প্রশান্তিকা ডেস্ক : অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে সিডনিবাসী কথাসাহিত্যিক শাখাওয়াৎ নয়নের নতুন বই ‘ বোহেমিয়ান ‘। প্রচ্ছদ : মাহবুবল হক এবং প্রকাশক : ঘাসফুল প্রকাশনী। প্রথম দিন থেকেই বইমেলাসহ একযোগে পাওয়া যাবে rokomari.com, shakhawatnayon.com, Porosh Sydney, প্রশান্তিকা বইঘর, বাতিঘর, পাঠক সমাবেশ এবং উজান বইয়ের দোকানে। এছাড়াও ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এশফিল্ড বইমেলায় ইকরিমিকরি বুকস্টুডিও, প্রশান্তিকা, পেন্সিল অস্ট্রেলিয়া, অবন্তিকা বুকস্টল, আনন্দধারা এবং মুক্তমঞ্চের বুকস্টলে এ বইটি পাওয়া যাবে।
শাখাওয়াৎ নয়ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর প্রকাশিতব্য উপন্যাসের প্রচ্ছদ শেয়ার করে, বইটি সম্পর্কে লিখেছেন – “ আমরা যদি কয়েকটি মার্বেল একসাথে ছুড়ে দিই, সব মার্বেল কি একই গন্তব্যে পৌঁছায়? না। কেন পৌঁছায় না? কোন মার্বেলটি কতদূর যাবে, তা যেমন মার্বেল নিজে জানে না; আবার যে ছুড়ে দেয়, সে-ও জানে না। তাহলে কে জানে? মানুষের জীবনও কি এ রকম অনিশ্চয়তার আধার?
বোহেমিয়ান উপন্যাসের আখ্যান কয়েকজন বন্ধুর বেদনাবৃত জীবনের গল্প। জীবনপথে গড়িয়ে যেতে যেতে কেউ সিডনি, প্যারিস, আমস্টারডাম, ঢাকা ও কলকাতায়; আবার কেউ রাশিয়ান রোলেটে বন্দী, গুলির মুখে মৃত্যুঘরের নামতা পড়ছে।”
বোহেমিয়ান এর প্রচ্ছদ শেয়ার করার পর পরই দেশে বিদেশে বিপুল সংখ্যক পাঠকের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। ইতোমধ্যে প্রায় শতাধিক উৎসাহী পাঠক ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাসের প্রচ্ছদসহ ফ্ল্যাপের লেখাটি শেয়ার করেছেন এবং একই সাথে নয়নের লেখা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা এবং প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাস সম্পর্কে শাখাওয়াৎ নয়নের পাঠকবৃন্দের মধ্যে কয়েকজনের উক্তি নিম্নরূপ :
কবি এবং বাংলা ট্রিবিউনের সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ সোহাগ বলেন- বোহেমিয়ান উপন্যাসের ক্যানভাস বৈশ্বিক পরিসরে। বাংলা ভাষায় এমন উপন্যাস ইতোপূর্বে আমাদের পড়া ছিল না। বোহেমিয়ান একইসঙ্গে বহু ঘটনা তথা গল্পের সন্নিবেশ, অপরদিকে এর রয়েছে দার্শনিকবোধ। যা সব শ্রেণির পাঠককে আন্দোলিত করবে।
সানফ্রান্সিসস্কো স্টেইট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডক্টর মাহমুদ হোসাইন লিখেছেন, ‘ভ্রমণের দ্রাক্ষারসে আমি বুঁদ হয়ে থাকি সারাক্ষণ। বিবেক বিসর্জন দিয়ে, লজ্জার হনুমানকে সীতার সাথে পাঠাই নির্বাসনে, যখন জাহাজের হুইস্যাল মগজে বেজে ওঠে। নতুন মাটি আর মানুষের আলিঙ্গনের তৃষ্ণায় আমি গৃহত্যাগী হই। মিশে যাই মানুষের স্রোতে, কথা বলি নতুন মানুষের সাথে। শিল্পকলা আর বর্তমান জনারণ্যই আমাকে প্রকৃতি বা ইতিহাসের চেয়ে বেশী টানে। ওদের জীবনের গল্প আর পরিবেশের গভীরে আমি ডুব দিতে চাই। নিরিবিলি উপভোগ করি জীবনের বৈচিত্র। মগজের ভেতরে জমা করি গল্প। ওদের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পরিবেশ, সম্পর্কের জোয়ারভাটা নিয়ে ছবি আঁকি গল্পের নক্শীকাঁথার। তারপর বোবা নৈঃশব্দ আমাকে গ্রাস করে। কুঁড়েমির গহ্বরে অযত্নে হারিয়ে যায় ঐ মুখগুলো। লেখার স্বপ্নটা সিগারেটের ধোঁয়ায় মিলিয়ে যায়। শুধু দীর্ঘশ্বাস রয়ে যায় সারা বুক ভরে।
তখনই লেখার অশ্বারোহী, স্নেহাধিক নয়ন তার শক্তিশালী লেখনীতে প্রকাশ করছেন বোহেমিয়ান। শিল্পকলা, মানুষ, তার জীবন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, ভালোবাসা – যা যা আমি ভেবেছিলাম, ও কলমের তুলিতে এঁকে দিল সবই। ওর মেধা, পরিশ্রম, সৃষ্টিশীলতাকে শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিলাম। এমন লেখার জন্যইতো আমার আর লেখা হয়ে ওঠেনি!’
প্যারিস টাইমসের সম্পাদক এবং দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক রিভিউ কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খোকনঃ ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাসটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তার পরও এর প্রথম পাঠক আমি। লেখক লিখেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসে, আর আমি ইতোমধ্যে দুবার পড়ে ফেলেছি সুদূর ফ্রান্সের প্যারিসে বসে। আজব ঘটনা বটে!
২০০৯ সাল। সবে প্রথম আলোয় জয়েন করেছি। তখন প্রথম আলোয় প্রায়ই গল্প ছাপা হতো সিডনিপ্রবাসী লেখক পিএইচডি অধ্যয়নরত গবেষক শাখাওয়াৎ নয়নের। তাঁর গল্পগুলো পড়ে এতটাই মুগ্ধ হতাম যে পত্রিকায় ছাপা হওয়ার আগের রাতেই মেকাপ করা পাতায় সেটা পড়ে নিতাম। এরপর একে একে শাখাওয়াৎ নয়নের প্রকাশিত সব কটি বই এডিট করার সুযোগ পাই। ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি প্রথম এডিট শেষ করে ইতোমধ্যে দ্বিতীয় এডিট শেষের পথে।
সবশেষে ‘বোহেমিয়ান’ বিষয়ে দুটি কথা না বললেই নয়। গত ২৩ বছরে ৮০০টির অধিক বই ও ম্যাগাজিন এডিট ও প্রুফ দেখেছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের এক সংযোজন হতে যাচ্ছে এই উপন্যাস। আমি যেহেতু বইটির প্রথম পাঠক তাই বলতে পারি, ‘বোহেমিয়ান’ পড়ে পাঠক যতটা হাসি-আনন্দে বিগলিত হবেন, ঠিক ততটাই বেদনার কষ্টে নীল হবেন; যতটা আশ্চর্যান্বিত হবেন, তার চেয়ে বেশি ঘোরের মধ্যে আটকে যাবেন। আমি নিজেই আটকে গেছি ঘোরের মধ্যে।
সিডনি প্রবাসী কবি শামীম কাওসার লিখেছেন, “উনি চমৎকার লেখেন। কিছু লেখা, কিছু লাইন, কিছু শব্দ, কিছু উপমা ইনি তীক্ষ্ণ ছুরির মতো ব্যবহার করেন। মনের গভীরে গিয়ে আটকে যায়। দাগ কেটে রয়ে যায়। এমন কেউ আগে লেখেনি, বলেনি। নিশ্চিত থাকতে পারেন। গতানুগতিক লেখা উনি লেখেন না। সাধারন লেখা, সাধারন কথার অসম্ভব সুন্দর করে উপস্থাপনা করেন। উনার লেখা পড়ে তৃপ্তি আছে। লেখা একদমেই পড়তে হয়, কিন্তু হারায় না। আবেশটা থেকে যায় বহু বহুদিন। পড়ে দেখতে পারেন উনার পরবর্তী বই। বলতে পারি, তার লেখার ভক্ত হয়ে যাবেন, যাবেন-ই।”
মেহেরুন লিলিঃ “লেখকের প্রথম বইটা পড়েছিলাম ২০১২ সালে। “শেষ হইয়াও হইলো না শেষ” মানে ছোটগল্পের সংকলন। পড়ে মনে হয়েছিল- ইনি অনেক অল্প বর্ণনায় পাঠকের মনে গভীরতম আবেগের অনুভূতি পৌঁছে দিতে পারেন। এবার প্রকাশিত হচ্ছে নতুন উপন্যাস “বোহেমিয়ান”। মুগ্ধ হবার অপেক্ষায় রইলাম!”
লেখক এবং অনুবাদক ফজল হাসানঃ ‘বোহেমিয়ান’ নামটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারোর চোখের সামনে ভেসে উঠবে উসকোখুসকো চেহারা আর আলুথালু পোশাক পরিহিত এক বা একাধিক ছন্নছাড়া মানুষের ছবি। সেসব মানুষেরা ঘুরে বেড়ায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় । আমরা জানি, আমাদের প্রত্যেকের ভেতর জগতে বাস করেন একজন বোহেমিয়ান, যিনি কখনো সরব, আবার কখনো নিরব। আমার বিশ্বাস, শাখাওয়াৎ নয়নের ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাস পড়ার সময় পাঠকরা নিজেদের সঙ্গে উপন্যাসের যে কোন চরিত্রের সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন। ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাস পাঠক নন্দিত হোক – এ কামনা করি ।
কবি মাহমুদা রুনুঃ শাখাওয়াৎ নয়ন স্বনামধন্য লেখক । তার লেখা পড়লে মনে হয় উপন্যাসের কালের সাথে বেড়ে ওঠার, সময়ের মিল খোঁজার এবং মিল পেয়ে যাবার একটা নিবিড় সুত্র থাকে । নতুন উপন্যাস পড়ার আগ্রহ রইলো। সংগে শুভকামনা নিরন্তর ।
বোহেমিয়ান উপন্যাসের প্রকাশক কবি মাহাদী আনামঃ পৃথিবীতে চারজন পরিব্রাজকের সাথে আমার দেখা হয়েছে- হিউয়েন সাং, মার্কো পোলো, ইবনে বতুতা এবং শাখাওয়াৎ নয়ন। ‘বোহেমিয়ান’ এ এক সুদীর্ঘ আনন্দময় ভ্রমণ! যদি আপনার স্বাদ নেয়ার বোধ এবং দক্ষতা থাকে- আপনি চেষ্টা করতে পারেন।
কবি আঁখি আলমঃ বোহেমিয়ান এর ফ্ল্যাপের লেখা আবৃতি করে ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন। পাঠকদের ভালোবাসার উত্তরে শাখাওয়াৎ নয়ন লিখেছেন, ‘জানি না, ঝিনুকের মতো বেদনা দিয়ে মুক্তো বানাতে পেরেছি কি না; তবে আমার ব্যথার পূজা ব্যর্থ হবার নয়’।