বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা: ফুঁসে উঠেছে বাংলাদেশ

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেফতার হওয়া একদল ছাত্রলীগ কর্মী। আজ দুপুরে ঢাকায় ডিবি পুলিশ এই তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে, ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীর প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আবরার ফাহাদ

রোববার রাতে আবরারকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তাঁর নিজের আবাসিক হল শেরে বাংলা হলের একটি কক্ষে বেদম প্রহার করে। পরে মৃত ভেবে তাকে রুমের বাইরে ফেলে রেখে চলে যায়। সোমবার ভোরে সেখান থেকেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বুয়েটের সিসিটিভি ক্যামেরায় জড়িত সকল হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। গতকাল আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামী করে মামলা করলে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১০ জন ছাত্রলীগ নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করে। ডিবির ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

আবরার হত্যার দুইদিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু ফুসে উঠেছে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা। দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যেও তারা সহপাঠি হত্যার প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে ঢাকা মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারা দেশের বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সারা দেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

আদালতে হাজিরা শেষে আবরার হত্যা মামলার ১০ আসামীর প্রত্যেককে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়

সোমবার আবরারের লাশ তাঁর বাড়ি কুষ্টিয়ার পিটিআই রোডে পৌঁছার পর হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চেতনা ফিরতেই তিনি চিৎকার করছেন, “আমার সন্তানকে জীবিত ফিরিয়ে দাও”। নিথর নিস্তব্ধ আবরারের বাবা কারও সাথে কোন কথা বলছেন না। হাজার হাজার মানুষ তাঁর নামাজে জানাযায় শরীক হন। আবরারকে কুষ্টিয়ায় দাফন করা হয়।

অন্যদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়া ১১ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার রাতে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিস্কার আদেশ দেয়া হয়।

জানা গেছে, ক্রিকেটর স্টাম্প স্টিক দিয়ে আবরারকে কয়েক দফা পেটায় বুয়েটের ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। প্রথম দফা পেটানোর ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন। দ্বিতীয় দফায় পেটান তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনীক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম ওরফে জিয়নসহ কয়েকজন। তাঁরা সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী।

বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে যেখানে তাকে বেদম প্রহার করা হয় সেই রুমের তিন ছাত্রলীগ কর্মী এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার ও আটককৃত দশ ছাত্র হচ্ছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর ও মোহাজিদুর রহমান।

আবরারের নিস্তব্ধ বাবা মা

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবরার বরাবর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর একমাত্র ছোট ভাইও মেধাবী। সে ঢাকার একটি শীর্ষস্হানীয় কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। আবরারকে শিবিরের সমর্থক বলে ভুল করা হচ্ছে। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তার বাড়ি আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের পার্শ্ববর্তী। আবরারের পরিবারও আওয়ামীলীগ ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পূজার ছুটিতে বুয়েট বন্ধ থাকলেও পড়াশুনার চাপের কারনে আবরার মাত্র একদিন আগে কুষ্টিয়া থেকে বুয়েট হলে আসেন। তাঁর মা একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক, বাবা ব্রাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন এখন অবসরে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, আবরারের যে স্ট্যাটাস নিয়ে তাঁকে খুন হতে হলো, প্রশান্তিকার পাঠকদের জন্য এখানে দেয়া হলো:
১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশেে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে।

২.কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েকবছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।

৩.কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments