
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখে আঁচ করতে পারি- যে হাত এবং তর্জনী দিয়ে জনক ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের, সেই তর্জনীকে অসহ্য একদল জানোয়ারদের। তাই হয়তো সর্বাগ্রে তর্জনীটিই ভেঙ্গে দিয়েছে ওরা, তারপর তাঁর মুখমণ্ডল। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে যখন তাঁর কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী- সেই সময়েই এলো এই তর্জনীর অপমান !
বেশি দিন আগের কথা নয়। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের প্রিয় মধুদা’র ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার পর লিখেছিলাম, ‘হোয়াট নেক্সট’ … আজ এলো উত্তর।
এই ভাঙনের খেলা শুরু হয়েছে সেই কবে, এখন শুধু দেখার পালা। এবং সত্যটা হচ্ছে, এটা দেখে যাদের মনে কিছুই হচ্ছেনা বা রীতিমত খুশী হচ্ছেন তাদের জন্যে আছে সুসংবাদ… বলছি সেটা কী। আর হাতে গোনা যে বা যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের বলি দীর্ঘশ্বাস গিলে ফেলুন, আরো খারাপ কিছুই দেখতে হবে সামনে।
সুসংবাদ হচ্ছে, যাদের কাছে এই ভাঙ্গাটাকে শুধুই ধর্মীয় কারণ মনে হয় বা এটাতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সাপোর্ট আছে তাদের বলি, জী এই বাংলাদেশ আপনার কথাই বলছে আজ। আপনাদের যা বলার ছিল বলছে তা বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ !
ইতিহাসের এই দিনে ১৯৬৯ এ জানা যায় দেশের নাম দেয়া হয়েছিল, পুর্ব পাকিস্তান থেকে ‘বাংলাদেশ’। আপনারা যারা কোনদিন মানতে পারেননি সেটা তাদেরই বিজয় রচিত হয়েছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর…
বিশ্বের আধুনিক সভ্যতায় তাল মিলিয়ে একট দেশকে নাম লেখাতে সেই দেশের শিল্প সাহিত্য, ইতিহাস, নৃতত্ত্ব, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠী সহ আলাদা করে সকলের অল্প অল্প করে অবদানে হয় সমৃদ্ধ… এবং একের পর এক পরিবর্তন ধারা বয়ে নিয়ে যায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
বাংলাদেশে এই ধারা উল্টে গেছে… দেশ এবং দেশের মূল পালস এখন নির্ভর করছে ধর্মান্ধ এক জনগোষ্ঠীর কাছে। জেনে না জেনে জনগণের বড় অংশ দিয়ে যাচ্ছে তার সমর্থন।

সরকার তো জনগণ বিচ্ছিন্ন, বা বলা যায় ক্ষমতা আছে, দৃশ্যমান ফ্লাই ওভার বা মেট্রোরেল হয়ে যাচ্ছে এমন কিছু দেখিয়ে বা না দেখিয়ে পার করে দেবে সময়… সেখানে দেশের মূল সংস্কৃতি রইলো কী গেলো এটা তাদের কাছে কোনভাবেই চিন্তার বিষয়ে নেই।
কাল ফেয়ার ইলেকশন হলে পরশু এই ভাস্কর্য বিরোধী নেতারা বসে চালাবে দেশ এবং আপনারা করবেন জয়োল্লাস, দিনের পর দিন এই তো চেয়েছেন… চাইছেন।
ধর্মীয় সহাবস্থান বা বাড়াবাড়ি না করা এই নিয়ে হবেনা আর কোন একটিও কথা, দারুণ পুলকিত বোধ করছেন যারা তাদের বলি, সুখে আছেন যারা সুখেই থাকেন তারা !
দুই একজনের কথা বা প্রতিবাদ কিচ্ছুটি যায় আসেনা আপনাদেরও!! স্বপ্ন জিইয়ে রাখেন, ভাঙতে থাকেন… ভাঙতে ভাঙতেই দেখবেন আর ভাঙ্গার কিছু নেই, মনের মাধুরী দিয়ে গড়বেন আপনার বাংলাদেশ। শান্তি শান্তি…
দেশ ছেড়ে আছি, তাই পারতপক্ষে দেশের অবস্থা বা রাজনীতি নিয়ে কিছু বলিনা আজকাল। বিষয়টা এমন না যে কাউকে খুশী বা অখুশী করার বিষয়টা নিয়ে ভাবি। বিষয়টা হচ্ছে… কোন কিছু বলার পর সেটা নিয়ে কেউ কমেন্ট করার পর যে ফলোআপ কমেন্ট করবো সে সময় আমার এই মুহূর্তে নেই।
ক্ষোভ জানানোর ভাষা নেই, তবে আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়াটা বোধ হয় খুব শীঘ্রই আর হবেনা। আমি হয়তো থাকবোনা কোন না কোন প্রজন্ম যদি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্পর্ধা না দেখায়… আমার বাংলাদেশ আমি আর দেখবোনা, অল্প কিছু প্রাণের মানুষ আর প্রকৃতিটুকু ছাড়া আমার কিছুই আর ‘আমার রবেনা’! হায় !
নাদেরা সুলতানা নদী
সহযোগী সম্পাদক, প্রশান্তিকা।
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।