বেগুনী দিন ৮ মার্চ । শায়লা জাবীন

  
    
.

প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়, কেন কে জানে ! এই দিনে নারীদের সকল দুঃখ ঘুচে যায়? সুখ বেড়ে যায়? শান্তি খুঁজে পায়? নাকি অনেক ফুলঝুড়ি কথার মত এক দিনের জন্য নারী দি ‘বস’ হয়?

কিছুই হয় না, শুধু ব্যথায় নীল থেকে বেগুনি হয়ে যাওয়া ছবিতে ফেবুর দেয়াল সয়লাব হয় আর কিছু বাণী প্রসব হয়। এরপর ৯ মার্চ থেকে যেই লাউ সেই কদু। জি কদু আর এই কদু অবস্থার জন্য সমাজে বেশিরভাগ মেয়ের মায়েরা দায়ী। উঁনারা না বুঝেই মেয়েদের সর্ব গুনবতী বধির পুতুলমতি বানিয়ে নিজেদের যাবতীয় শখ, আল্লাদ, ইচ্ছে মেয়ের উপরে চাপিয়ে দিয়ে ঘরে বসে টিভি সিরিয়াল দেখেন। ছোটবেলা থেকেই যেখানে মেয়েদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে থেকে দেয়া হয় সেখানে দিবস পালন করে কি উদ্ধার হবে? ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে সুস্থ

শিক্ষিত দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন মায়ের কোন বিকল্প নেই।

তাই চারদিকে খুবই ফ্যাশন সচেতন মেয়েদের দেখি…

কিন্তু মেরুদন্ড সচেতন মেয়েদের বড়ই অভাব।
মেরুদন্ড সোজা রাখতে গেলে মন ও মগজের সমন্বয় থাকতে হয় এবং চোখের দৃষ্টি পরিষ্কার রাখতে হয়।
এদুটোর সমন্বয় থাকলে ক্যামেরার লেন্স, ফিল্টার বা মেকআপের ফাউন্ডেশন বা প্রোফাইল পিকচার ঘন ঘন না বদলালেও চলে।

ইদানিং নারীর পোশাক নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়।পোশাক পরিচ্ছেদ যেমন যার যার ব্যাক্তিগত পছন্দ তেমনি উল্টাপালটা সামঞ্জস্যহীন পোশাকও দৃষ্টি আকর্ষণের অন্যতম প্রধান উপায়।

ফ্যাশন করা মোটেও দোষের কিছু না, পোশাক আশাক তো মানুষ নিজস্ব রুচি অনুযায়ী পরে থাকে তবে পোশাক থেকে ঐ ব্যক্তির শালীনতা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। উঁনি স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া ম্যাংগো পিপল নাকি নিজস্ব রুচিবোধে অটল থাকা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ সেই রূপটা প্রকাশ পায়।

একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব প্রকাশ পায় তার বুদ্ধিমত্তায় এবং কথা বার্তায়, পোশাকে নয় কিছুতেই।

সুন্দর তরুণী বা যুবতী মেয়ের পর্দা করা আর বয়স্ক মহিলার পর্দা করার মাজেজা যেমন ভিন্ন ঠিক তেমনি পশ্চিমা দেশে ভিন্ন সংস্কৃতিতে জন্মানো মেয়ের পোশাক আর দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ব্যবস্থা থেকে উঠে আসা একটি মেয়ের পোশাক যখন এক হয়ে যায় তখন কার পোশাক কি অর্থ বহন করে এবং এই পোশাক পরিধানের পেছনে কি মনোভাব ও উদ্দেশ্য সেটাও বোধগম্য হয়ে যায়। আপনার যেমন খুশী পোশাক আপনি পরতেই পারেন, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা একান্তই আপনার তবে সেই পোশাক আপনি বহন করতে পারছেন কিনা বা আপনার ব্যাক্তিসত্ত্বার সাথে যাচ্ছে কিনা সেটা বোঝার বোধটুকু আপনারই থাকা দরকার। অন্যদের নয় কিছুতেই।

মেয়েদের সাবলম্বী হওয়ার কোন বিকল্প নেই যেই পথে কখনো নিজের পরিবার অথবা শশুরবাড়ী অথবা খোদ স্বামী অন্তরায়। এসব ডিঙিয়ে যেসব মেয়ে আয় রোজগার করে তাদের সিংহভাগের টাকা ঐ নারী দি বস বলা স্বামী কৌশলে হাতিয়ে নেয়। এরপরে বাকি থাকা কোন মেয়ে যদি জোড় গলায় প্রতিবাদ করে তখন শুনতে হয় এজন্যই মেয়েদের আয় রোজগার করতে নেই, করলেই পা লম্বা হয়। লম্বা পা নিয়ে যদি মেয়েরা সমঅধিকারের কথা আওড়ায় তাহলে বাবা মা কিছু শেখায়নি বলে গালিগালাজ শুনতে হয়। গালিগালাজের তোয়াক্কা না করে নারী যদি ওয়াকআউট করে বা নিজের আয়ের কন্ট্রোল নিজের কাছেই রাখে তাহলে তো সেই নারী বেশ্যা, কারণ নারীর কেন রাগ জিদ থাকবে, জিদ তো শুধু অপরপক্ষের পোশাক, এই বাণীও কিন্তু ছেলেবেলায় মাথায় ঐ নারীর মা মাথায় ঢুকিয়েছেন, কোন পুরুষ না। এজন্যই নারীরা মরার আগেই মরে।

নারীদের মুক্তি তাহলে কোথায়?

আলোয় আলোয়…
সেই আলো কোথায়?
তাঁদের নিজেদের মাঝেই সেই আলো আছে।
সমাজের পুঁথিগন্ধ শুনতে শুনতে নারীরা নিজেরাই খেই হারিয়ে ফেলে, আলো খোঁজ পাবে কিভাবে?
তখন শুরু হয় পোশাক নিয়ে টানাটানি…
বাচ্চা নিয়ে অধিকার খাটানি
না বুঝেই ফুটানি

দিন শেষে নাকানি চুবানি…

নারীর মুক্তি আলোয় আলোয়, সেই আলো শুধুই সুশিক্ষার আলো, ক্যামেরার ফ্লাস লাইটের আলো নয়।

শায়লা জাবীন
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।
প্রকাশিত বইঃ মুষল ধারে বৃষ্টি, নিচতারা, অমোচনীয় দাগ।
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments