আজ শনিবার মধ্যরাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বঘোষিত খুনি ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত আব্দুল মাজেদের। কারাগারে আইজি প্রিজন, সিভিল সার্জন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে জল্লাদ আসামী আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করে। দিনব্যাপী প্রস্তুত করা হয়েছিলো কেরানীগঞ্জ কারাগারের মঞ্চ, জল্লাদ এবং মঞ্চের মহড়াও। এর আগে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে বলেছিলেন, আসামী ফাঁসির উপযুক্ত।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার মিরপুর এলাকা থেকে পুলিশ আব্দুল মাজেদকে গ্রেফতার করে। তিনি দীর্ঘদিন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে গুঞ্জন উঠেছিলো। পরদিন বুধবার বিশেষ আয়োজন করে আদালত বসিয়ে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর আসামী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন। তার ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার মধ্যরাতে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

মাজেদ সেই লোক যারা ১৯৭১ সালে অর্জিত গণবিপ্লবকে ১৯৭৫ সালে একটি প্রতিবিপ্লবের মধ্য দিয়ে শেষ করে দেয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবার পরিজনসহ হত্যা করেই থামেনি। বাংলাদেশকে একটি পাকিস্তানি রাষ্ট্র তৈরীর নীলনক্সা চালু করতে তারা ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে ঢুকে ৪ নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
এই ক্যাপ্টেন মাজেদ ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট হত্যার নীলনক্সাই শুধু করেনি হত্যার দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দাযিত্বে ছিলেন তিনি, নূর চৌধুরী ও মোসলেউদ্দীন রিসালদার। তবে মাজেদ এত বড় মাপের অপরাধী যে তিনি জাতীয় ৪ নেতা হত্যায়ও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এরপরই আসে জিয়া প্রসঙ্গ।জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তার মতো ঠান্ডা মাথার ভয়ংকর খুনীর কথা চিন্তা করা যায়? তিনি এসব খুনীদের নিরাপদে রেখেছেন, দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন কেন? একটা দেশের স্থপতিকে হত্যার বিচার না করে খুনীদের আশ্রয় দেয়ার পরেও বলবো ১৫ আগস্টের কুশীলব তিনি নন?
এগুলো একটা বিষয় আরেকটা জাসদের ভূমিকা। জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যা চায়নি তারা বঙ্গবন্ধুকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। সেটা মানলাম কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাদের বিপ্লবী কর্মকান্ড কোথায় গেলো।পিটার কাস্টার্স জাসদ গঠনের জন্য কোন কার্যক্রম চালিয়েছিল কিনা সেটা পরিস্কার করা জরুরি। আর সাথে বোঝা দরকার জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করার পরও তিনি কেন কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দিলেন। সোজা কথায় বলা যায় মেজর জিয়া বেঈমানী করেছিলেন। যে জিয়া মুজিবের খুনীদের প্রশ্রয় দিলো তার সঙ্গে তাদের এত কি সখ্যতা ছিলো যে তাকে মুক্ত করতে হলো। সৈনিক সংস্থার সৈনিকরা ব্যবহার হয়েছিল কোন কাজে? খালেদ মোশারফ কি করেছিলেন? কেন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নেয়ার কথা বলে প্রথমেই তার খুনীদের থাইল্যান্ড যেতে দিলেন? তাহলে প্রতিশোধ নিতেন কাদের উপর। নাকি সিএনসি হওয়ার বাসনায় তার চার দফা তাকে বাঁচতে দেয়নি। লিফসুলুইজের কথা কি সঠিক? বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্যে রক্ষীবাহিনী কেন চুপ থাকলো।কেন আওয়ামীলীগ মাঠে নামলো না? এসব প্রশ্নের সমাধান জরুরি। নতুবা পরবর্তী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু হত্যাকে ঘিরে যত চক্রান্ত তার কিছুই জানবে না।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় যতই বিদেশী চক্রান্ত থাকুক তাকে হত্যা করেছে দেশীয় লোকজন। কত টাকার জন্য, কত লোভে একাজ করে তারা কত ধনী হযেছিল। তাদের পৈশাচিক কর্মকাণ্ড দেশের কত ক্ষতি হয়েছিল শেষবারে মাজেদের মুখ থেকে জানা গেলে ভালো হতো।জানা যেত অনেক কথা তা কি দেশের আইন শৃঙ্খলাবাহিনী জেনেছে?
আর যাই হোক এইসব খুনীদের ফাঁসি দিলেই বিচার হয় আমার তা মনে হয় না। পক্ষান্তরে আমাদের মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ে এদের খবর প্রচার করতে। এ সংস্কৃতি আরও কত যুগ চলবে কে জানে ?
দীপংকর গৌতম
কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক।জন্ম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে কর্মরত ।বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতির সাংস্কৃতিককর্মকান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত।কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, গবেষণাসহ প্রকাশিতগ্রন্থ ১৬টি।
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। ই-মেইল : dipongker@gmail.com