[ সিডনি প্রবাসী লেখক আরিফুর রহমানের ফেসবুক পেজের নাম ‘গল্পের দেয়াল- আরিফুর রহমান’। সম্প্রতি তাঁর পেজ থেকে এক অভিনব চিঠি লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। জবাবে অসংখ্য পাঠক-পাঠিকা নানা রঙে, নানা বিষয়ে চিঠি লিখে পাঠান। অবশেষে নির্বাচক প্যানেল তিনটি সেরা চিঠি এবং আরও তিনটি বিশেষ সেরা চিঠি নির্বাচন করেন। অভিনন্দন তিন বিশেষ বিজয়ী পত্র লেখক আয়েশা খাতুন, কাউসার হোসেন এবং সম্পা পাল। প্রশান্তিকার পাঠকদের জন্য তাদের লেখা সেই তিনটি চিঠি প্রকাশ করা হলো।]
সম্পা পাল
৪৯ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণে তৈরি গল্পের চিঠিতে প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা হয়তো এমন হতে পারতো!
প্রাণসখী চিত্রা,
হারিকেনের আলোটা ঝাপসা হয়ে আসছে বার বার, চোখের জল বাধ মানছে না। আকাশের ঠিকানায় কিভাবে চিঠি লিখতে হয় জানা নেই আমার। তুমি কি এখন আমার আশেপাশে থাকো? আমাকে দেখতে পাও তুমি? নাকি আকাশের তারা হয়ে আছো, তারা হলেও নিশ্চয় আকাশের উজ্জ্বলতম তারাই তোমাকে বিধাতা বানিয়েছেন। তুমি যে বীরঙ্গনা নারী, তুমি আমার থেকেও বড় এক যোদ্ধা। নিজের সর্বস্ব হারিয়ে যে নারী দেশের জন্য জীবন দান করে সে এক মস্ত বড় যোদ্ধা। তোমাকে খুব মনে পড়ছে, চিত্রা। আচ্ছা আমাকেও কি তোমার মনে পড়ছে? তুমি কি আমায় নিয়েই ভাবছো এখন?তোমার আমার নীল জ্যোৎস্নায় মাখামাখি,পদ্ম বিলে ঘুরে বেড়ানো, বিমুগ্ধ হয়ে রাতের আবছা আলোয় তোমাকে দেখা, শিমুল ফুলের মালাবদল, খড়ের গাদায় শুয়ে একসাথে চাঁদ দেখা, দীঘির জলে তোমার ছায়া, নৌকা করে নদীর চর দেখতে যাওয়া, চাষের সময় নিয়ম করে খেতাম না বলে ভাত নিয়ে গিয়ে জোর করে আমাকে খায়িয়ে দেওয়া, মাঝে মাঝে তোমার তুলতুলে গালটা আলতো করে ছুয়ে দেওয়া, হিমেল বাতাসে তোমার খোলা চুলের মাতামাতি দেখা, এই দিনগুলো ভীষন মনে পড়ছে, ফিরে পেতে ইচ্ছে জাগছে আমাদের ভালোবাসার অনুভুতিগুলোকে। জানো চিত্রা ওরা যখন আমাকে ধরে নিয়ে যায়, তোমার জন্যে মনটা ভীষন ব্যাকুল হয়েছিলো, আশঙ্কা হচ্ছিলো ওরা আবার তোমার ক্ষতি করে ফেলবে না তো!চেয়েছিলাম আমি মারা গেলেও তুমি যেন স্বাধীন দেশের বুকে আমাদের ভালোবাসার পতাকা উড়াও, স্বাধীনতার সুখে আমাদের ভালোবাসাটাও যেন জিতে যায়।ওরা আমাকে ওদের ক্যাম্পে নিয়ে প্রচুর মারতে থাকে, নাকে গরম পানি ঢালে, হাত- পায়ের আঙ্গুল কেটে দেয়। কষ্ট আরো বেড়ে গেলো যখন শুনলাম ওরা তোমাকে ধরে নিয়ে গেছে। একজন প্রেমিকের কাছে, প্রেমিকার সম্মানহানির কথা শোনার চেয়ে তীব্র কষ্ট আর কি হতে পারে! শুধু ধর্ষনে ওরা তোমাকে রেহাই দেয় নি।সেই স্মৃতিবিজড়িত শিমুল গাছের উপরে তোমাকে একশত টুকরো করে ওরা ক্ষ্যান্ত হয়, যে শিমুল গাছের তলে তোমার সাথে আকাশ দেখতাম, কতশত ফুল কুড়িয়ে মালা গেথে মালা বদল হতো আমাদের। সেই চেনা নদী, চেনা পথ সব আজ বড্ড স্বাধীন। আমাকে ক্যাম্পে আটকে রাখার পরদিনই ভোরবেলায় মুক্তিবাহিনীর সাথে ওদের যুদ্ধ হয়, আমরা জিতে যাই।মুখোমুখি যুদ্ধ শেষেই ফিরে যাই তোমার রনভূমিতে, যেখানে তোমাকে ওরা নির্মমভাবে শতটুকরো করেছিলো। তোমাকে এতো নির্মম, নিষ্ঠুর মৃত্যু যন্ত্রণা দিতে পিশাচগুলোর একবারও দয়া হলো না। স্বাধীন দেশে তোমার সাথে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া হলো না, চিত্রা।হলো না আমাদের স্বপ্নে সাজানো সংসার।আজকাল বড্ড একা লাগে তোমায় ছাড়া। কিছু চিঠি প্রত্তুতরের আশায় লেখা হয় না। থাকুক না হয় বাকি কিছু কথা। ওপারে না হয় তোমার আমার আবার দেখা হবে। ততদিন আমার সবচিঠি জমিয়ে রেখো কিন্তু। সব উওর তখন কিন্তু দিতে হবে তোমার। আকাশ ঠিকানার সব চিঠি আমি তোমার কাছে না ফেরা অবধি তুমি না হয় বুকে চেপে রেখো। আমি না হয় এই অসীম যন্ত্রনা বুকে চেপে একটা সুন্দর মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকি আর আমাদের ভালবাসাটা আগলে বেচে থাকি তোমার অপেক্ষায়, বেঁচে থাকি এক বীরাঙ্গনার ভালোবাসায়।
ইতি,
তোমার পাগল সুভাষ
কাউসার হোসেন
প্রিয় কাজলী,
এই বর্ষায় আমি তেইশ ছোঁবো। তুইও নিশ্চয় তেমনি হবি! আচ্ছা তুই এখনো ফুলকুড়ি স্কুলের পাশেই থাকিস? আজাদ, আশরাফুল ওরাও নিশ্চয় তোর আমার মতো তেইশ বছরের হবে তাইনা রে! অথচ এইতো সেদিনের কথা আমরা সবাই মিলে চকচকার বিলে নেমে মাছ ধরেছি, শালুক তুলেছি, শাপলার ভ্যাট খেয়ে খেয়ে পেট ফুলিয়েছি। বাড়ি ফিরেছি কোঁচা ভর্তি শালুক নিয়ে।
সন্ধ্যায় মা যখন সদ্য তোলা ইরি ধান সেদ্ধ করতো ইটের চুলায় খড়কুটো দিয়ে আমি তখন সেই শালুক ধানের ভেতর দিয়ে সেদ্ধ করে খেতাম। তোর মনে আছে? পাটক্ষেত তখন আমাদের মাথা ছুঁইছুঁই। তুই আমি চেয়ারম্যান নানার ছেলে বাবু মামা আরো বেশ কয়েকজন মিলে আমরা বর্ষার প্রথম জলে নেমে পাটক্ষেতের মাঝখান দিয়ে স্কুলে যেতাম।
স্কুলের পাশেই তোর বাড়ি ছিল বলে তোর উপর দায়িত্বটাও বেশি ছিল। তোর ভাগে ছিল লবন আর কাঁচামরিচ নিয়ে আসার। আশরাফুলের ভাগে ছিল চেয়ারম্যান নানার পুকুরপাড়ের কদম গাছ থেকে বেছে বেছে পাকা কদম পেড়ে আনার। আর আমার ভাগে ছিল সেই কদম কুচিকুচি করে কেটে মাখানোর। খাওয়ার সময় কতজন যে এসে হাত বাড়াতো! আমরা সবাই সেই মুঠো মুঠো কদম মাখা খেতাম আর ঝালের চোটে আমাদের চোখ দিয়ে নাক দিয়ে জল ঝরতো।
স্কুলের দিনগুলোতে বৃষ্টিতে ভেজার কথা মনে পড়লে এখোনো হাসি পায় জানিস! চেয়ারম্যান নানার ছেলে বাবু মামা বৃষ্টির সময় রেইনকোট গায়ে স্কুলে যেতো। আর আমি আচমকা বৃষ্টি এলে গায়ের শার্ট খুলে বইগুলো বেঁধে নিয়ে দিতাম ভোঁ দৌড়! তুই একটু নাদুসনুদুস ছিলি বিধায় লজ্জা পেতি জামা খুলতে। তাই জামার ভেতর বই ঢুকিয়ে দিতি দৌড়।
ব্যাঙ ধরার কথা মনে আছে তোর?
বর্ষার প্রথম জলে সমস্ত কোলাব্যাঙ যেন গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। তুই, আমি আর মজিদ মামার ছেলে আনারুল মিলে হারিকেনের আলোয় ব্যাঙ ধরতাম। ব্যাঙের এক পায়ে দড়ি বেঁধে ছেড়ে দিতাম। সে লাফিয়ে লাফিয়ে চলতো আর আমরা মজা দেখতাম!
বছর ঘুরে ঘুরে বর্ষা আসে তার নিজস্ব নিয়মে। ভিজে যায় রাজপথ, কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। জ্যামে নাকাল শহরবাসির উপর এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! আজ শ্রাবণের তেরো তারিখ। বাংলা সন তারিখ ওভাবে করে মনে রাখা হয়না। কেবল বৈশাখ আর শ্রাবণ ছাড়া। তুইতো জানিস শ্রাবণের তেরো তারিখ আমার জন্মদিন। এক ঘনঘোর বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় আমার জন্ম। বাবা তাই নাম রেখেছেন শ্রাবণ। আর তোর চোখ জন্মের সময় ছিল যেন কাজল মাখা! তাই তোর নানি নাম দিয়েছেন কাজলী।
সখি, হ্যাঁ, আমি তোকে ভুলিনি রে। ভুলিনি আমার কাজলী সখী কে। তার কাজল মাখা চোখ দুটোকে। যে আমার সমবয়সী হয়েও আমায় বড় বোনের মতো শাসন করতো, ভালোবাসতো!
আমি আসবো তোর কাছে সখী। একটু গুছিয়ে নেই, আমি আসবো। অনেক কথা জমে আছে রে। তুই আর আমি এবার বৃষ্টিতে ভিজবো, কদম মাখা খাবো। ভালো থাকিস ততদিনে। আমরা আবার শালুক কুড়াবো । ফিরিয়ে আনবো আমাদের হারানো সেই দুরন্ত কৈশোর…
ভেজা বরষায় চুপশে যায় হৃদয়ের বারুদ।
বহুদিনের জমানো উষ্ণতায় তপ্ত চিত্ত মুহূর্তেই আদ্র হয়ে ওঠে।
পথের পাশের দূর্বাঘাসেরা হলুদাভ থেকে সবুজাভ রূপ ধারণ করে।
কদম গাছে পাকা পাকা কদম বাতাসে দোল খায়।
পাটক্ষেতে নব্য বরষার জমা ঘোলা জলে খেলা করে ব্যাঙের দল।
বাঁশের আগালীতে ছেয়ে থাকে কচি কচি ঝিঙে আর শুভ্র চিচিঙ্গা ফুল।
আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছাদিত থাকে বেশিরভাগ সময়।
চারিদিকে সবুজের সমারোহ, ধুলোহীন পত্রপল্লবে ছেয়ে থাকে বৃক্ষরাজীরা।
সদ্য শেষ হয়ে যাওয়া আম গাছের শাখায় বসে থেকে থেকে ডেকে চলে বউ কথা কও পাখি।
এক দিকে ব্যস্ত কৃষক আমন ধানের বীজতলার পরিচর্যায়।
অন্যদিকে প্রস্তুতি চলছে সেই আমনের চারা রোপনের।
বাতাসে ভেসে আসে কর্দমাক্ত জলের ঘ্রাণ।
মেঠোপথ গুলো যেন ধুলোহীন নিকোনো উঠোন।
চঞ্চলা কিশোরী রা সেই পথে দাগ কেটে কেটে এক্কাদোক্কা খেলায় মত্ত।
বর্ষা,
আমার প্রিয় ঋতু,
আমার চোখের জল লুকানোর শ্রেষ্ঠ সময়!
ইতি,
তোর শ্রাবণ।
আয়েশা খাতুন
আমার প্রিয় মা,
আমার বয়স এখন প্রায় তেইশ ছুঁই ছুঁই। বাবার হিসেব অনুযায়ী আজ একুশ বছর চার মাস তিন দিন হয়ে গেলো আমি তোমার কোমলমেয় পরশ অনুভব করিনি। কেন নেই মা তুমি আমার কাছে ? কেন ? কেন ইচ্ছে হলেই যখন তখন তোমাকে মা, মা বলে ডাকতে পারিনা আমি ? কেন মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলে, পাশ ফিরে তোমায় জড়িয়ে ধরতে পারিনা ? কেন ভয় পেয়ে জড়োসড়ো আমি, তোমার কোলে মাথা রেখে বাকি রাতটা শান্তি তে ঘুমাতে পারিনা ? কেন চলে গেলে মা, আমায় ফেলে, ঐ দূর আকাশে ? খুব জানতে ইচ্ছে করে মা ? ঐ দূর নীল আকাশে কেমন আছো তুমি , আমায় ছেড়ে ?
মা ?
তোমার নামে আমার যা কিছু জানা, সবই তার বাবার কাছে শোনা। কত সাধারনের মধ্যেই অসাধারণ ছিলে তুমি মা ! বাবা আর তুমি পালিয়ে বিয়ে করেছিলে বলে সাজগোজের সুযোগ ছিল না। আটপৌড়ে শাড়ি, খোপায় সাদা বেলি আর পায়ে মোটা আলতা মেখে বউ সেজেছিলে তুমি। অথচ সপ্ন দেখেছিলে আমাকে তোমার মনের মতো করে বউ সাজানোর। লাল টুকটুকে একটা বেনারসি গায়ে জড়াবে তোমার মেয়ে, মাথায় জরির ঘোমটা, কানে বড় বড় ঝুমকো দুল নিজ হাতে পরাবে তুমি, খোঁপায় সাদা বেলিফুলের মালা আর মালার লকেটে দুটো লাল-খয়েরি গোলাপ।
ইমিটেশন নয় খাঁটি সোনার গহনায় সাজবে তোমার মেয়ে। গলায় সাজবে কন্ঠহার সাথে একটি সীতাহারও।বাবাকে বলেছিলে হাতের জন্য মোটা মোটা দুটো বালা বানাতে, পায়ে ঠিক তোমার মতোই মোটা করে আলতা লাগবে।
তোমার সপ্নগুলো কিছুদিনের মধ্যেই পূরণ হতে চলেছে মা, তুমি যেভাবে চেয়েছিলে ঠিক সেভাবেই আমার বিয়ের আয়োজন করছে বাবা, শুধু তুমি নেই, রেখে গেছো তোমার সপ্নগুলোকে। তাই নিয়েই বেঁচে আছি আমরা দুজন, বাবা আর আমি।
মা ?
ছোট বেলায় বাবা আমায় যখন ঘুম পাড়াতো তখন তোমার গল্প শোনাতো, তোমার স্মৃতি, তোমার কথা, তোমার কল্পনা,আমায় নিয়ে তোমার সপ্ন, সব বলতো। আস্তে আস্তে যত বড় হয়েছি আমার সপ্নে আমার খেয়ালে আমার জাগতিক দুনিয়ায়, সবকিছু তে যেমন বাবা আছে তেমন তুমিও গেঁথে আছো মা।
মা ?
বাবা বলে, আমি নাকি একদম তোমার মতো হয়েছি।তোমার মতো চোখ, তোমার মতো ঠোঁট, হাত-পা, এমনকি রাগটাও নাকি তোমার মতোই। বাবার কাছে শুনেছি, তুমি নাকি কাঁটাওয়ালা মাছ খেতে না, জানো মা ? আমিও কাঁটাওয়ালা মাছ খেতে পারি না তবুও বাবা খাইয়ে দেয় জোর করে।তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করে মা। জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করতে ইচ্ছে করে।ইচ্ছে করে সারাটাদিন তোমার সাথে থাকতে।
চোখের জলের কি আর বললো বলো ? তোমায় মনে করে কাঁদতে তো চাই না কিন্তু কেন জানি আপনাআপনিই চোখে জল এসে যায় !
মাগো ?
ওরা বলে,,,,?
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী নাকি ক্লিওপেট্রা কিন্তু ওরা তো জানে না মা, আমার কল্পনার তুমি তাঁর চেয়েও শত সহস্র গুণ বেশি সুন্দরী।
মা জানো ?
বাবা এখনো অফিস থেকে রাত করে বাসায় ফেরে।কত রাত হয়েছে বলো ? এখনো ফেরার নাম নেই তাঁর, আজ আসুক ? আচ্ছা করে বকে দেবো। এখন তো বয়স হয়েছে বলো? আমার কোন কথাই শোনে না ! এইতো আর ক’দিন পর শ্বশুর বাড়ি চলে যাবো তখন কে খেয়াল রাখবে , বলো ?
ঐ তো, গাড়ির আওয়াজ !
আমার নিশাচর বাবাটা ফিরেছে এবার, যাই বাবার কাছে। কিন্তু তোমাকে বলছি মা, এভাবেই চিরকাল আমার একাকিত্বের সাথী হয়ে থেকো, আমার খেয়ালে, আমার স্মৃতিতে আমার সপ্নে।
ইতি,
তোমার ভালোবাসার ছোঁয়া না পাওয়া মেয়েটি।