প্রশান্তিকা রিপোর্ট: বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “বাংলাদেশকে সব দিক দিয়ে একটি সার্থক দেশ গড়ার পেঁছনে জনগণ ও সরকারের সাথে প্রবাসিরাও অংশ নিচ্ছেন এবং এটিকে সোনার বাংলায় পরিণত করার দায়িত্ব আপনাদের প্রবাসিদেরও।” গত ১৬ নভেম্বর শনিবার সিডনিতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়া’র আয়োজনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মন্ত্রী একথা বলেন।
সিডনির রকডেলের বনলতা রেস্টুরেন্টের হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় অস্ট্রেলিয়া সফররত বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি প্রধান অতিথি এবং অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সুফিউর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি সিরাজুল হক, সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক পিএস চুন্নু।

বানিজ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে প্রথমেই হাত তালি দিতে নিষেধ করেন, কেননা এটি জেলহত্যা দিবসের শহীদ জাতীয় চার নেতাকে নিয়ে মর্মস্পর্ষী আলোচনা অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, “আমি এবং আমার বাবা একসাথে যুদ্ধে গিয়েছি। আমার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ সোলজার, ৭১ এ তাঁর ট্রেনিং নেবার দরকার হয়নি।
তিনি বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো সেদিনই ‘জয় বাংলা’ পরিবর্তন হয়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ হয়ে গেলো, ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়ে গেলো ‘রেডিও বাংলাদেশ’, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হয়ে গেলো পাকিস্তান পন্থী বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, জাতীয় চার নেতা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য দক্ষতায় পরিচালনা করেছেন। আর বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশকে ব্যর্থ করার জন্য চার নেতাকে হত্যা করা তাদের জরুরী ছিলো।

বানিজ্য মন্ত্রী বলেন, আপনারা বিদেশে আছেন কিন্তু ফেলে আসা দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার দায়িত্ব আপনাদেরও। শুধু শেখ হাসিনার ওপর ভরসা করে বসে থাকলে হবেনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ বছর ধরে প্রতিদিনে ১২থেকে ১৪ ঘন্টা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জানেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুললেই আমরা সবচেয়ে বেশি সফলকাম হবো।
তিনি বলেন, শক্তিশালী দেশ ভারত থেকেও সাতটা সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। পাকিস্তান থেকে আমরা সব সূচকে এগিয়ে। আমাদের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশ হতে চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনার সুফিউর রহমান বলেন, জেলহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ঘটনার বিচার করে সকল আসামীর শাস্তি দিয়ে একটা আসু সমাধান জরুরী হয়ে পড়েছে। নইলে এই অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেশদ্রোহীরা আরেকটি বড় অপরাধের জন্ম দেবে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তারা ভেবেছিলো এই চার নেতাকে হত্যা করে দেশকে নেতৃত্ব শুন্য করতে হবে। যাতে করে তারা ( খুনিরা ) একটা অন্ধকারের নেতৃত্ব দিতে পারবে এবং তারা তাই করেছেন।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগ সভাপতি সিরাজুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী জাতীয় চার নেতাকে খুনি মোশতাকেরা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। একদিকে প্রধানমন্ত্রীত্ব অন্যদিকে মৃত্যু। তাঁরা সেই মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ায় আওয়ামীলীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে সিরাজুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া একটাই দল, সেটার নেতৃত্বে রয়েছেন সিরাজুল হক এবং পিএস চুন্নু। এখানে কোন বিভাজন নেই।
সঞ্চালক ও আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক বলেন, খুব অল্প সময়ের ঘোষণায় এমন প্রানবন্ত অনুষ্ঠানে আসার জন্য আগত অতিথি বৃন্দ ও দর্শকদের ধন্যবাদ। তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীকে একাত্তরের রনাঙ্গনের সাহসী যোদ্ধা বলে অভিহিত করেন এবং তাঁর কাছে সেই সময়ের অভিজ্ঞতাও শুনতে চান।
অনুষ্ঠানে শোকাবহ জেলহত্যা দিবসের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়।৩ নভেম্বরে জেলহত্যায় শহিদ জাতীয় চার নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারী গিয়াস উদ্দিন মোল্লা। এরপর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট পারভীন খায়ের এবং ম্যাকুয়ারী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান কচি, মোহাম্মদ আলী সিকদার, একেএম হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেউর রহমান খুশবু, এসএম দিদার হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক রিজভী শাওন, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আশরাফুল আলম লাবু, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার রিপন, আওয়ামী যুবলীগ অস্ট্রেলিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম হাফিজ, সিডনি আওয়ামীলীগ শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল কস্তা, সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন লাল্টু, সিডনি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ফয়সাল আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, মো. জাহিদ হোসেন, জুয়েল হাওলাদার, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক বকুল খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি জাকারিয়া আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ অস্ট্রেলিয়ার সাংগঠনিক সম্পাদক রাহান প্রমুখ ।
এছাড়া ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও নিউজ মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।