খুব মনে পড়ে মা।এই হিমশীতল সকালে তোমার প্রয়ান হলো। তুমি না-কি মানিক মানিক শব্দ করতে ঐ সময়ে অথচ ফেরারি রাজনীতি ছিলো তখন বাঙলায়।
একটি মৃত বাড়ীর হাহাকারময় ঘোর কুয়াশাময় ভোরে পুলিশ ঘিরে রেখেছিলো মেটো পথ।ঘিরে রেখেছিল ঘরের দরোজা জানালা।
ভিত সন্ত্রস্ত আওয়ামী প্রাণ জনতা তখনো অধির আগ্রহ তোমাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে,কাচারি ঘরে সুর করে কোরান তেলোয়াত হচ্ছে,জানাজার আয়োজনে আশংকা ও অপেক্ষা একজনের জন্য।
আমি যে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কর্মী, তারা আজ ক্ষমতায়। তখন কত ভয় শংকা শংসয় কে তোয়াক্কা না করে অকুতভয়ে তারা এসেছিলো জানাজায়।
তুমি আমাকে একবার দেখতে চেয়ে ছিলে, প্রাণভরে মনভরে শুধু একবার দেখার জন্য তোমার কি আকুলতা, অথচ দেখা হলো না আমাদের।এটা এক ধরনের নিয়তি মা, যা আমি মেনে নিয়েছি। তবুও মন কাঁদে মা। গভীর রাতে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে মা পারি না, কন্ঠ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়।
যারা ক্ষমতার অহংকারে, দাপটে আমাকে তোমার জানাজা তেও শংকায় রেখেছিল, সড়কে পুলিশ, জানাজা পরবর্তী কবর দিতে দেয়নি, সেই প্রচন্ড ক্ষমতাধর মন্ত্রী ও মন্ত্রীর চামচা এনামও কি তাদের মায়ের সেবা করতে পেরেছে?পারেনি।
এটাই রাব্বুল আল আমিনের খেলা।
শুধু আজ নয় প্রতিটি ধমনীর রক্তপ্রবাহের সাথে প্রতি মুহূর্তে তোমাকে স্মরি। তোমার জন্য প্রার্থনা করি।
তবে বিশ্ময় কি মা, যাকে প্রতি পালন করে বড় করলে, শিক্ষা দিলে ন্যায় ও সততার, মিথ্যার বিরুদ্ধে হাছা কথা বলার লেখার, সেও আজ রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত পরিবারের সদস্য সন্তানেরা ক্ষমতা অপব্যবহারের মানসে তোমাকেও রেহাই দেয় না। তাদের চোখে এমন সন্তান জন্ম দানের জন্য। তবে আমি এতে ভিত নই, ব্যথিত।
যে মুজিববাদী স্বপ্নকে বুকে লালন করে আমাদের সোনালী জীবন করেছি পার, তা এখনো দুরাহত স্বপ্নের মতো।
তাই পিতা মুজিব বলেছিলেন, সোনার দেশে সোনার মানুষ চাই, পঙপাল চাইনা। আসলে এই বাংলাদেশ ভাটি, পাহাড়, নদী, সাগরের কারণে এই দেশে রাজনীতির নামে পঙপালেরাই থাকবে চিরকাল। মানুষেরা পরাজিত হবে ক্রমাগত।
মা মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি যখন ১৫ আগস্ট এলে বাড়ীতে পিতা মুজিবের নামে ফাতেহা দরুদ ও শিরনি করতে আল্লাহর দরবারে, তাঁর প্রবিত্রতার সাথে চলমান আওয়ামীলীগের ক্ষমতার দৌরাত্বে মুজিবাদর্শের পবিত্রতার অনেক অমিল, গোজামিল দেখি।
পত্রিকায় খবর ছাপে এক প্যাকেট বিরানির জন্যও মারা মারি হয়, যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিরানির প্যাকেটে পিতা মুজিবের ছবি ছাপা হয় উটকো নেতার নামে। আমি ভেবে কূলকিনারা পাই না।
তুমি দোয়া করো মা।একটি সু খবর দি, আমি আমার চোখ ও দেহ মরনোত্তর দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মা এটাও একটি ইছালি ছোয়াব। তুমি খুশি তো। সালাম মা।
মা আজ তোমার সতেরোতম মৃত্যুবার্ষিকী, আল্লাহ যেনো তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে দাখিল করেন এই প্রার্থনা করি। তুমি আমার জন্য দোয়া করো, ক্ষমা করে দিও।
মানিক বৈরাগী
কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
নানির মতো কোমল হৃদয়ের মানুষ অতি নগন্য।
নানী চেয়েছিলো, তার জাতিকুল সম্পদের শিহরের চেয়ে, আদর্শের চূড়ায় আসীন হোক।
আজ এসে মনে হয়েছে তিনি সফল হয়েছেন।।
সৃষ্টিকর্তা নানিকে শান্তিতে রাখুন