বিয়ে জীবনের ছোট্ট একটি ধাপ মাত্র: প্রশান্তিকার মুখোমুখি রূপন্তী

  
    

পুরো নাম রূপন্তী আকিদ। পরিবারের সবাই এবং বন্ধুরা ছোট করে রূপ নামেই ডাকে। স্নিগ্ধ সুন্দর মিষ্টি মেয়েটাকে রূপ নামেই মানায়। সম্প্রতি বৈভব ভাট পরিচালিত একটি হিন্দু পরিবারের গল্প নিয়ে নির্মিত অস্ট্রেলীয় সিনেমা ‘তেরাহবিন’ এ অভিনয় শেষ হলো রূপন্তীর। ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য নাটক ও সিরিয়াল। অভিনয় করেছে ‘হ্যালো বাংলাদেশ’, ‘কেবলই রাত হয়ে যায়’, ‘তাহার নাম শকুন্তলা’, ‘আংটি’, ‘ঘুমিয়ে পড়েছে মধ্যরাত’, ‘গল্পটি আংশিক সত্য’, ‘অথবা একটা খুনের গল্প’, ‘শারমিনের ব্যক্তিগত গল্প’, ‘কোন আলো লাগলো চোখে’ সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় নাটকে। যেসব নির্মাতা ও নির্দেশকের হয়ে কাজ করেছে তাদের মধ্যে মাহফুজ আহমেদ, সকাল আহমেদ, সাগর জাহান এবং তার বাবা আকিদুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য।
পথ প্রোডাকশন্সের হয়ে রূপন্তী দীর্ঘদিনধরে পারফর্ম করছে সিডনি অলিম্পিক পার্কের বৈশাখী মেলায়। ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করে ৯টা-৫টা কাজও চলছে।
আমরা আনন্দিত প্রশান্তিকার মুখোমুখি হয়েছে প্রবাসের প্রিয় প্রজন্মের ব্যস্ত মানুষ রূপন্তী আকিদ। এখানে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।

প্রশান্তিকা: এই মুহূর্তে কি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছো ?
রূপন্তী: সিডনির একটি এজেন্সিতে কনট্র‍্যাক্ট সাইন করার পর থেকে বেশির ভাগ সময় আমার অস্ট্রেলিয়ান টিভি মিডিয়াতেই কাজ থাকে। সাধারণত খুব লম্বা ওয়ার্কিং শিফট হয় অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়াতে, যেদিন কাজ থাকে সেদিন প্রায় পুরোটাই চলে যায়। পাশাপাশি এডমিনিস্ট্রেশনে চাকরিও করছি, সব মিলিয়ে সপ্তাহে সাতদিনই কাজে ব্যস্ত এখন।

প্রশান্তিকা: বাংলাদেশের মিডিয়াতে একসময় অনেক কাজ করেছো; ইদানিং একদম দেখছিনা। কারণ কি ?
রূপন্তী: আমি জন্ম থেকেই অস্ট্রেলিয়াতে থাকি। বাংলাদেশি পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে বাংলাদেশে যাওয়া হতো ছুটিতে বা ঘুরতে, সেখান থেকে সময় বের করে নাটকে কাজ করতাম। এক সময় দেশে যাওয়া হতো বেশি, সেজন্য কাজও বেশি হতো। ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ান জীবনের ব্যস্ততা বাড়লো, দেশে যাওয়া কমে গেলো, সাথে দেশে কাজ করাও কমে গেলো। তবে এবছরের শেষে দেশে যাচ্ছি আবার অনেকদিন পর। পরিচালকদের সাথে কথা হচ্ছে, আশা করি এবারও ভালো কিছু কাজ করতে পারবো।

অস্ট্রেলীয় টিভি শো ‘দ্য কমন্স’ এ ক্যাটারিনা শায়ার সাথে রূপন্তী

প্রশান্তিকা: নির্মাতারা তোমাকে নিয়ে কাজ করতে চাইলে কোন্ বিষয়টা বিবেচনা করে অফারটা নাও বা ফিরিয়ে দাও?
রূপন্তী: বিষয়টা আসলে সময় মেলানো। বাংলাদেশে দুই সপ্তাহের জন্য যাওয়া হয়, খুবই কম সময় এটা। এই সময়টা ঠিকঠাক ব্যবহার করার জন্য আগেই একেবারে নির্দিষ্ট কিছু পরিচালকের সাথে শিডিউল আর স্ক্রিপ্ট ঠিক করে রাখি, সেই অনুযায়ীই কাজ হয়। কাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে গল্প, চরিত্রের গুরুত্ব আর পরিচালক – এই বিষয়গুলোই বিবেচনা করতে হয়।

প্রশান্তিকা: অভিনেতা, মডেলিং, ফটোগ্রাফি না চাকুরী কোনটাকে ভবিষ্যতে প্রধান হিসেবে বেছে নিতে চাও এবং কেনো?
রূপন্তী: এককভাবে প্রধান কোনোটাই হবেনা, এই সবগুলোই পাশাপাশি জীবনে থাকবে। যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে, তার সবগুলোর কম্বিনেশন জীবনে রাখার এই অভ্যাসটা একেবারে স্কুল জীবন থেকে রপ্ত করেছি। এই মুহুর্তে একটিং, মডেলিং, ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, চাকরি – সবগুলোই পাশাপাশি চলছে। ভবিষ্যতে বিয়ের কারণে পরিবার বড় হলে পরিবারের সাথে কাজের কম্বিনেশন মিলিয়েই ম্যানেজ করবো।

হ্যালো বাংলাদেশ নাটকে মাহফুজ আহমেদ ও রূপন্তী

প্রশান্তিকা: বিয়ে বা সংসার নিয়ে তোমার ভাবনা কি? এই প্রশ্নটা এজন্যেই করা কারন তুমি হলে প্রবাসের দ্বিতীয় প্রজন্মের রোলমডেল। তোমার চিন্তাভাবনা বা পদচারনা অন্যরাও ফলো করে।
রূপন্তী: মজার ব্যাপার হলো, কাজের কারণে আমার ব্রাইডাল ফটোশ্যুট করতে হয়, এবং সেসব ছবি দেখে অনেকে ধরে নেয় যে বিয়েটা আমার। আবার, আমি এলজিবিটি রাইটসের পক্ষে, তা দেখে অনেকে মনে করে যে আমি সমকামী। আসলে দুটোর কোনোটাই নয়, দুটোর কোনোটা খারাপও নয়। বিয়ে জীবনের ছোট একটা ধাপ মাত্র, জীবনের সর্বশেষ লক্ষ্য বিয়ে নয়। বিয়ের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে আমি পজেটিভ, কিন্তু প্রত্যেক মানুষের এই সিদ্ধান্তের জায়গাটা ব্যক্তিগত। ব্যক্তির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো এবং মেনে নেয়ার ব্যাপারটা প্রবাসে বড় হওয়া প্রজন্ম স্বাভাবিকভাবেই শিখেছে, কিন্তু প্রথম প্রজন্মের অনেকেরই এই ব্যাপারে অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করি।

প্রশান্তিকা: বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, হলিউড বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোমার প্রিয় আইকন বা রোলমডেল কে বা কারা?
রূপন্তী: আমার সব সময়ের ইন্সপায়রেশন প্রিন্সেস ডায়ানা। সারা বিশ্বের মিডিয়া তার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী ছিলো, তার জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশছোঁয়া। এই জনপ্রিয়তাকে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়েই উপভোগ করতে পারতেন, কিন্তু জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানবতা এবং মানবাধিকারের জন্য। আমার মতে, জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ভালো কাজকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য প্রিন্সেস ডায়ানার চেয়ে সুন্দর উদাহরণ আর নেই।

নির্মাতা ফারুকী ও অভিনেত্রী তিসার সাথে রূপন্তী

প্রশান্তিকা: তোমার এতোদূর আসার পেঁছনে কার অবদান বেশি, মা বাবা না অন্য কেউ?
রূপন্তী: আমার ছিলো চেষ্টা, পরিবারের ছিলো অবদান। দুটো পাশাপাশি কাজ করেছে। বাবা-মায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমার কাজগুলোকে সব সময় সাপোর্ট দেয়ার জন্য। ভালো কাজের প্রশংসা সব সময়ই আরও ভালো কাজ করতে উৎসাহ দেয়। বহুদিন আগে করে যাওয়া আমার কিছু ভালো কাজের জন্য এখনও প্রশংসা পাই, সেজন্য এতোদিন পরেও বাংলাদেশি মিডিয়াতে কাজ করার উৎসাহটা পুরোপুরি আছে। এ বছরের শেষের দিকে আবারও আমাকে ভালো কিছু বাংলাদেশি কাজে দেখা যাবে, এবং এগুলোর সাফল্যের জন্য আমি সবার শুভকামনা আশা করি।

প্রশান্তিকা: প্রশান্তিকাকে এতক্ষণ সময় দেবার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রূপন্তী: প্রশান্তিকাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments