বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে করোনার টিকা !

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্কঃ ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশের করোনার টিকা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের এই টিকা নিতে চায় কি না, তা ১৮ জানুয়ারির মধ্যে জানাতে হবে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের ১৯২টি সদস্যদেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জানুয়ারির শেষ নাগাদ বা ফেব্রুয়ারিতে কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে স্বল্পসংখ্যক টিকা দেওয়া হবে। তারা বলছে, এটা টিকা বিতরণের ‘প্রথম ঢেউ’। এই টিকা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একা নিতে পারে না। এ চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছ থেকেই আসবে।’
জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক ও যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার বাণিজ্যিক নাম ‘কমিরনাটি’। যুক্তরাজ্য প্রথম এই টিকার অনুমোদন দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও টিকাটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এখন টিকাটির প্রয়োগ চলছে। এটি প্রয়োগের জন্য যে সুই-সিরিঞ্জ দরকার হয়, তা প্রচলিত সুই-সিরিঞ্জের চেয়ে আলাদা। এই টিকা তীব্র শীতল তাপমাত্রায় রাখার দরকার হয়। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা না হলে টিকার গুণ নষ্ট হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বল্পমূল্যে টিকা দেওয়ার বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং সংক্রামক রোগের টিকা তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংস্থার (সিইপিআই) নেতৃত্বে করোনার টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স গড়ে উঠেছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ইউনিসেফ, বিশ্বব্যাংকসহ অনেক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংস্থা এ উদ্যোগে অর্থসহায়তা দিচ্ছে। স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশকে কোভ্যাক্স থেকে টিকা সহায়তা দেওয়া হবে।
কোভ্যাক্সের পক্ষে সদস্যদেশগুলোকে চিঠি দিয়েছেন গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেথ বার্কলি। তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে তিনি বলেছেন, ওষুধ কোম্পানি ফাইজার এবং যেসব দেশ ফাইজারের টিকা সংগ্রহ করেছে, তাদের সঙ্গে কোভ্যাক্স টিকার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। তার ভিত্তিতে কোভ্যাক্স জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারিতে সদস্যদেশগুলোকে টিকা দিতে পারবে।
চিঠিতে কিছু শর্তের কথা উল্লেখ আছে: এই টিকা ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে, জাতীয় করোনা টিকা পরিকল্পনায় একাধিক ধরনের টিকা ব্যবহারের ইচ্ছার প্রকাশ থাকতে হবে। এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইজারের টিকার অনুমোদন করাতে হবে। তার সঙ্গে ফাইজারের দায়মুক্তির একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইজারের টিকার জন্য যে ধরনের ‘কোল্ড চেইন’ বা হিম শৃঙ্খল দরকার, তা বাংলাদেশে নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কিছু রেফ্রিজারেটর আছে, যেখানে তীব্র শীতল তাপমাত্রায় এ ধরনের টিকা রাখা সম্ভব। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। এই টিকা আনলে ঢাকা শহরের কিছু মানুষকে দেওয়া সম্ভব হবে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ন্যায্যতার কথা বলা হচ্ছে, তা এ ক্ষেত্রে বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।’

জানা গেছে, বিএসএমএমইউ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) এ ধরনের রেফ্রিজারেটর আছে। তা ছাড়া আরও প্রতিষ্ঠান ও বড় বড় হাসপাতালে এ ধরনের রেফ্রিজারেটর থাকার সম্ভাবনা আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, চিঠি পাওয়ার পর থেকেই কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রেফ্রিজারেটর কেনা সম্ভব কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহায়তা চাইবে। আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে টিকা বিষয়ে একটি সভা আছে, সেই সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments