মিতা চৌধুরী, মেলবোর্ন থেকে: আসছে অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচন। যদিও চলতি লকডাউনের কারণে এই প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে। আগামী ১৭সেপ্টেম্বর মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন নির্ধারিত হয়েছে। আর ৬অক্টোবর থেকে ৮অক্টোবর পর্যন্ত ডাকযোগে এই ব্যালট পাঠনো হবে ভোটারের নিকট। ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা (অস্ট্রেলিয়ান ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) ভোট গণনা শেষ হবে। আর নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৩ নভম্বের।
বাংলাদেশী প্রার্থীগণ :
এইবার আসন্ন এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথম বারের মতো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী প্রার্থী নির্বাচন করছেন। যদিও স্থানীয় বা রাজ্য সরকার নির্বাচনে বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ এই প্রথম নয়, তবে এবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর ইতোমধ্যেই বাংলাদেশী ভোটার ও অভিবাসীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ ও কৌতূহল। নির্বাচনকে ঘিরে এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উত্তেজনা ও নানা জল্পনা-কল্পনা । চলুন দেখে নিই কোন সিটি কাউন্সিল থেকে কে কে লড়ছেন এই আসন্ন নির্বাচনে।
উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিল:
উইন্ডহ্যাম সিটি থেকে এইবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিল বর্তমানে ভিক্টোরিয়ার অন্যতম দ্রুত প্রসারমান এলাকা। গ্রেটার মেলবোর্নের চেয়ে এখানে জমি ও গৃহ মূল্য ১৫% কম হওয়াতে এই এলাকার প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেড়েছে অনেক বেশি আগ্রহ। ২০১৯ এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২৭০,৪৭৮ জন। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই মাইগ্রান্ট বা জন্মস্থান অস্ট্রেলিয়ার বাইরে। ০.৭% লোক বাংলাদেশী বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত। ধর্মীয় দিক থেকে ৪৬.১% ক্রিস্টিয়ান , ৮.৬% হিন্দু, ৭.৩% ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং ২৩% লোক কোনো ধর্মেই বিশ্বাসী নয়। উইন্ডেম সিটি হ্যারিসন, চাফি ও ইমারু এই ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে হ্যারিসন ওয়ার্ডের ভোটার বা জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ১১৯৪৮১ জন যা এই সিটি কাউন্সিলের মোট জনসংখ্যার ৪১.৫%। এই ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অস্ট্রেলিয়ার বাইরে জন্মগ্রহণ করেছেন। বাসায় ইংলিশের বাইরে অন্য কোনো ভাষা বলে এই হিসাবে ম্যান্ডারিন ভাষা আছে এক নম্বরে, দ্বিতীয় হিন্দি ও তৃতীয় পাঞ্জাবি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এই ওয়ার্ড থেকে যেসকল বাংলাদেশী প্রার্থীতা করছেন তারা হলেন
১. জনাব হাসান নাঈম
২. জনাব মফিজুল ইসলাম ঢালী
৩. জনাব জাহিদ মজুমদার
৪. জনাব তৌহিদ পাটোয়ারী

চাফি ওয়ার্ড আছে দ্বিতীয় স্থানে জনসংখ্যার দিক দিয়ে এবং এই ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যাক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন। ইংলিশের বাইরে অন্য ভাষায় কথা বলে এই হিসাবে পাঞ্জাবি আছে এক নাম্বারে আর দ্বিতীয় আছে হিন্দি এবং তৃতীয় এরাবিক। এই ওয়ার্ড থেকে যেসকল বাংলাদেশী এবার লড়ছেন আগামী অক্টোবরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা হলেন:
জনাব ইউসুফ আলী
মিসেস নুসরাত ইসলাম বর্ষা

ইমারু ওয়ার্ডটি আয়তনে উইন্ডহ্যামের সবচেয়ে বড় ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের দুই তৃতীয়াংশ জনসংখ্যাই জন্মগ্রহণ করেছেন অস্ট্রেলিয়াতে। ইংলিশের বাইরে অন্য কোনো ভাষা বলে এই হিসাবে ইতালিয়ান ভাষা আছে এক নাম্বারে। এই ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন:
জনাব সাজেদুল সোহাগ।

অন্যান্য সিটি কাউন্সিলের বাংলাদেশী প্রার্থীগণ:
মিজ সোহেলী সানজিদা লড়ছেন কার্ডেনিয়া সিটি কাউন্সিল থেকে। উল্লখ্য, যে সোহেলী সানজিদা গত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং অতি অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আর মোট জনসংখ্যা ১১২১৫৯ জন। ৫.৩% লোক জন্মগ্রহণ করেছেন যুক্ত রাজ্যে, ১.৮% ভারতে আর ১.৭% নিউজিল্যান্ডে। ১১.২% লোক ঘরে ইংলিশের বাইরে অন্য ভাষায় কথা বলে। মোট জনসংখ্যার ৪৯.৬% লোক ক্রিস্টিয়ান, ১.৫% বৌদ্ধ, ১.২% লোক হিন্দু ও ১% লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

জনাব মাজহারুল চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোনাশ সিটি কাউন্সিল থেকে। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী এই সিটি কাউন্সিলের মোট জনসংখ্যা ২০২,৮৪৭ জন, এবং এর ৪৮.৯% লোক অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অন্য কোনো দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। মোট জনসংখ্যার ১২.৫% চীন, ৫.৩% ভারতীয় ও ১.২% শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত। ১৮.৮% লোক রোমান ক্যাথলিক, ৬.৮% গ্রীক অর্থডক্স , ৬.৮% বৌদ্ধ ৫.২% হিন্দু ও ২.৩% ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

জনাব গোলাম হক লড়ছেন মেল্টন সিটি কাউন্সিল থেকে। উল্লেখ্য, জনাব হক গত রাজ্য নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ১৪৬,৯৮২ জন। মোট জনসংখ্যার ২৪.১% এর পূর্বপুরুষ অস্ট্রেলিয়ান ও ২২.৫% এর পূর্বপুরুষ ইংলিশ, এবং ৫৯.৮% লোক অস্ট্রেলিয়াতে জন্মগ্রহন করেছেন। ৬১.৩% লোক শুধু ইংলিশই একমাত্র ভাষা ৩২.১% লোক ইংলিশ ছাড়াও অন্য কোনো ভাষায় কথা বলে। ৫৬.৮% ক্রিস্টিয়ান, ৪% ইসলাম ও ২.৭% হিন্দু ধর্মের অনুসারী।
সকল ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশীর চোখ এই মুহূর্তে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে। আগামী ১৩ নভেম্বরেই জানা যাবে ফলাফল , সেই পর্যন্ত সকল বাংলাদেশী প্রার্থীর জন্য রইল অশেষ শুভকামনা।