শাখাওয়াৎ নয়ন: শিরোনাম দেখে কেউ আবার শুধুমাত্র চর্ম ও যৌন স্বাস্থ্যের কথা ভাববেন না। ঘটনা আরো বড়, আরো বেশি কিছু। প্রিয়জনের শরীরে আরো অনেক কিছু আছে। তবে ‘প্রিয়জন’ বলতে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী নয়। বাবা-মা, ভাই-বোনরাও তো প্রিয়জন।
আমরা যারা প্রবাসে থাকি, তাদের অধিকাংশই সৎ উপার্জনে জীবন যাপন করি। ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যা কিংবা প্রতারনা করতে হয় না। কিন্তু তারপরেও ফোনে দুই একজনের সাথে নিয়মিত মিথ্যা বলতে হয়, অথচ তাদের কাছে মিথ্যা বলাটা মহাপাপ। তারা হলেন- আমাদের মা-বাবা। যত সমস্যাতেই থাকি না কেন, তাদের কাছে বলি ‘ভালো আছি মা’ ‘ভালো আছি’। সমস্যার কথা বললে, মা চিন্তা করবেন। ঘুমাতে পারবেন না। সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তায় বয়ষ্ক মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাই সত্য গোপন করি।

অপরপ্রান্তে মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করলে যতদিন পর্যন্ত লুকানো যায়, ততদিন পর্যন্ত লুকিয়েই রাখেন। প্রায় সবসময়ই তাঁরা বলেন- ‘ভালো আছি বাবা’ ‘ভালো আছি’। দু’পক্ষই একে অপরের কাছে এই নির্দোষ মিথ্যা বলছে, বছরের পর বছর। কিন্তু একটা পর্যায়ে আর মিথ্যা চলে না, লুকানো যায় না। একদিন গলার স্বর দুর্বল শোনা গেলে সন্তান জিজ্ঞেস করে,
– আপনার গলাটা এরকম লাগছে কেন মা?
তৎক্ষণাৎ মা উত্তর দেন,
– ঠাণ্ডা লাগছে বাবা।
এই ‘ঠাণ্ডা’ যে ঠাণ্ডা নয়, সেটা প্রত্যেক প্রবাসী ছেলে-মেয়েই জানে। ভালো করেই জানে। ডাক্তারের কাছে গেলে একটা নয়, কয়েকটা রোগের রিপোর্ট, ঔষুধ-পথ্য নিয়ে বাড়ি ফিরে নয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
মা-বাবার বয়স হয়েছে, হচ্ছে। বিভিন্ন রকম অসুস্থতা বাড়ছে। বাংলাদেশে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে গেলে তিন মিনিটে চারজন রোগী দেখার কারনে রোগীরা তাদের সমস্যার কথাটাই বলতে পারেন না। ডাক্তাররা হয়তো ঠিক চিকিৎসাই দিচ্ছেন কিন্তু রোগীরা খুশি হতে পারছেন না। তাই অনেক রোগী একাধিক ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। একই রকম টেস্ট একাধিক ল্যাবে করাচ্ছেন। কেউ কেউ ভারত, থাইল্যান্ড অথবা সিংগাপুর যাচ্ছেন। লাখ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
যা কিছু হচ্ছে, সবই কি অপরিহার্য? কেন একজন রোগী একাধিক ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন? কেন একই টেস্ট একাধিক ল্যাবে করাচ্ছেন? কারণ রোগীরা ডাক্তারকে বিশ্বাস করছেন না। প্যাথলজিস্টকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। বাংলাদেশে ডাক্তার আছে, হাসপাতাল আছে, ঔষুধ আছে কিন্তু আস্থা নেই। এই অসীম আস্থাহীনতাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান দুর্বলতা।
অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামকরা হাসপাতালগুলোতে অনেক বাংলাদেশী ডাক্তাররা কাজ করছেন। সুনামের সাথেই কাজ করছেন। আমরা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে অবস্থানরত মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের অসুস্থতায় পরিচিত ডাক্তারদের ফোন করে, রিপোর্ট পাঠিয়ে পরামর্শ নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও কোনো ডাক্তার বন্ধু আমাদেরকে হতাশ করেননি। কাউকে কখনো বলতে শুনিনি যে তিনি পরামর্শ দিবেন না। এই সেবা কিন্তু আমরা অন্য কোনো দেশের ডাক্তারদের কাছ থেকে পাই না, কিংবা পাওয়া সম্ভব না। আমি হয়তো বছরে দুই-তিনবার এরকম সেবা নেই। কিন্তু একজন ডাক্তার প্রতিদিনই কয়েকজনকে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন। বছর শেষে সেটা শত থেকে হাজারে পৌঁছায়। কিন্তু আমাদের সেবাদানকারী ডাক্তার বন্ধুটির মুখের হাসি কখনো মলিন হয় না।
এত কিছু করার পরেও দেশের মানুষের জন্য আরো বৃহত্তর পরিসরে কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি প্রবাসী একদল তরুন মেধাবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তাঁরা পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য টেলিহেলথ সার্ভিস নিয়ে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। তাদের এই দাতব্য উদ্যোগটির নামঃ ‘Health of Loved Ones (HOLO)’ । খুবই সহজ ব্যবস্থা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস। ‘এখানে’ গেলে কেউ ‘ওখানে’ পাঠিয়ে দিবে না। ডাক্তাররা সরাসরি রোগীর সাথে ফোনে কিংবা প্রয়োজনে ভিডিও কল দিয়ে কথা বলবেন। একেকজন রোগীর কনসাল্টেশন টাইম আধ ঘন্টা। প্রয়োজনে বেশি সময় দিবেন। এই সেবা পেতে হলে তাদের ওয়েবসাইট (www.holonow.com.au), ইমেইলঃ info@holonow.com.au কিংবা ফেইসবুক (Health of Loved Ones) পেইজে রোগীর নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার অথবা ইমেইল দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। রোগীর সমস্যার কথা জানাতে হবে। কোনো প্যাথলজিকাল রিপোর্ট থাকলে তা ইমেইলে পাঠাতে হবে। যে কোনো প্রবাসী তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকেও যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন। কোনো ধরনের নিবন্ধন ফি কিংবা সার্ভিস চার্জ নেই। সম্পুর্ন ফ্রি।
চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে অন্যতম (১) ডাক্তার ফাইজুর রেজা (২) ডাক্তার ইফতেখার হুসাইন পাভেল এবং (৩) ডাক্তার শেখ হায়দার তপু। এছাড়া ডিজিটাল হেলথ কেয়ার মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে আছেন ডক্টর মাহফুজ আশরাফ।