খুব একটা যাওয়া হয় না কোথাও। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো, যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া …. আজকাল ক্লান্তি আর অবসাদের মতো এমন কিছু ভীড় করে। আমি আশাবাদী মানুষ। জীবনের চড়াই উৎরাই পার হতে হতে শিখেছি জীবন মানে আশাবাদ । সে আশাবাদের মূল আসলে কি? জীবনানন্দই তার উত্তর জানতেন। জানতেন বলে লিখেছিলেন, অর্থ নয় কীর্তি নয় স্বচ্ছলতা নয় আরো এক অন্তর্গত বিপন্ন বিস্ময় আমাদের রক্তের ভিতর খেলা করে…

রোকেয়া আহমেদ বিনয়ী । তার নাম শুনেই আমার পায়রাবন্দের বেগম রোকেয়ার কথা মনে পড়েছিল কেন জানি। এটাতো মানতেই হবে বাংলায় যা কিছু মহান চির কল্যাণকর তার বেশীরভাগ করেছেন রোকেয়া, প্রীতিলতা, জাহানারাদের দল। এই অনুষ্ঠানের পুরোধা এবং সমন্বিত শক্তি ছিলেন নারীরা । নাসরিন মোফাজ্জ্বলের সঞ্চালনায় এক ঝাঁক নারীর বৃন্দ পরিবেশনায় একজন খোকা মূর্ত হয়ে উঠেছিলেন। ভ্রম হচ্ছিল এ বোধহব বঙ্গবন্ধুর কথা শুনছি। হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু ছিলেন। জ্যোর্তিময় তো থাকবেনই। কিন্তু খোকাটি মূলত: এক মুক্তিযোদ্ধা । সে কারণে এক ঝলকে আমার ভেতর হাওয়ার মতো ঢুকে গেল এই পরিবেশনা । গানে রুমানা ফেরদৌস, রুনু রফিক, রানী নাহিদ, তবলায় প্রিয়জন সাকিনা আক্তার এরা সকলেই ছিলেন যথাযথ । সাথে আরো যারা ছিলেন তারা না থাকলে সুর আর বানী কোনটাই পূর্নতা পেতো না।
এতো বাহ্যিক। অন্তর্গত ভাবে তাদের আয়োজন ছিল ক্লাসিক। এই ধ্রুপদী বিষয়টা এখন প্রায় উধাও হবার পথে । সে দিন তাদের পরিবেশনা গীতি আলেখ্যটির নাম- মা ও মাতৃভূমি । কেন এই নাম তার কারণ কিন্তু বুঝতে পারিনি। এই সরলীকরণ না করে আরো কোন কাব্যিক নাম হলে মনে হয় এর দ্যোতনা বাড়তো।
কত ধরণের অনুষ্ঠানই তো হয়। এরচেয়ে ভালো হয় মন্দও হয়। কিন্তু একটি সংগঠন কেবল লেখকদের ডেকে আসন পেতে তাদের কথা শুনছে এমনটা চোখে পড়েনি। বই মেলায় হয় এমন কিছু। কিন্তু সেটা লেখকের বই প্রকাশের আনন্দ। এখানে নিজের লেখা পাঠ আর কথা বলা। মুক্ত আড্ডার মতো। এই আয়োজনে ড: আবদুর রাযযাক, কাজী আলী, আশীষ বাবলু, সিমি কাজী সুলতানা, আবু সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ, আবু সাঈদ তাদের সম্মান বজায় রেখেছেন । তাদের কথা শুনেছেন সবাই।

এরপর আবার সেই আমরা সবাই রাজা নামে সবাইকে যুক্ত করেছিল ওরা। এগুলো অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা। লেখার বিষয় নয় । যেটা বলতে চাই, পড়ুয়ার আসর যে পায়ে পায়ে একবছর পার করে ফেলেছে এটা আমি জানতাম না। দূরদেশে বাংলা বাঙালির সাথে অসামন্জস্যপূর্ণ এক সমাজে বাঙালির এমন পাঠের আসরের বর্ষপূর্তি আমাকে আপ্লুত করেছে। লজ্জিত হয়েছি এই ভেবে , নিজেরে করিতে গৌরব দান নিজেরে না যেন করি অপমানে । আনন্দিত হয়েছি তাদের পাঠের সূচি আর লেখকের নাম শুনে ।
কে না জানে বই পড়া মানেই জীবনকে নতুন ভাবে আবিস্কার করা। বই এমন একটা বিষয় যার গন্ধেই মানুষ জ্ঞানী হতে পারে। পৃথিবীর সব আলো জ্ঞান আর ভালোবাসার আশ্রয় পুস্তকে। যারা এই ডিজিটাল দানবের যুগে ছাপানো বই পড়েন, পাঠ করেন একটি পাতা হলেও উল্টে দেখেন তারা আলোর পথযাত্রী। তাদের চেয়ে আলো আর কোন কিছুই দিতে পারে না । অনুষ্ঠানটিতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন আমার প্রিয় অভিভাবকতুল্য বাঙালি গামা আবদুল কাদির।
আমাদের সাথে পড়ুয়ার আসরের যোগ আরো নিবিড় হোক। অন্দরমহলে বাইরের জগতে সে আলো ঠিকরে পড়ুক। যেমনটা
কবিগুরু লিখেছেন- গোপনে প্রেম রয় না ঘরে, আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে… বইয়ের আসর পড়ুয়ার আসর। তাদের যোগে জয়ী হোক আমাদের প্রবাসী ভূবন।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
