আতিকুর রহমান শুভ : খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, সিডনি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নিমন্ত্রিত হয়ে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। ছবির নাম- Here out west. আমার সঙ্গে ছিলেন মুক্তমঞ্চ সম্পাদক আল নোমান শামীম। ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমাদের অর্ক। এটি ছিলো সেই উৎসবের উদ্বোধনী ছবি। শুধু অর্ক ছাড়া ছবির অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকুশলী, পরিচালক সকলেই সেদিন উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তারা। সেখানে অর্ক ছিলোনা কিন্তু তাঁর প্রশংসা শুনলাম প্রায় সকলের মুখে। সেদিন খুব গর্ব হচ্ছিলো আমাদের।

প্রশান্ত পারের বাঙালি দ্যুতি সেই অর্কের আজ জন্মদিন। প্রতিবার তাঁর ঝুলিতে যোগ হচ্ছে একেকটা নতুন সিনেমা কিংবা মিনি সিরিজ। ‘ হেয়ার আউট ওয়েস্ট’ সিনেমাটিতে সিডনির পশ্চিমাঞ্চলীয় সাবার্বগুলোতে বসবাসকারী মাইগ্রেন্টদের জীবনী ফুটে ওঠে। ৮টি গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছিলো পূর্ণদৈর্ঘ সিনেমাটি। একটি গল্পের চিত্রনাট্য অর্কের লেখা এবং ছবিটির প্রধান ভূমিকায় অর্কের অভিনয় সকলকে মুগ্ধ করে।
আজ জন্মদিনের প্রাক্কালে জানতে পারলাম শীঘ্রই আসছে সিনেমাটির দ্বিতীয় সিক্যুয়াল। বরাবরের মতো এবারও চিত্রনাট্য লিখেছে অর্ক দাশ। ছবিটির নাম এখনও ঘোষিত হয়নি। তবে এবছরের শেষের দিকে এটির মুক্তি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অর্ক জানান।

হলিউড খ্যাত তারা মরিসের সাথে অর্ক কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন Animal out of paper নামের এক নাটকে। মঞ্চ দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু হলেও তিনি এখন নিয়মিত হলিউড ফিল্মে অভিনয় ও শর্ট ফিল্ম নির্মাণে। এর আগে বলিউডের একটি সিনেমায় ক্রিকেট তারকা ব্রেট লী’র সাথে অভিনয় করেছেন ‘ আনইন্ডিয়ান’ ছবিতে। তারপর নিকোল কিডম্যান, ডেভ প্যাটেলের সাথে করেছেন হলিউডি ফিল্ম দ্য লায়ন। শর্ট ফিল্মে অভিনয় ছাড়াও নিজেই তৈরী করেছেন স্বল্পদৈর্ঘ নাটক ও ছায়াছবি।
বাংলাদেশী অষ্ট্রেলিয়ান অর্কই প্রথম অভিনেতা যে হলিউডে উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে কিংবা ওর পরিচালিত ছবি খানা খাজনা সিডনি, মেলবোর্ণে প্রদর্শনের পরে সুদূর কানেও প্রদর্শিত হয়। অর্ক’র ছবি সিডনিতে জিতে নেয় একাধিক প্রথম পুরষ্কার এবং অর্ক হয় সেরা পরিচালক। ডিজনি ফিল্ম মুলানের মতো বিগ বাজেটের ছবি, অস্কারের জন্য মনোনীত দ্য লায়ন ইদানীং চলছে আরো কয়েকটি বড় কাজ। অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনের জন্য আট সিরিজের একটি ফুড শো করেছেন অর্ক। ABC চ্যানেলের এই ফুড শোটির শুরু বাংলাদেশী খাবার দিয়ে। যুক্ত আছে কুর্দিস, আফগান খাবার সহ নানা দেশের রসনা বিলাস। বাংলাদেশী খাবারের জন্য তিনি পুরো ফিল্ম টিম নিয়ে সিডনির ছোট্ট বাংলাদেশ খ্যাত লাকেম্বায় শুটিং করেছেন। তাঁর ক্যামেরায় লাকেম্বায় বাংলাদেশী সকল দোকান, আমাদের প্রশান্তিকা বইঘরসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়।
অর্ক’র বাবা সিডনিবাসী প্রখ্যাত কলামিস্ট ও ছড়াকার অজয় দাশগুপ্ত। তাঁর মা দীপা দাশগুপ্ত। বাবা ও মায়ের একমাত্র সন্তান অর্ক’র জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ছেলেবেলায় বাবা ও মায়ের সাথে তাঁর সিডনিবাস শুরু হয়। সিডনির বিখ্যাত ম্যাকুয়ারি ইউনিভার্সিটিতে তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। অভিনয়, চিত্র নির্মাণই তাঁর প্রধান পেশা। অজয় দাশগুপ্ত আজ এক লেখায় বলেন, “ জন্মদিনে প্রচার বিমুখ অর্ক দাশগুপ্ত সেলুলয়েডের অর্ক দাশের জন্য সকলের আর্শীবাদ ও দোয়া প্রার্থনা করি।”
বেশ অনেক বছর আগের কথা, অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনে একটি বিজ্ঞাপন দেখছিলাম। কোন একটা সুপারশপে কিউ দিয়ে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছে মানুষ। হঠাৎ এক যুবক হাতে দুধের বোতল, বগলের নিচে ব্রেড, আরেক হাতে শব্জি বা কিছু একটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কাউন্টারে জিনিশগুলো স্ক্যান করে তাঁর সব হাত বুক্ড। এখন দাম দেবে কিভাবে ? তখন কোনমতে মোবাইলটা বের করে এফটস মেশিনে ছুঁয়ে দিলো সে । টিং করে একটা আওয়াজ হলো, পেমেন্ট ডান, ট্যাপ এন্ড গো। ব্যাংকের একটি বিজ্ঞাপনের সেই মূখ্য চরিত্রটি ছিলো অর্ক। আমরা এদেশের ড্রইংরুমেও এভাবে অর্ককে পেয়েছি।