
সরকার ছুটির ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার উপচে পড়ছে গ্রামমুখী মানুষের ভীড়ে। ছবিগুলো শোভা পাচ্ছে পত্র পত্রিকায়, ফেসবুকে। এই ছবি গুলো নিয়ে খুব হাসাহাসি, ব্যপক ট্রল হচ্ছে। এমন কি ভয়ানক ভাবে গালাগালিও হচ্ছে। কেউ কেউ তো এই ছবি গুলো নিয়ে বড় বড় গদ্য লিখে প্রচুর শেয়ার, কমেন্ট, লাইক ইনকাম করছেন।
আমি নিজেও এদের সাথে সাথে ছবি গুলো দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছিলাম। এদের সাথে আমিও মনে মনে রেগে গিয়ে বলেছিলাম কেনো আমাদের দেশের মানুষ গুলো এমন? কেনো তারা সচেতন না? কেনো এতো বেখেয়ালী? এই দূর্যোগের সময়ও এদের হুস হবেনা? কিন্তু একদিন পরই আমি এমন হওয়ার কারণ খুঁজে পেলাম। আমার মনে হলো আসলে এদের কিছু করার নেই। এরা অসহায়। একবার চিন্তা করে দেখুন তো ঢাকা শহরে কত লোক বাস করে? কোটি কোটি লোক তাইনা? আর কয়টা লোকের নিজের বাড়ি আছে? বাড়ির কথা বাদ দেওয়া যাক সেটা না হয় ধনীদের জন্য। কিন্তু ভাবুন তো কত লোক ভাড়া থাকে? আর একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখুন তো কতজন লোকের ঘুমানোর জায়গা আছে? সরকারকে এই দূর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য অফিস, কারখানা, গার্মেন্টস, রেস্টুরেন্ট এমন কি দোকান পাঠ পর্যন্ত বন্দ করে দিতে হয়েছে। আপনি, আমি কি জানি রেস্টুরেন্ট গুলোতে কাজ করে খায় কত মানুষ? হাজার হাজার মানুষ। এমন কি কাজের শেষে তারা কোথায় ঘুমায়? তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টেই ঘুমায়। শুধু রেস্টুরেন্ট নয় এমন শত শত শ্রেণীর মানুষ আছে। একবার চিন্তা করুন তো এই মানুষ গুলো এখন কি খাবে এবং কোথায় ঘুমাবে? আরো যদি মোটাদাগে বলি তাহলে হিসাবে দেখা যায় ঢাকা শহরে শুধুমাত্র দিন মুজুর হয়ে কাজ করে কম করে হলেও পঞ্চাশ লক্ষের মতো মানুষ। তারা কি করে চলবে একবার কি আমাদের সরকার, এমনকি আমরা ভেবে দেখেছি? না দেখিনি।

এখন কথা হল এই মানুষ গুলো কাজ হারালো। কাজের পাশাপাশি কিন্তু তারা তাদের রাতের ঘুমানোর জায়গাও হারালো। তাহলে এই মানুষ গুলো যাবে কোথায়। গ্রামের বাড়ি ছাড়া কি আসলে তাদের যাওয়ার জায়গা আছে? কেউ কি তাদের জায়গা দিবেন? না দিবেন না। তারা অন্তত গ্রামে এটাসেটা করে খেতে পারবেন। নিজের বাপ- দাদার ভিটেতে ঘুমাতে পারবেন। তাই নয় কি?
হ্যাঁ, এখন আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন তাই বলে কি সারা বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারি করোনা? না একদম না। সেই প্রশ্ন কর্তা ব্যক্তিদের জিজ্ঞেস করেন। কারণ যখন বিদেশ থেকে এক লক্ষ তেরানব্বই হাজার বিদেশ ফেরত মানুষ গেলো তখন তারা কই ছিল। কেনো তাদেরকে যেতে দেওয়া হলো, আর যেতেই যখন দিলেন কেনো তাদের কে একটা নিয়ম নীতির মধ্যে নিয়ে আসা হলোনা? এখন তো সেই দায় এই সহজ সরল মানুষদের উপর বর্তাতে পারেনা তাইনা।
আরিফুর রহমান
ঔপন্যাসিক; বার্তা সম্পাদক, প্রশান্তিকা।