আতিকুর রহমান শুভ: সুস্নাত দ্রবন্তী সিডনি এসেছে মামাবাড়ি বেড়াতে। বছর খানেক পরে এসএসসি পরীক্ষা। তার আগেই যতোটা সম্ভব অস্ট্রেলিয়া ঘুরে যাওয়া। প্রশান্তিকা এই সুযোগে একটি ক্ষুদ্র সাক্ষাৎকার নিয়ে নিলো দ্রবন্তীর। কেনো এই ষোড়শির সাথে সাক্ষাৎকার? সেটাই বলা হয়নি।
দ্রবন্তী গান করে, রবীন্দ্রনাথের গান।গান ছাড়াও ওর ঝুলিতে একটা সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও জুটে গেছে।নামকরা নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে দ্রবন্তী। মা রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে বাংলায় এবং আইনে পড়াশুনা করেছেন, বাবাও একই ইউনিভার্সিটির। দুই মেয়ের নাম রেখেছেন, সুকৃতি আর দ্রবন্তী, একেবারে খাঁটি বাংলা নাম। দ্রবন্তীর গানের প্রেরণা বাবা ও মা’র কাছেই। এখন গান শিখছেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রবাদ পুরুষ সাদি মোহাম্মদের কাছে। ওর ক্লাসিকাল সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়েছে গুরু সুজিত মোস্তফার কাছে। সিডনি কেমন লাগছে, জিজ্ঞেস করতেই দ্রবন্তীর সপ্রতিভ উত্তর “ভালো, খুব ভালো। তবে আবহাওয়া একটু বৈরী। এখানে আসার পর থেকে বনভূমিতে আগুনের খবরে অন্য সবার মতো আমিও ভীত শংকিত।”

ক্লাসিকাল ধারার সঙ্গীত শিখেও নজরুল বা রাগ প্রধান গানে দ্রবন্তী এগোয়নি। নিয়মিত ক্লাসিকাল চর্চা বা রেওয়াজ করলেও রবীন্দ্রনাথের গানে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে সে। এর কারন কি, তার উত্তর, প্রধান কারন গানের বাণী। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী এবং সুর তাকে আচ্ছন্ন করে।
প্রিয় শিল্পীর তালিকায় রয়েছে সাদী মোহাম্মাদ, অদিতি মহসিন, রেজোওয়ানা চৌধুরী বন্যা। হেমন্ত মুখোপাধ্যয়, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলিম শরাফী বা সাগর সেনদের কন্ঠে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত তাকে দ্রবন্তীর বেসিক বা অবশ্য শুনতে হবে তালিকায় রাখতে হবে। ভরাট কন্ঠে সুজিত মোস্তফার ক্লাসিকাল গান শুনতেও তার খুব ভালো লাগে।
সঙ্গীতে প্রতিভাময়ী দ্রবন্তী ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়তে চায়। পড়াশুনা যত কঠিনই হোক না কেনো গান থাকবে সঙ্গে সঙ্গে।
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের গল্পে ও নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ সিনেমায় অভিনয় করে চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং এর ভেতরটা দেখা হয়েছে তার। বড় স্ক্রিনে নিজেকে দেখেও বিস্ময় লেগেছে তার। তবে এতো বড় মাপের মিডিয়ায় নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে নেই দ্রবন্তীর, গানেই নিয়মিত থাকতে চায় সে।
দ্রবন্তী মনে করে রবীন্দ্রনাথের গান শুধু গাইলেই হয়না একে ধারনও করতে হয়। আর এই কারনে সমবয়সীদের সাথে কখনও কখনও সে রিলেট করতে পারেনা বা ওদেরও ওর সাথে রিলেট করতে সমস্যা হয়। সেটা কেমন, জিজ্ঞেস করতে দ্রবন্তীর উত্তর, “ যেমন ধরুন ওরা স্বাভাবিক ভাবে চটুল কোন ব্যান্ডের গান বা জনপ্রিয় একটি গানের কথা বলছে, কিন্তু আমার ওতে আগ্রহই নেই। তাই রিলেট করতে সমস্যা হয়।”

প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের লাইন কি? ওর উত্তর, “অনেক আছে। তবে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে প্রেম পর্যায়ের ওই গান, আমি রূপে তোমায় ভুলাবো না, ভালোবাসায় ভুলাব।” রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়াও পঞ্চকবি যেমন অতুল প্রসাদ বা রজনীকান্তের গান গাইতে এবং শুনতেও ওর খুব ভালো লাগে।
প্রশান্তিকার সাথে সংক্ষিপ্ত এই আড্ডায় দ্রবন্তী আমাদের বেশ ক’টি গান শুনিয়েছে। গানগুলোর মধ্যে তার প্রিয় গানটিও রয়েছে। প্রশান্তিকার ইউটিউব চ্যানেলে ওর গানের ভিডিওটি ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বলছেন, এই বয়সে ওর গলার রেঞ্জ ও গলা খুবই মুগ্ধকর। অন্য এক সঙ্গীতবোদ্ধা বললেন, “খুব সুন্দর কন্ঠ মেয়েটার,ওর কন্ঠেই যেনো একই সঙ্গে বাজছে একটি বাদ্যযন্ত্র ! ওর গান, চেহারা, কথা বলার ভঙ্গি বড় শিল্পী অদিতি মহসিনের সাথে মিলে যায়। একদিন সে বরেণ্য শিল্পী অদিতি মহসিন হবে।”
গুণী শিল্পী অদিতি মহসিন অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন। অনেক কাছে থেকে তাঁর গান শোনার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। দ্রবন্তীর গানও শুনলাম। আমি সঙ্গীত বুঝিনা, কানে যে গান বা বাণী যে দোলা দেয়, সেটাই শুনি, সেটাই ভালো লাগে। অদিতি এবং দ্রবন্তী দু’জনের কন্ঠেই যেনো যাদু আছে। এক নবীন তার পদভারে অনুসরণ করছে আরেক মহীরূহ’র। অশেষ শুভ কামনা সুস্নাত দ্রবন্তী।