মাহাদী ও মোজাফ্ফরের চিরবিদায় অসংখ্য মানুষের ভালোবাসায়

  
    

প্রশান্তিকা রিপোর্ট: প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ শিকার করতে প্রাণ হারিয়েছেন সর্বজন প্রিয় দুই যুবক মাহাদী খান এবং মোজাফ্ফর আহমেদ। আজ সকাল ১১ টায় মোজাফ্ফরের এবং দুপুর ১২টায় ছিলো মাহাদীর নামাজে জানাজা। বৃষ্টি এবং করোনার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শত শত মানুষ তাদের জানাজায় উপস্থিত হয়।

লাকেম্বার বড় মসজিদে জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মোজাফ্ফরের দেহ। ছবি: আমিনুল ইসলাম রুবেল।

লাকেম্বার বড় মসজিদে মোজাফ্ফর আহমেদের জানাজায় অংশ নেন তাঁর বড় ভাই সহ অসংখ্য বন্ধু, আত্মীয় এবং পরিচিত জনেরা। এসময় তাঁর বড় ভাই সমাগত মানুষের উদ্দেশে মোজাফ্ফরের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন এবং জীবিত সময়ে কারও সাথে ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করে দেবার অনুরোধ করেন। জানা গেছে, পারিবারিক সিদ্ধান্তের কারণে মোজাফ্ফরের দেহ বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাঁর দেহ ফেনীতে তাঁর অপেক্ষমাণ বাবা মায়ের কাছে চলে যাবে।

সিডনির রকউড কবরস্থানে জানাজায় ছেলে মাহাদীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন তাঁর বাবা। ছবি: আমিনুল ইসলাম রুবেল

আজ বৃষ্টিভেজা দিনে বেলা ১২টার দিকে সিডনির রকউড কবরস্থানে মাহাদীর জানাজা শেষে সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত মানুষ তাঁর জানাজা ও দাফনে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, স্মরণকালে কারও জানাজায় এতো মানুষ অংশ নেননি। লাকেম্বার প্রিয় বন্ধু মাহাদীর জন্য অনেকেই চোখের জলে তাকে বিদায় জানান। সমাগত মানুষের উদ্দেশে মাহাদীর বাবা কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, “ মাহাদী আমার ছেলে, গত ৩০ বছর আল্লাহ আমাকে ওর লালন পালন করতে দিয়েছিলো। আজ ৩০ বছর পরে আমার বুক ভরে গেছে বেদনায়। আপনারা দোয়া করবেন ওর জন্য। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ও যদি কোন অপরাধ করে থাকে আপনারা দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন, আমি ওর হয়ে আজ করজোরে মাফ চাইছি। কারও কাছে কোন পাওনা থাকলে আমাকে বলবেন যেনো পরিশোধ করতে পারি।” জানাজা শেষে শত শত মানুষ মাহাদীর মুখ দেখার জন্য ভীর করেন। অনেকেই এসময় ডুকরে কেঁদে উঠেন।

প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউয়ে প্রাণ হারান মাহাদী (বায়ে) এবং মোজাফ্ফর।

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় সিডনির অদূরে পোর্ট ক্যাম্বালার হিলস্ সিক্সটি লুকআউটে মাছ ধরতে গিয়ে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে সমুদ্রে ভেসে যান মাহাদী ও মোজাফ্ফর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাহাদীর। হাসপাতালে নেয়ার পরে মারা যান মোজাফ্ফর। মোজাফ্ফর সিডনির বাংলাদেশী অধ্যুসিত লাকেম্বায় গ্রোসারি শপে কাজ করতেন এবং মাহাদী নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘরোয়া কিচেন রেস্টুরেন্ট দেখাশুনা করতেন। দুইজনেই ছিলেন সৌখিন মাছ শিকারী। তারা লাকেম্বায় সবাইকে সেই মাছ খাওয়াতে ভালোবাসতেন। মৃত্যুর প্রায় এক সপ্তাহ পার হতে চলেছে কিন্তু লাকেম্বায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে মাহাদী ও মোজাফ্ফরের জন্য শোকের রেশ এখনও কাটেনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments