বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জীবনাবসান

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্ক : বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঢাকায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। তিনি বহুদিন ধরে জটিল কিডনি রোগে ভূগছিলেন। গত ৫ এপ্রিল থেকে তাঁর অবস্থা ছিলো গুরুতর। তা সত্বেও তিনি তাঁর হাতে গড়া গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিতে রাজি হননি। তিনি এমনও বলেছিলেন- তাঁর মৃত্যুও যেনো সেখানেই হয়। তাঁর মৃত্যুতে সারাদেশে এবং বিশ্বের যেখানেই বাঙালি রয়েছে তাদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ( ১৯৪১-২০২৩)।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ঢাকার বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। কিছু কিছু পত্রিকায় তাঁর জানাজা ও দাফনের খবর দেয়া হলেও কিছু পত্রিকায় জানানো হয় মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর দেহ দান করে গেছেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা বাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। তিনি ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি বাম রাজনীতিতে যুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাস্কুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা ছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। যাঁদের আগে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না, এমন নারীরা কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েই হাসপাতালে সেবার কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাজে লাগিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৭৭ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। এশিয়ার নোবেল পুরস্কার খ্যাত ফিলিপাইনের র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড। যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশিজ ২০২২ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ‘এনআরবি লিবারেশন ওয়ার হিরো ১৯৭১’ পুরস্কার প্রদান করে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী চেয়েছিলেন মানুষ যেন সহজে প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি পেতে পারেন। এ জন্য তিনি আইনের পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ১০০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট তৈরি করেছিলেন। ওই ইউনিটে নিজেই ডায়ালাইসিস করাতেন। ইউনিটটি তিনি করেছিলেন কম মূল্যে সাধারণ মানুষকে সেবার সুযোগ করে দিতে। একটি ক্যানসার হাসপাতাল করার ইচ্ছাও তাঁর ছিল। পেষাগত জীবনে চিকিৎসক হলেও মানবসেবা এবং স্পষ্টবাদিতার কারণে তিনি মানুষের খুব প্রিয়ভাজন ছিলেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments