ব্রিসবেনে মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনলো সাদাত হোসাইনের জীবনের গল্প – শিল্পী রহমান

  
    

কাউকে বড় হতে দেখলে খুব ভালো লাগে।

সাদাতের বেড়ে ওঠাটা দেখতে খুব ভালো লেগেছে আমার, সবচেয়ে গর্বের ছিল চোখের সামনে লেখক হিসেবে ওকে এমন বিখ্যাত হতে দেখে। কয়েক বছরের মধ্যে তর তর করে অনেক ওপরে উঠে গেলো ছেলেটা। ওকে চিনেছিলাম একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে যে নিজেকে তখন প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছিল, এরপর জেনেছি ও ফিল্ম এন্ড টেলেভিশনে পড়াশুনা করে কিছু করতে চায়, এর পরে সবার সামনে নতুন আলো নিয়ে এসে দাঁড়ালো একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে। এটাও ওর জীবনের গল্প।

মঞ্চে উপবিস্ট ডানে প্রশান্তিকার ব্রিসবেন প্রধান এবং সাদাতের অনুষ্ঠানের আয়োজক তুলি নূর, কবি ও গল্পকার শিল্পী রহমান এবং সাদাত। 

আমার জন্যে ব্যাপারটা অনেকটা এমন হলো যে, আরে এই ছেলেটাকে তো আমি সেদিনই দেখলাম ,কোন ফাঁকে এতো বড় একজন লেখক হয়ে গেলো যাকে এখন দেশ বিদেশের মানুষ চেনে। শুধু চেনেই না, ওর বই দেশের বাইরে বইমেলাগুলোতে বিপুল উৎসাহ নিয়ে মানুষ কিনছে। শুধু কিনছেই না ওর গল্প শুনবার জন্যে মানুষ ওকে দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে এবং টিকেট কেটে ওর গল্প শুনবার জন্যে ভিড় জমে যাচ্ছে। এই ভাবেই ভক্ত হয়ে গেছে মানুষ, সাদাত হোসাইন নামের এই লেখকের।

সাদাত অস্ট্রেলিয়া যাবে আর ওই সময় আমি ওখানে থাকবো না ভেবেই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু মনে হচ্ছে সাদাতের সঙ্গে আমার জার্নিটা এক জায়গায় থেমে যাবার নয়, হয়তো আরও অনেকটা পথ আমরা একসঙ্গে হাঁটবো। তাই কিভাবে কিভাবে যেন আমিও একই সময়ে ব্রিসবেনে যেয়ে হাজির হলাম। অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও সময় বা সুযোগ হয়ে ওঠেনা কিন্তু আমাদের সময়টাও মিলে গেলো কাকতালীয় ভাবে। সারপ্রাইজ দিতে চাইলাম ওকে। তুলি এবং অবনীর সাহায্য নিয়ে সেই কাজটাই করলাম। ওর অবাক হবার মুহূর্তটা দেখবার মতো ছিল, ভিডিও করে রাখা হয়নি কিন্তু অনুভূতি ম্লান হবে না কোনদিনও।
ব্রিসবেনে তুলি একজন ম্যাজিশিয়ানের মতো ওর চার হাত পা ছড়িয়ে খুব অল্প সময়ে অরগানাইজ করে ফেলেছিল সব কিছু, ব্রিসবেন বাংলা রেডিও থেকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সুজন এবং অবনী, সিতার রেস্টুরেন্ট দিয়েছিলো তাদের জায়গা ছেড়ে, ডঃ কোবায়েত এবং ডঃ খোন্দকার উনাদের উদার হস্ত বাড়িয়ে দিয়ে বাস্তবে রূপান্তরিত করেছিলেন কিছুদিন আগে বুনতে থাকা সুপ্ত স্বপ্ন । সবকিছু মিলে হয়ে গিয়েছিলো একটি অসাধারণ আয়োজন। ভালো কাজ থেমে থাকে না এটাই তার প্রমাণ।

ব্রিসবেন রেডিও’র পক্ষ থেকে সাদাতকে ক্রেস্ট উপহার। 

দেখা গেলো ব্রিসবেনেও সাদাতের প্রচুর ভক্ত রয়েছে। পুরো জায়গাটা পরিপূর্ণ করে মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনলো ওর জীবনের গল্প। গল্প শেষে মানুষ প্রশ্ন করে জেনে নিলো আরও অনেক না জানা কথা। বই নিয়ে কথা হলো, গান হলো, কবিতা হলো, হাসি আনন্দে মুখরিত হলো ব্রিসবেনের এই সাহিত্য সন্ধ্যা। সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে এই অনুষ্ঠান কেমন হবে এমন একটা আবছা কৌতূহল থাকলেও অনুষ্ঠান শেষে সবাই একবাক্যে তাঁদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
ব্যক্তিগত ভাবে সাদাতের এই সাফল্য আমার গর্বের অবস্থানটাকে আবারও ছুঁয়ে দিলো গভীর ভাবে।

গল্পের এক ফাঁকে আমার একটি কবিতা পড়ার সুযোগ হয়েছিলো। অবনী মাহবুব পাঠ করলো সাদাতের একটি কবিতা। গল্পের মাঝে বিরতিতে সোহাগ শোভন ও মিত্রা স্বর্না’র যুগল গান ও কবিতা পুরো দর্শককে কানেক্ট করেছে। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে প্রশ্ন উত্তর পর্ব শেষে কুইজেও অনেক জানা হলো। বিজয়ী পেলো পুরো এক সেট বই।

গান ও কবিতায় সোহাগ শোভন ও মিত্রা স্বর্ণা। 

ব্রিসবেনে প্রচুর পাঠক আছে, আমি মনে করি প্রতি বছর এখানেও বইমেলা হতে পারে। আমরা পাঠক তৈরি করতে চাই, বইয়ে ফিরে যাক আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। সিডনিতে প্রশান্তিকা এবং মুক্তমঞ্চ রয়েছে এবং তাঁদের সহযোগিতায় সাদাতকে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া আনা সম্ভব হয়েছে। ব্রিসবেন কোনদিন কোন কিছুতে পিছিয়ে থাকেনি, আজও থাকবে না। ব্রিসবেন বই পড়ুক, নতুন পাঠক তৈরি করুক, এইসব ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাক এটাই কাম্য।
প্রশান্তিকার আরিফের সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগলো, সদা হাস্যময় এই ছেলেটিও একজন ভালো লেখক ।
সবাইকে ধন্যবাদ আসবার জন্য। সবগুলো বই মুহূর্তেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো তবে আপনারা অর্ডার দিতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন তুলির সাথে। যারা আসতে পারেননি বলে আফসোস করছেন তারা অপেক্ষা করুন রেডিও প্রোগ্রামের জন্যে।
সবশেষে সাদাতের জন্যে রইলো অনেক অনেক শুভ কামনা, আরও অনেক বড় হও তুমি।

শিল্পী রহমান
কবি, গল্পকার, সংস্কৃতিকর্মী,
মনোবিজ্ঞানী। 
অস্ট্রেলিয়া।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments