সুপ্রিয় পাঠক, প্রশান্ত পাড়ের বাঙলা কাগজ, প্রশান্তিকা নতুনরূপ অনলাইন পোর্টালে আবির্ভূত হলো। আমরা আনন্দিত এই মাধ্যমে আবার আপনাদের সামনে আসতে পেরেছি।আপনাদের আগ্রহ ও অনুপ্রেরণাই এর ফসল। প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শ্রদ্ধেয় অজয় দাশগুপ্তকে যিনি প্রশান্তিকা নামকরন করেছেন। সূচনালগ্নের একটি লেখায় তিনি আমাদের আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, সমুখে শান্তি পারাবার ভাসাও তরণী হে কর্ণধার। বিগত দিনের শত কষ্ট ও বেদনা সত্বেও আমরা হার মানিনি। সমুখে শান্তি রয়েছে জেনে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছি।
প্রশান্তিকার নাম দিয়েছেন অজয় দাশগুপ্ত।
আধুনিক সময়ে বিষয়টা আর সংবাদপত্র প্রকাশ নয় কেবল সংবাদ প্রকাশ বলাটাই বোধ হয় যুক্তিযুক্ত। কারন সংবাদ শুধু কাগজে বা পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে না। কাগজ ছাড়াও অনলাইন পোর্টাল এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ হচ্ছে। অসংখ্য পাঠকও কোনরকম বৈধতা বা স্বচ্ছতা চিন্তা না করে তা গ্রহণও করছেন। ইদানিং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক বিভিন্ন বিলবোর্ডে বলছে, ফেক নিউজ ইজ নট আওয়ার ফ্রেন্ড। তার মানে হচ্ছে এই মাধ্যমে যত সংবাদ ছড়াচ্ছে তার বেশির ভাগই ফেক নিউজ। আজকাল সবাই তিন লাইনের একটা সংবাদ লিখে একটি হেডলাইন জুড়ে দিয়ে বলছে এটা একটি সংবাদ। সেই সংবাদ আবার দেশে এবং দেশের বাইরে হাজার হাজার পোর্টালে শোভা পাচ্ছে। তার বৈধতা নিয়ে আমরা কোন প্রশ্ন পর্যন্ত করিনা। এর মারাত্মক বিপর্যয় দেখেছি ঢাকায় কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনের সময়। এই আন্দোলনে পক্ষে বিপক্ষে অসংখ্য গুজব ছডিয়েছে সংবাদ মাধ্যম নামের এই সব পোর্টাল। সংবাদ মাধ্যম প্রকাশে এটি একটি সংকট। সেই সংকট এখন পত্রিকার পাতা থেকে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন পোর্টালে।দেশের বাইরে প্রবাসে এই সংকটটা আরো বেশী। কারন এখানে জবাবদিহীর প্রয়োজন থাকেনা।মালিক বা শুধুমাত্র এডমিন বা সম্পাদকের যা ইচ্ছে তাই লিখে আপলোড দিয়ে দিচ্ছেন। পাঠক আপনাদের আশ্বাস দিয়ে বলতে চাই প্রশান্তিকা সেরকম একটি পোর্টাল হবেনা। আমরা কোনো ভিত্তিহীন বা গুজবের প্রশ্রয় দেবোনা। প্রশান্তিকা বরাবর একটি প্রগতিশীল বাংলা মিডিয়া ছিলো এবং থাকবে।
প্রবাসে অনেকে স্রেফ সাংবাদিকতা পছন্দ করেন বলেই বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বের করেন এমন সম্পাদক বা প্রকাশকের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সিডনি। কেবলমাত্র এ শহর থেকেই নিয়মিতভাবে ৬/৭ টি প্রিন্ট পত্রিকা এবং বেশ ক’টি অনলাইন বের হয়। এটা শুধু এমনি এমনি হয়নি। বাঙ্গালী কমিউনিটির পরিধি অনেক বেড়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য রয়েছে। অনেকেই আমাদের স্পন্সর বা বিজ্ঞাপন দিয়ে সাহায্য করছেন।আমরা আরো একটু ভাবতে চাই যে, এই বিজ্ঞাপন বা স্পন্সর একটি মিডিয়ার চালিকাশক্তি।
তবে ব্যক্তি ইমেজ নষ্ট হয় বা মানহানির মামলা আসতে পারে এই ভয়ে অনেকে ব্যবসা বাণিজ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রতিবেদন করতে পারেনা। কেউ কেউ সাহস দেখালেও নাম বলতে ভয় পায়। তারা অনেক সময় এভাবে রিপোর্ট করেন, ‘ল্যাকেম্বা স্টেশনের ঐ পাশের হুন্ডি ব্যবসায়ী টাকা মেরে দিয়েছে’ বা ‘রকডেলের এক রেস্টুরেন্টে খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছে’। তাহলে পাঠক কিভাবে সংবাদ দুটি পড়ে উপকৃত হবে ? তারা কি কোনো মানি ট্রান্সফারে টাকা পাঠাতে যাবেনা বা কোন বাঙালী রেস্টুরেন্টে তেলাপোকার ভয়ে খেতে যাবেনা। তা তো আর হয়না। এটাও আমাদের মিডিয়ার জন্য সংকট। তাদের ব্যবসা নষ্ট হবে বা রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হতে পারে ভেবে আমরা চুপসে যাই। সেই কারনেই বোধ হয় প্রবাসের মিডিয়াগুলো ব্যবসা বাণিজ্যের স্তুতি বা সফল ব্যক্তি মানুষের গুণকীর্তন করে সংবাদ প্রকাশ করে শুধু। মাস দুয়েক আগে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে নিয়ে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ প্রেস এন্ড মিডিয়া ক্লাব একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলো। সেখানে সিডনির নামকরা প্রিন্ট এবং অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা একত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে আমি সংবাদ ও মিডিয়ার সংকটের বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলাম। জবাবে শ্যামল দত্ত তার নিজের বিরুদ্ধে আনীত ১৬টি মামলার উদাহরণ দিয়ে বললেন, গনমাধ্যমে এটি একটি বড় সমস্যা। তবুও তিনি সবাইকে সেল্ফ সেন্সরশীপ বজায় রেখে রিপোর্ট তৈরী ও প্রকাশ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া প্রেস এন্ড মিডিয়া ক্লাবের আলোচনা সভায় বাম থেকে অজয় দাশগুপ্ত, রহমত উল্লাহ, শ্যামল দত্ত, শাখাওয়াৎ নয়ন।
আমাদের প্রবাসের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন ধরে নিয়েই আমাদের সংবাদ মাধ্যমকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সুপ্রিয় পাঠক, আমরা আশাবাদী প্রশান্তিকা তার বিশাল টিম নিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছুবে। আপনারা প্রশান্তিকার সঙ্গে থাকবেন।