থকেরা প্রতিবাদ করে। আমার তো মনে হয় এটা দেশকে ভালোবেসেই আমরা করি। আশা করি আপনার জবাব পেয়েছেন।

প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে আপনাদের
ঈদ মোবারক।
প্রশান্তিকার পুরো টিম এবং আপনাকে আমাদের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments