প্রভাতীর ঘুম নেই
দুচোখের পাঁপড়ির মাঝে দোল খায় ঘুম,
দোটানায় ফেলে অনবরত!
অথচ,
প্রভাতী বাস সার্ভিস আসা-যাওয়া করে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে!
তুমি ইশকুলে ভর্তির ফরম কিনে নাও জলদি।
ভাল করে শিখে নাও,
ভালবাসার ১০১ টি উদ্যমী পন্থা!
ভালবাসার ইশকুলের অবারিত ঘাস বিছানো সবুজ মাঠে শুয়ে শুয়ে, আমি তোমার সাথে মেঘ দিয়ে আকাশে বিড়ালছানার ছবি আঁকবো।
যখন বড় হবো,
আমার কোমরে পায়জামার ফিতে ফুল করে বাঁধা থাকবে, তখন এইসব হয়তো মনে পড়বে!
বোয়ালমাছ ভাজতে গিয়ে তেল ছিটে এসে পড়বে আমার গালে, আমি আনমনে হাসবো রান্না ঘরের জানলায় কোন বাদামী বিড়াল দেখে!
দুপায়ের গোড়ালি বয়ে নিয়ে আসা ক্লান্তি যখন আমার চোখের পাতা দু’টো এক করতে পারবে না তখন, আমি কোন এক আকাশে তারা গুণবো মনে মনে!
তুমি হয়তবা তখন ঘুমিয়ে পড়েছো, খসে পড়া তারার মতোন করে!
প্রজাপতির পাখা ঝাপটানোর সুরে দুলে ওঠা মাধবীলতার দোলে আমার চোখের ঘুম, লুকোচুরি করে!
রাত্রির সঙ্গে অনড় এ সত্য ঘনীভূত হয়!
অন্ধকারেই আমি খুঁজি হারানো অনুভূতির সবগুলো খসড়া।
আবরণ
আমাদের আর দেখা হয় না!
মনের মধ্যে এক একটা বনের বাঘ নিয়ে ঘুরিফিরি নিজের চৌহদ্দিতে!
তোমার বাঘ, তোমার খালের পাড়ে পা ধোয়,
আমার বাঘ, আমার ঘরের জানালায় বসে বসে হাড় চেটে চেটে খায়!
আমার বাঘের দাঁত ব্যথা খুব!
বাঘেরা গর্জন করে উঠলে খোলা মাঠে গিয়ে আমরা বুকের ভেতরের আবরণটা খুলে খাঁচাটা বের করি। খাঁচার ভেতরের বাঘটা তখন চাঁদের কিরণে স্নান সেরে নেয়, খুব সময় নিয়ে।
কোন একদিন হঠাৎ করে যখন স্নানের সময়, খাঁচার ভেতর থেকে তোমার বাঘটা আমার বাঘটাকে আচম্বিতে দেখে ফেলে! তখন ওরা মিলিয়ে নেয় নিজেদের গায়ের রঙ!
অতঃপর, আমরা বিবিধ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই!
আমাদের আর দেখা হয় না কোনদিন!
আমাদের বাঘেরা এখন ভীষণ চুপচাপ, আর গর্জন করে না!
আমাদের মনের বাঘ, আলসেমি করেই বনের মধ্যিখানে জল খায়, স্নান সারে!
ওরা একজন অন্যজনকে মজবুত খাঁচার ভেতরে দেখে গর্জন করতে ভুলে গেছে! ওরা বুঝে গেছে গর্জন বেশিদূর পৌঁছোয় না!
আমাদের মনের ভেতরের বাঘটা, পোষ মেনেছে বেশ কিছুদিন ধরেই!
ভায়োলেট মুড
অশরীরী আর বায়বীয় আবেগের খাতায় মার্জিন করে দিতে দিতে, মেপে নেই বিকেল বেলার মুড। ক্যালেন্ডারের খোপ করা ঘরগুলো প্রিজন ভ্যানের জানালার মত লাগে, শহুরে বাতাসেরা গোঁ খায়, তারাদের আলো বিলাতে ঠেকা পড়ে না।
তারারা জ্বলবেই।
পা পা করে মেপে নিই পথ, আধপোড়া চাঁদের টিপ নিয়ে আকাশ জেগে রয় রাতভর। চাঁদ, গোধূলির রঙের মতো গায়ের রঙ নিয়ে চেয়ে থাকো কার পানে, বলো?
বৃহস্পতি কী তোমার বন্ধু হবে! জানো না বুঝি- বৃহস্পতির গলায় ঝোলানো চাঁদের সংখ্যা কত?
এই আবরাং-জাবরাং করে খুঁজে পাবে না সুপার মার্কেট। বেছে নাও ভিত্তিতে কিনে নাও হাল ফ্যাশনের জামা। মেপে নাও খুশির মুড। দোকানে চায়নিজ তালা ঝুলিয়ে দাও, এবার হাতুড়ি ধরবো- চাবিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করবো।
কী রঙ?
তোমার জন্য বেগুনি রঙের আকাশ অর্ডার করেছি, এই এলো বলে! একটা একটা করে মেঘের ভাঁজে গুজে নিও লিটল স্টার আর শুভ রাত্রিদের কথামালা।
সুরভী রায় ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এড করছেন।
কবিতা লেখার পাশাপাশি নাটকে অভিনয় আর শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত।
আরণ্যকের রাঢ়াঙ, ভঙ্গবঙ্গ, স্বপ্নপথিক, কহে ফেসবুক ছাড়াও নিয়মিত পথনাটক আগুনের জবানবন্দি, জল ও জননীর গল্প নাটকে অভিনয় করছেন।
বিভিন্ন রিপারটোরি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। থিয়েটার’৫২- এর নননপুরের মেলায় একজন কমলা সুন্দরী ও একটা বাঘ আসে, নাটনন্দন- এর কৃষ্ণসারথি এবং নারী ও রাক্ষসী, থিয়েটার ফ্যাক্টরির আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে অভিনয়সহ লন্ডন, কোলকাতা মঞ্চেও অভিনয় করছেন।