মাশরাফি, আরও একবার লেখা হোক আপনার যুদ্ধ জয়ের গল্প । সাদাত হোসাইন

  
    

 

সাদাত হোসাইন

প্রথম প্রথম খুব চমকে উঠতাম। এখন গা সওয়া হয়ে গেছে। তখন ভাবতাম, কোথায় কোন মানুষটা আক্রান্ত হলো? পত্রিকার পাতা, টেলিভিশনের সংবাদে সারাক্ষণ চোখ আটকে রাখতাম, এই বুঝি নতুন কোনো খারাপ খবর এলো!

এখন আর রাখিনা। মৃত্যু সংবাদেও না!
শুনতে কেমন নিষ্ঠুর শোনায়, কিন্তু কথা সত্য। এখন চেনা পরিচিত লোকগুলোর কথা শুনি, টেলিভিশনের পর্দায় দেখা বরেণ্য লোকদের কথা শুনি, ফেসবুকে অচেনা মানুষের ছবি দেখি। দেখে দেখে অভ্যাস হয়ে গেছে। করোনা কতকিছু শেখালো, নির্মমতা যেমন, তেমন মমতাও। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নির্বিকারত্বও। আমার কেনো যেন মনে হয় এই নির্বিকারত্ব ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই। নাহলে এতো শোক আমরা সইবো কী করে? আমরা কার কাছে যাবো? কে আমাদের খানিক সাহস দেবে? নির্ভরতা দেবে? আছে কেউ? নেই। আমাদের আসলে ‘কোথাও কেউ নেই’।

হয়তো সে কারণেই নির্লিপ্ত হয়ে যাওয়াই ভালো। অজস্র জরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখে আমরা শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকবো। দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখবো। ভাববো, ‘সেই সে মিছিলে, তুমিও কি ছিলে?’
আসলেই কেউ ছিলো কিনা, সেটা সময় বলবে। তবে আজ একটা খবর যেন কিছুটা বলে গেলো। হঠাৎ করেই তুমুলভাবে নাড়িয়ে দিলো। মাশরাফি বিন মর্তুজা আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। শুনে সেই প্রবল নির্বিকারত্ব ছাপিয়ে কেমন অস্থির লাগতে শুরু হলো। সেই অস্থিরতাই হয়তো জানিয়ে দিলো, ‘আমাদের কোথাও কেউ নেই’- কথাটা সর্বৈব অর্থে হয়তো সত্য নয়। হয়তো কেউ কেউ আছেন। যাদের দেখে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে হয়। নির্ভরতায় নিশ্চিন্ত হতে ইচ্ছে হয়।
মাশরাফি বিন মর্তুজা- তাদের একজন। নড়াইল-২, কেমন ভোজবাজির মতো পালটে দিলেন। দারুণ দারুণ সব উদ্যোগ নিলেন। ছুটে বেড়ালেন মানুষের কাছে। অভিনব করোনা টেস্টিং ও হেল্প বুথ স্থাপন করলেন। আরও কত কী!
হয়তো, এই যে খানিক নির্ভরতার আলো ছড়িয়ে দেয়া, খানিক সাহস হয়ে ওঠা, ওইটুকুই আবার নাড়িয়ে দিলো। আমরা যে ওইটুকুই চাই।
প্রিয় মাশরাফি বিন মর্তুজা, আপনি আজন্ম যোদ্ধা। অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণার বাতিঘর। সেই বাতিঘরের আলো আরও বিচ্ছুরিত হোক। আরও একবার লেখা হোক আপনার যুদ্ধ জয়ের গল্প।
আমরা সেই গল্পের অপেক্ষায়…

সাদাত হোসাইন
নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক
বাংলাদেশ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments