সমসাময়িক ব্রিটিশ দার্শনিক এ্যালান দো বোঁতো তাঁর ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ‘এসেজ ইন লাভ’ বইটিতে মানব-মানবীর শারীরিক ও আত্মীক সম্পর্কের সামগ্রিক একটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যা বলেছিলেন তার অর্থটা দাড়ায় এমন; অনেক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী সারাটি জীবন একই বিছানাতে রাত্রি যাপন করলেও, মানসিক বা আত্মীক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বিরাট একটা দূরত্ব বিরাজ করে। নিজেদের গভীরতম প্রদেশকে স্পর্শ করতে তারা প্রায়শই ব্যর্থ হন। প্লেটোনিক প্রেমের মতো দূরত্বটাকে বজায় রেখেও ভালোবেসে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা একরকম আবার শারীরিক দূরত্বে কার্পণ্য না থাকলেও মানসিক দূরত্ব হতে পারে অসীম। ভালোবাসার সম্পর্কের এই বহুমাত্রিক জটিলতার জালের মধ্যে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা অনেক সময়ই বেশ অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোনো কোনো দম্পতির জীবনে ভালোবাসা এমন এক বিশেষ অনুভূতি, যে তারা শরীর ও মনের উর্ধ্বে গিয়ে, পরস্পকে আপন করে নিতে জানেন, শুধুই সম্পর্কের খাতিরে।

যদিও মনসমীক্ষণে অনেক সময় হারিয়ে যায়, ভালোবাসার মূল অর্থ বা ব্যাখ্যা। যেমন আমেরিকার প্রখ্যাত লেখক এবং আত্ম উন্নয়নের পথ প্রদর্শক ডেল কার্নেগি এক সময় বলেছিলেন ভালোবাসার একমাত্র অবস্থান হতে পারে স্বার্থহীনভাবে ভালোবাসা। কোনো ভালোবাসার সম্পর্ককে হয়তো মোটা দাগে কোনো নামের খাঁচায় আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। সেটা এমন এক আকার ধারণ করে যে, দিনের শেষে সেটা শুধু সম্পর্কই থাকে না হয়ে যায় ইতিহাস। প্রজন্মের প্রেমকি-প্রেমিকারা অনুপ্রেরণা পেতে পারে সেই ইতিহাস থেকে। তারা স্বপ্ন দেখতে শেখে ভালোবাসার মানুষের সাথে জীবন কাটানোর। যদি পুরুষের ভালোবাসা নিখাদ হয় নারীর প্রতি তবে হয়তো তাজমহলের মতো কোনো সৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু নারীর ভালোবাসা পুরুষের জন্য, নিজের ধ্বংসটাই কেবল ডেকে আনে এবং সে ঘটনা যদিও বেশ দুর্লভ। এই ব্যাখ্যার কোনো মাপকাঠি নেই, তবে আছে ইতিহাস। শিল্পীরা ইতিহাস সৃষ্টি করেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। যেমন শিল্পী ফ্রিদা কাহলো (১৯০৭-১৯৫৪) এবং দিয়েগো রিভেরার (১৮৮৯ -১৯৬৪) সম্পর্কটি।

১৯২২ সালে দিয়েগোর সাথে ফ্রিদার প্রথম দেখা হয় যখন তিনি ফ্রিদার স্কুলের দেয়ালে, দেয়াল চিত্র অঙ্কন করতে গিয়েছিলেন। কিশোরী ফ্রিদা লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়েগোর অঙ্কন প্রক্রিয়া দেখতেন। মেহিকোর বেশ প্রসিদ্ধ স্কুল সেটি, মাত্র ৩৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ফ্রিদাও ছিলেন একজন এবং তখন ফিদ্রার সঙ্গে তাঁর এক সহপাঠীর প্রেম ছিলো। কিন্তু ফ্রিদা দিয়েগোর সাথে সাক্ষাতের পরে দিয়েগোর প্রতি একধরনের আকর্ষণ অনুভব করেন। একদিন ফ্রিদা দিয়েগোর অনুমতি নিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা বসে, মুগ্ধ নয়নে দিয়েগোর চিত্রাঙ্কন দেখেন। দিয়েগোও মুগ্ধ হন এই কিশোরীর অদ্ভুত আচরণ দেখে। তারও আগে, ফিদ্রা কাহলোর বয়স যখন ১২ বছর ছিলো, তখন দিয়েগো রিভেরা ইতিমধ্যেই একজন প্রসিদ্ধ শিল্পী, কিশোরী ফ্রিদা কৈশোরের হেয়ালী ভরেই বলেছিলেন তিনি দিয়েগোর সন্তান তাঁর শরীরে বহন করতে চান। নিয়তি তাঁর সেই ছেলেমানুষী ইচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত পূরণ হতে না দিলেও দিয়েগোর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গিয়েছিলেন ফ্রিদা। দিয়েগো তাঁদের এই প্রথম সাক্ষাৎকে উল্লেখ করে তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন – “আমি তখনও জানতাম না কিন্তু ততদিনে ফ্রিদা আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতায় পরিণত হতে যাচ্ছে। আর সাতাশ বছর পরেও আমার জীবনে তাঁর সেই অবস্থান তেমনই ছিল তাঁর মৃত্যুর মুহূর্ত অবধি ।”
আজ বিংশ শতাব্দীর এই দুই বিখ্যাত শিল্পীর মৃত্যুর অর্ধশত বছর পরে, তাদের সম্পর্কের সময়রেখাকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, কিভাবে নিয়তি তাদের গন্তব্যকে পূর্ব নির্ধারিত করেছিলো। ফ্রিদা কাহলোর স্কুলে দিয়েগো রিভেরা যখন দেয়াল চিত্রটি নির্মাণ করছিলেন তখন ফ্রিদার বয়স ছিলো ১৭ বছর এবং কিছুদিনের মধ্যেই ফ্রিদা ভয়ংকর একটি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। যদিও তিনি একজন চিকিৎসক হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু দুর্ঘটনার পরে বিছানায় বিশ্রামে থাকার সময় ছবি আঁকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। তিরিশটির মতো অস্ত্রপচারের পরও যখন সম্পূর্ণভাবে সুস্হ হতে পারেনি। বেশ কিছু দিন পরে ফ্রিদা যখন কিছু দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তখন তিনি দিয়েগোর নিকট যান, দিয়েগোকে তাঁর শিল্পচর্চার ক্রমধারা দেখান এবং দিয়েগোর কাছ থেকে সমালোচনা প্রত্যাশা করেন। দিয়েগো সেদিনই বুঝে গিয়েছিলো ফ্রিদা কাহলো কোনো সাধারণ শিল্পী নন। দিয়েগো রিভেরা সেই সময় মেহিকোর একজন প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয় শিল্পই ছিলেন তিনি রাজনৈতিক ভাবেও সক্রিয় ছিলেন। এবং তাঁর বহুগামিতার কথা সমাজে সবার জানা। যদিও তিনি তিনি বিবাহিত ছিলেন এবং কয়েকটি সন্তানের পিতা ছিলেন তবুও দিয়েগো এবং ফ্রিদা একে অন্যের প্রেমে পড়েন। সর্বোপরি দিয়েগো ফ্রিদার থেকে বয়সে ২১ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রণয়ে কোনো বাধা হয়ে দাড়ায়নি তাদের বয়সের ব্যবধান।

অতঃপর ১৯২৯ সালে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফ্রিদার পরিবারের মত ছিলো না এই সম্পর্কে; প্রথমত দিয়েগোর চারিত্রিক দোষ ক্রটির কারণে এবং দ্বিতীয়ত বয়সের ব্যবধানের কারণে। তাদের অগোচরে তাদের জুটিকে নানা ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক নামে ডাকা হতো যেমন: কবুতর এবং হাতির জুটি, বিউটি এ্যান্ড দ্য বিস্ট ইত্যাদি। কিন্তু ফ্রিদা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছিলেন দিয়েগোকে। এবং তাঁদের দুজনেরই শিল্পকলার জন্যে ভালোবাসা ছিলো অসীম। তাঁদের রাজনৈতিক ভাবধারার মিল ছিলো, তাঁরা দুজনই ছিলেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবী।
আমরা ফ্রিদার শিল্পকলাতে যেমন দিয়েগোর উপস্হিতি দেখি তেমনি, দিয়েগোর শিল্পকলাতেও ফিদ্রার উপস্হিতি বর্তমান। দু’জন দু’জনকে তাঁরা সহকর্মী হিসেবে সহযোগিতা করলেও তাদের সম্পর্কের মধ্যে ছিলো নানা ধরনের টানাপোড়েন। ফিদ্রার দুর্ঘটনার জন্য, তাঁর শরীরে সন্তান ধারণের কোনো ক্ষমতা ছিলো না, তারপরেও ফ্রিদা বেশ কয়েকবার সন্তান ধারণের চেষ্টা করেন এবং ব্যার্থ হন। তাঁর সেই ব্যর্থতা তাঁকে দেয় তীব্র মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণা । তবে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা গুলোকে চিত্রায়িত করে গেছেন তাঁর শিল্পকলায়। তাঁর কষ্টগুলোকে রূপান্তরিত করেছেন সৃষ্টিতে।

১৯৩৯ সালে দিয়েগোর অসংখ্য নারী সম্পর্কের জন্য এবং ফ্রিদার নিজের বোনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য ফ্রিদা দিয়েগোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে কিন্তু তারা খুব বেশী দিন দু’জন দু’জনের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেনি। পরের বছরেই তারা পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফ্রিদা একবার তাঁর দিনলিপিতে লিখেছিলেন; তাঁর জীবনে দুটো বড় দুর্ঘটনা একটি হলো কৈশোরে ঘটে যাওয়া সেই সড়ক দুর্ঘটনা অন্যটি হলো দিয়েগো রিভেরার সাথে সম্পর্ক। দিয়েগো তাঁর জীবনের বড় একটি হতাশার জায়গা সৃষ্টি করলেও ফ্রিদা দিয়েগোকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।
দিয়েগো ফ্রিদাকে তাঁর কাজে আশ্রয় দিয়েছেন অনেকবার, তাঁর মহাকাব্যিক দেয়াল চিত্রগুলোতে ফ্রিদাকে তিনি দেখিয়েছেন একজন সাহসী এবং প্রগতীশীল নারী হিসেবে। সে সব চিত্রকলাগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। আবার অন্যদিকে খুব ব্যক্তিগতভাবে তিনি ফ্রিদাকে এঁকেছেন প্রিয়া রুপে। দিয়েগো ফ্রিদার একটি প্রতিকৃতি রেখা চিত্র অঙ্কন করেন এবং সেটাকে একটি পরাবাস্তব রূপ দেবার চেষ্টা করেন।
দিয়েগো ফ্রিদার মৃত্যুর পরে অনুধাবন করতে পারেন যে তিনি কত গভীরভাবে ফ্রিদাকে ভালোবাসতেন । তিনি ফ্রিদার একটি রেখা চিত্র নির্মাণ করেন, তাতে তিনি তাঁর হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দেন। চিত্রের নীচে লিখে রাখেন –‘আমার চোখের মণি নারীর জন্য’- এবং সেই চিত্রটি তাঁর আর যেকোন চিত্র শৈলীর থেকে ভিন্ন ধরনের, আবারও পরাবস্তাব আদলে আঁকা। ফ্রিদার চিত্র যখন দিয়েগো নির্মাণ করতেন তিনি তখন নিজস্ব ভঙ্গিতে চিত্রনির্মাণ করতেন এবং একান্ত নিজের জন্য আঁকতেন। সেই চিত্র তিনি সাধারণত কোথাও প্রদর্শন করতেন না। তিনি পূর্বেও ফ্রিদাকে মডেল করে কিছু পরাবাস্তাবত শৈলীতে চিত্র নির্মাণ করেছেন। সেগুলো সব গুলোই ভিন্নতর তাঁর দেয়াল চিত্রের থেকে। তিনি বলেন তিনি ফ্রিদাকে আঁকতেন শুধুই তাঁর নিজের মনের খোরাক মেটাতে। দিয়েগো ফ্রিদার একটি প্রতিকৃতি আঁকা শুরু করেন ১৯৩৯ সালে, যখন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছিলো ঠিক সেই সময়টি থেকে এবং তিনি সেটাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যত্নে আগলে রাখেন । যেখানে তিনি ফ্রিদার চোখ গুলোকে খুব যত্ন সহকারে এঁকেছেন। যেনো তিনি প্রথম দেখা সেই কিশোরী ফ্রিদাকেই খুঁজছেন।
আমরা জানি যে দিয়েগোর বহুগামিতা ফ্রিদাকে মর্মাহত করে। কিন্তু ফ্রিদা নিজেও স্বাধীনচেতা হবার কারণে, দিয়েগোর দেয়া কষ্টকে ভুলতে নিজেও বহু সম্পর্কে জড়িয়ে যান। তবে মনে করা হয় ফ্রিদা ছিলেন উভকামী, তিনি নারী পুরুষ উভয়ের সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক স্হাপন করতেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তবে তাদের দু’জনের প্রতি দু’জনের গভীর ভালোবাসার ঘাটতি ঘটেনি কোনোদিনও। তাঁরা আধুনিক সময়ের বহু আগেই আধুনিক মুক্ত স্বাধীন দাম্পত্য জীবন যাপন করে গেছেন।

ফ্রিদা কাহলোর মৃত্যর পর দিয়েগো রিভেরা আরো একবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও তিনি মূলত ফ্রিদা কাহলো কে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন। সেই ভালোবাসায় কামাতুরতা অপেক্ষা শ্রদ্ধা অনেক গুণে বেশী ছিলো। ফ্রিদা দিয়েগোকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালোবেসেছিলেন গভীরভাবে। তিনি তাঁর দিনলিপিতে একপর্যায়ে লিখে রেখে যান:
”দিয়েগো। আমার শুরু
দিয়েগো। স্রষ্টা
দিয়েগো। আমার শিশু
দিয়েগো । আমার বর
দিয়েগো । চিত্রশিল্পী
দিয়েগো । আমার প্রেমিক
দিয়েগো । ‘আমার স্বামী’
দিয়েগো । আমার বন্ধু
দিয়েগো । আমার বাবা
দিয়েগো । আমার মা
দিয়েগো । আমার পুত্র
দিয়েগো । আমি
দিয়েগো । মহবিশ্ব
ঐক্যের বৈচিত্র্য
আমি কেনো তাকে বলি আমার দিয়েগো? সে তো আমার ছিলো না কোনো দিনও, হবেও না কখনও। ও শুধু নিজের।”

ফ্রিদা দিয়েগোকে এঁকেছেন অনেকবার, অনেকভাবে। তবে জীবনের বেশ কিছুটা সময় ফ্রিদা একটানা আত্ম-প্রতিকৃতি নির্মাণে ব্যস্ত ছিলেন। তবে তিনি দিয়েগো কে তাঁর সন্তানের রূপে এঁকেছেন, এঁকেছেন তাঁর কপালের লেখন হিসেবে এবং তৃতীয় নেত্র সহকারে। তবুও ফ্রিদা স্বীকার করেছেন, যে দিয়েগোর প্রতি ভালোবাসা এতটাই বহুমাত্রিক যে, সে বলেছে তাঁর প্যালেটে এত রকমের রঙ পাওয়া যাবে না। যাতে ফ্রিদা দিয়েগোকে মনের মতো করে আঁকতে পারবেন। সন্তানহীন ফ্রিদার জীবনের বিরাট যে শূন্যতা সেটা তিনি পূরণ করেছেন, দিয়গোকে তাঁর সন্তানের মতো ভালোবেসে এবং পাশাপাশি শিল্পকলাকেও সমান ভাবে প্রাধান্য দিয়ে। ফ্রিদা কাহলোর এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো তাঁর অনুভূতিকে শৈল্পিকভাবে উপস্হাপিত করবার। তাঁর শেখার যে ক্ষমতা, তাঁকে আজ দিয়েগোর থেকেও জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দিয়েগো ফ্রিদার শিক্ষাগুরু ছিলেন পরবর্তীতে তাঁর সহকর্মীতে পরিনত হলেন। তাদের সম্পর্ক এবং শিল্পকলা দুটোই যুগে যুগে মেহিকোর মানুষদের করেছে, অনুপ্রাণিত এবং প্রণোদিত।
দিয়েগোর সঙ্গে ফ্রিদা কাহলোর সন্তান প্রাপ্তির স্বপ্ন সফল না হলেও এবং দিয়েগোর বিশ্বস্ততা সম্পূর্ণ রূপে না পেলেও ফ্রিদা কাহলো তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে পেয়েছিলেন আরো অনেক সফলতা। দিয়েগো রিভেরাকে তিনি সারা জীবন পেয়েছেন তাঁর পাশে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দিয়েগোকে পেয়েছেন একই সঙ্গে পিতা, পুত্র, ভাই, স্বামী, বন্ধু, এবং প্রেমিক হিসেবে। কর্মজীবনে তিনি দিয়েগোকে পেয়েছেন সহশিল্পী, পৃষ্ঠপোষক এবং রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে। দিয়েগোর ভালোবাসাতেই ফ্রিদা আজকে এক কিংবদন্তী শিল্পী ।

ফ্রিদা কাহলো এবং দিয়েগো রিভেরার এই মহাকব্যিক ভালোবাসার সম্পর্কটি শিল্পকলার ইতিহাসে শিল্পী দম্পতিদের মধ্যে সবথেকে বেশী জটিল এবং দৈবোপহত কিন্তু শ্বাশতিক। দিয়েগোর প্রতি ফ্রিদা কাহলোর ভালোবাসার গভীরতা সহজেই অনুমেয়; একজন শিল্পী- একজন মানুষ- একজন নারী -একজন প্রেমিকা হিসেবে তিনি তাঁর ভালোবাসার উপাখ্যান অভিব্যক্ত করে গেছেন তাঁর দিনলিপিতে, তাঁর জীবন যাপনে, তাঁর শিল্পকর্মে। দিয়েগোর শিল্পকর্মেও ফ্রিদার অবস্হান চিরস্হায়ী অম্লান। তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁরা একে অপরকে অমর করে গেছেন। আগামী দিনের প্রেমিক-প্রেমিকারা রোমিও জুলিয়েটের পাশাপাশি ফিদ্রা ও দিয়েগোর কথাও স্মরণ করবে শ্রদ্ধাভরে। ভালোবাসা তখনই অমর হয় যখন সেই ভালোবাসায় বেদনা থাকে গভীর, কবি শেলীর সেই কথাটির মতো “ আমাদের মধূরতম গান সে গুলোই যেগুলো আমাদের গভীর বেদনা কথা বলে”। আবার ফ্রিদা যেমন বলে গেছেন –“একটি পর্বতই জানে আরেকটি পর্বতের হৃদয়ের কথা।”
জুলাই ২০১৯, টরন্টো, কানাডা।
আসমা সুলতানা, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট