মেলবোর্নের স্থানীয় সরকার নির্বাচন: নাগরিক ভাবনা

  
    

মিতা চৌধুরী, মেলবোর্ন: জমে উঠেছে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও তার প্রচারণা। স্বাভাবিকভাবেই এইবারের নির্বাচনী পরিবেশটা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন। এইবার প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে সশরীরে যেতে পারছে না, রয়েছে আরো কিছু বিধিনিষেধ। এইবার সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রার্থীদের প্রচারণা বেশ চোখে পড়ার মতো। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রার্থীরা প্রচার করছেন তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার, পরিকল্পনা, পোস্ট করছেন তাদের ডিজিট্যাল ফ্লায়ার, দিচ্ছেন ভিডিওবার্তা, আসছেন লাইভে। আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই ভোটাররাও রাখছেন তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রার্থীদের এই প্রচারণার প্রতি। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলেই পাওয়া যায় এর প্রমান। প্রায়শই ভোটাররাও সরাসরি প্রার্থীদের প্রশ্ন করছেন তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারের উপর, আবার মাঝেমাঝেই চোখে পরে ভোটারদের সরাসরি হতাশার প্রকাশ অনেক প্রার্থীর সামাজিক প্রচারণাগুলোতে। স্বাভাবিক কারণেই বাংলা ভাষাভাষীরাও আছেন এই তালিকায় যেহেতু এইবারই প্রায় এক ডজনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই আসন্ন নির্বাচনে।
আর তাই প্রশান্তিকা কথা বলেছে ভিক্টোরিয়াতে বসবাসকারী কিছু বিশেষ বাংলাদেশী ব্যক্তির সঙ্গে যারা নিজেদের পেশার বাইরেও বিভিন্নভাবে জড়িত আছেন নানাধরণের সামাজিক কর্মকান্ডে। আমরা তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এই নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা, ইতিবাচক দিক ও ভোটার হিসেবে প্রার্থীদের কাছে তারা কি আশা করেন সেই বিষয়গুলো।

ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম খান
প্রিন্সিপাল ল’ইয়ার
এস আর ল’ইয়ার্স, কনভেয়নসিং এন্ড মাইগ্রেশন সার্ভিস

আমাদের রিজিওনাল ভিক্টোরিয়া ও মেলবোর্নের এই চলমান লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সবার আগে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে যে অনেক নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী প্রার্থীই কিন্তু প্রার্থিতা করছে না। রিজিওনাল ভিক্টোরিয়াতে বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হলেও মেট্রোপলিটন মেলবোর্নের এই ৪র্থ মাত্রার বিধিনিষেধের কারণে নির্বাচনী প্রচারণা কিন্তু মোটেই সহজ বা সুলভ নয় বরং বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। যেহেতু ভিক্টোরিয়ার সকল সিটি কাউন্সিল এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ২০২১ পর্যন্ত স্থগিতের পক্ষে ছিল না, তাই এই অবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে একটু অন্যভাবে। তবে এই চলমান সময় যেখানে ভিক্টোরিয়াকে দুর্যোগপূর্ণ রাজ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন স্থগিত করাটাই বোধকরি কমিউনিটি, ক্যান্ডিডেটস এবং কাউন্সিল’এর জন্য বিচক্ষণ ও বাস্তবিক সিদ্ধান্ত হতো।
আর এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে বলবো, এটি অবশ্যই ইতিবাচক ও আশার কথা যে আমাদের কমিউনিটি থেকে মূলধারার রাজনীতিতে আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা বাড়ছে। আমি মনে করি যে সকল বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে আছেন ও এখানের নাগরিক তাদের আসলে বাংলাদেশী রাজনীতির চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত। এই অবস্থায় আমি আশাবাদী যে বাংলাদেশীরা এখানে মূলধারার রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু এটাও আশা করিনি যে একই ওয়ার্ড থেকে এতজন প্রার্থী যেখানে সংখ্যার হিসাবে কমিউনিটিতে আমরা খুবই একটু ছোট গ্রুপ। প্রার্থীতা করার বা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে প্রতিটি প্রার্থীর উচিত ছিল তার নিজ নিজ কমিউনিটিতে তার অংশদারিত্ব, লোকাল গভর্নমেন্ট বিষয়ে তার পর্যাপ্ত নলেজ এবং তার নিজ ধারণক্ষমতা বিষয়ে বুঝাপড়া করে নেয়া। এই রকম একটি পদে আসতে চাইলে আরো আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নেয়া জরুরি নিজের কর্মপরিধি বৃহত্তর সামাজিক কর্মে সম্পৃক্ত করে এবং নিজ কমুনিটির বাইরে অন্যদের সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে। আমি একটু আগেই যেমনটা উল্লেখ করেছি যে বাংলাদেশী হিসেবে আমরা যেহেতু খুবই ছোট একটি সংখ্যা তাই শুধু বাংলাদেশী ভোটার বা ভোটের উপর নির্ভর করে এই নির্বাচন জেতা যাবে না। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী আমাদের এই উইন্ডহ্যাম সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশী ছিল ১৫৮২ যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৭%। বর্তমানে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়তো ২ বা তিন হাজারে পৌঁছেছে, যা খুব বড় একটি সংখ্যা নয়। এই সংখ্যাটা শুধু বাংলাদেশী লোকসংখ্যার, কিন্তু আমার হিসাবে ভোটার হয়তো হবে ৬০০ থেকে ৮০০ এই উইন্ডহ্যাম সিটিতে। এটা যদিও একটা আনুমানিক সংখ্যা নিশ্চিত সংখ্যা নয়। সুতরাং যেকেউ নির্বাচনে প্রার্থী হবার পূর্বে এই সংখ্যার হিসাবটার উপর সম্মক ধারণা থাকা জরুরি যে জিততে চাইলে অন্তত ২০০০ প্রাইমারি ভোট নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি অবশ্যই প্রার্থীর সামাজিক কর্মকান্ডই বা কমিউনিটির কাজে যথেষ্ট পরিমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও তাকে তার কমুনিটির কণ্ঠ হতে হবে।শুধুমাত্র নিজ প্রচারের জন্য কারো নির্বাচনে অংশগ্রহ করা উচিত হবে না।
তবে যাই হোক , আমি এই আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীর জন্য দোয়া করি যেন তারা তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন।
 
ড: তাসমীহা তরফদার
সেশনাল একাডেমিক, RMIT University

প্রথমত, গত ২০১৬ এর কাউন্সিল নির্বাচন থেকে আমরা বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ দেখছি অনেক বেড়েছে তার আগের বছর গুলো থেকে। এই বিষয়কে আমরা বিভিন্ন ভাবে দেখতে পারি। আমি বলবো এখনকার অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশীরা ফ্রন্টলাইন নির্বাচনে আসার মতো যোগ্য, বিচক্ষন এবং আত্মবিশ্বাসী। আমি তো বলবো শুধু কাউন্সিল নির্বাচন কেন আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে একদিন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টেও আমরা বসবো। যদি আমাদের ভারতীয় ভাই এবং বোনেরা কানাডা এবং  UK এর সংসদের বিভিন্ন মিনিস্ট্রির পদে নির্বাচিত হয় তাহলে আমরাও পারব। বিভিন্ন বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণকে এই আসন্ন নির্বাচনে আমি ভালোভাবে দেখছি। কিন্তু আমি যদি এইরকম সুযোগ যদি থাকতো যে প্রতিটা কমিউনিটি (দেশ ভিত্তিক) থেকে একজন প্রতিনিধিত্ব করবে তাহলে আলাদা কথা ছিল। এই কাউন্সিল নির্বাচন যেটা প্রদর্শন করে সেটা হলো এইখানে সবার সুযোগ আছে সমান অংশগ্রহনের জন্য। সেই জিতবে যার গ্রহণ যোগ্যতা আপামর জনগণের কাছে বেশি।

প্রার্থী  হিসেবে যে ব্যাপার গুলো গুরুত্ব দিবো সেট হলো : তার শিক্ষাগত যোগত্যা, তার সামাজিক কাজের নমুনা, তার সবার কাছে গ্রহণ যোগ্যতা এবং তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

একজন ভোটার হিসেবে আমার প্রত্যাশা খুবই ছোট। আমি মনে করি, যে এই পদে নির্বাচিত হবে তাকে প্রথমে একজন পিপল’স পারসন হতে হবে। তাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে তার ওয়ার্ড এর সমস্যা এবং তার সমাধান করার মতো বিচক্ষন্নতা থাকতে হবে। আমি তো বলবো এই পান্ডেমিক এর পরে একজন কাউন্সিল এর অনেক দায়িত্ব যেমন, যুব সমাজকে কিভাবে বিভিন্ন সামাজিক এবং বিনোদনমূলক কাজে অনুপ্রাণিত এবং ছোট ছোট সময়উপযোগী ট্রেনিং দিয়ে ভবিষতের জন্য তৈরী করা। আমাদের Wyndham সিটির রিপোর্ট (২০১৮/১৯) এ দেখা গেছে, গড় মেলবোর্নবাসীর চেয়ে আমাদের subjective wellbeing কম, তার মানে আমাদের এইখানে আমরা আমাদের জীবন নিয়ে কম সুখী। Wyndham এর মধ্যে অনেক কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে। আরো অনেক পরিসরে আমাদের সামাজিক ইভেন্ট আয়োজন করতে হবে। আমি বলবো এই Wyndham কে আরো সুন্দর, সুখী এবং প্রাণবন্ত করার অঙ্গীকার সব প্রাথীদের অবশ্যই থাকতে হবে। একজন কাউন্সিলরের মৌলিক দায়িত্ব হলো আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখানো যে, ‘আমরা পারি আর আমরা এক এবং আমরা সবাই সমান’।

মামুন আল বদরুদ্দোজা পলাশ
সামাজিক কর্মী ও সাবেক ভিপি ভিক্টোরিয়ান বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশন

প্রথমেই প্রশান্তিকা ও মিতা চৌধুরীকে শুভেচ্ছা।
অনেক ধরণের আলোচনা চলছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ নিয়ে। পজিটিভলি দেখতে গেলে বলবো, ফলাফল যাই আসুক, মেইনস্ট্রিম-এ আগ্রহ বা সম্পৃক্ততা ভালো, ভবিষ্যতে বাংলাদেশীরা আরো বেশি আগ্রহী হোক মেইনস্ট্রিম-এ রাজনীতির জন্য এই আশা করি।
– জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে যিনি অন্য কমুনিটির মানুষদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, বাংলাদেশ কমুনিটির সংস্কৃতি ও কৃষ্টি এবং কমুনিটির সমস্যাগুলো উপযুক্ত ফোরামে উপস্থাপন করতে পারবেন এরকম আস্থা আছে বলে মনে হয়, তাকেই ভোট দেয়া উচিত |

– রেজাল্ট যেমনই আসুক তারা ভোটের আগে ও পরে সবসময় কমুনিটির জন্য কাজ করে যাবেন, এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান ও অন্য কমুনিটির জন্য সারাবছর কাজ করবেন এটাই প্রত্যাশা এবং বার্তা। তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকবে।

মোহম্মদ হাসান রণ
সিনিয়র এডুকেটর, এস.ভি.ই.এস.এইচ, আর.এম.আই.টি ইউনিভার্সিটি।

বহু সংস্কৃতির অস্ট্রেলিয়ায় সামাজিক সুযোগ সকলের জন্য সমান, এমনকি যে কেউ নির্বাচন পরিচালনা করতে ইচ্ছুক তাদের জন্যও একই রকম। যখন আমরা কেবল একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে থাকি, তখন বৃহত্তর সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে বহুসংখ্যক বাংলাদেশি প্রার্থীর একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। আমি মনে করি সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশি একজন শক্তিশালী প্রার্থীর প্রচারের চেয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। কমিউনিটিতে কাজ করছেন এমন সমাজকর্মীদের কাছে এটা খুব শোনা যায় যে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মূলধারার রাজনীতি এবং নীতিনির্ধারণী ক্ষমতাতে প্রতিনিধিত্ব করা উচিত। আমি এই ‘বহুল আলোচিত বক্তব্য’টি বাংলাদেশী প্রার্থী কে কিভাবে নিশ্চিত করবেন তা জানতে আগ্রহী এবং আমার ভোটাধিকার প্রয়োগে এই বিষয়টি একটি বড় স্থান করে নিবে। আসলে আমি আমাদের প্রার্থীদের কাছে বাংলাদেশিদের এই জয়ে কি প্রাপ্তি ঘটবে তার একটা রূপরেখা আশা করি। এই বছর কোভিড-১৯ এর কারণে নির্বাচনী প্রচার মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হচ্ছে। এই উদ্বেগটি উল্লেখযোগ্য যে বেশির ভাগ প্রার্থীরই কাউন্সিলের কাজ সম্পর্কে বিশদ ধারণা নেই। এটিও বেশ পুরানো কথা যে “রেট, রাবিশ, রোডস” কাউন্সিলের ফোকাস হওয়া উচিত। আজকের নতুন স্বাভাবিকতার সময়ে, অনেক প্রার্থী প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই কাজটি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার দাবিদার হলেও আমি মনে করি এটি কোন পার্ট টাইম সমাজ উন্নয়ণ প্রকম্প নয়। কিংবা এই পদ ব্যক্তির সামাজিক প্রতিষ্ঠা পাবার বাহনও নয়। যে প্রার্থী কাউন্সিলরের দায়িত্ব ও কর্তব্য বোঝার জন্য তাঁর প্রশিক্ষণ যে নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত- তা আমাকে উপলব্ধি করবার সুযোগ করে দিবেন; আমার ভোটে আমি তাঁকেই প্রেফারেন্স দিব। এছাড়া গত ৪ বছর ধরে বৃহত্তর কমিউনিটির জন্য প্রার্থী কী করেছেন যাতে তিনি নিজে আর্থিকভাবে উপকৃত হননি সেটিও আমার একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। একজন নাগরিক হিসাবে আমার এলাকার যানজট নিরসন, পরিবেশ, আরো আরো বহু-সাংস্কৃতিক মিলানায়তন, পর্যাপ্ত উন্মুক্ত উদ্যান, প্রাযুক্তিক আধুনিক সুযোগ তৈরি, মানসম্মত ও যুগপোযোগী বিদ্যালয়সহ পরিবার বান্ধব প্রচেষ্টাগুলোই প্রার্থীদের কাছ থেকে আমার প্রাথমিক প্রত্যাশা। বাংলাদেশি প্রার্থীদের এবারের ব্যাপক অংশগ্রহণ অনেকের কাছে আশাব্যঞ্জক মনে হতেই পারে। তবে এই উদাহরণ স্থায়ীত্ব পেলে আগামীবার ৩টি ওয়ার্ড যখন ১৩টি ওয়ার্ডে রূপ নিবে তখন আচানক অনেক নতুন প্রার্থী, ইতোমধ্যে বিগত দিনের হোম ওয়ার্ক করে নেয়া প্রার্থীদের জন্য অযাচিত সমস্যা তৈরি করবে। এইরকম অপ্রস্তুত প্রার্থিতা একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়কে বহু সংস্কৃতির সমাজে প্রতিনিধিত্বে সহায়ক হয় কি না তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে। এবারের মত জট রোধে অক্টোবরের নির্বাচনের পর আমি নিজে এবং আরো সবাইকেই সামাজিকভাবে শরিক হতে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি।

ডাঃ আজিজ রহমান
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অফ পাবলিক হেলথ, ফেডারেশন ইউনিভার্সিটি  

অস্ট্রেলিয়া একটি বহুজাতিক দেশ। সেখানে যেকোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ আমাদেরকে জাতি হিসেবে যে গর্বিত করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণকে আমি প্রথেমেই সাধুবাদ জানাই। যেসব প্রার্থীরা নিজেদেরকে যোগ্য মনে করে সামনে এগিয়ে এসেছেন, তারা অবশ্যই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে একই ওয়ার্ড থেকে একাধিক বাংলাদেশী প্রার্থীদের অংশগ্রহণ আমাদের কমিউনিটিতে নিঃসন্দেহে একটি বিভাজন তৈরি করেছে, যা আমার কাছে একটি উদ্বেগের বিষয়। অনেক প্রার্থীর অংশগ্রহণকে মনে হয়েছে অপরিপক্ক চিন্তার প্রতিফলন।

যেকোনো নির্বাচনেই জনপ্রতিনিধি চয়নের ক্ষেত্রে আমি যে বিষয়টিকে সব সময় গুরুত্ব দেই, সেটি হলো প্রার্থীদের যোগ্যতা। যেহেতু এই যোগ্যতা নির্ধারণের কোনো মাপকাঠি নেই, তাই বিভিন্নজন বিভিন্ন মাপকাঠিতে যে যোগ্যতা বিচার করবেন সেটাই স্বাভাবিক। শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, কমিউনিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্ব দেবার গুণ, সর্বোপরি ব্যক্তিগত সততা আমার দৃষ্টিতে যোগ্যতার মাপকাঠি। এছাড়াও বহুজাতিক কমিউনিটির সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার সক্ষমতাকে আমি গুরুত্ব দিবো এই নির্বাচনে। আমি নিশ্চিত বেশির ভাগ নিরপেক্ষ বাংলাদেশী ভোটাররাও এভাবেই চিন্তা করবেন। কিন্তু আমার শঙ্কা আছে যে আমাদের প্রার্থীরা এ বিষয়গুলো আমলে নিয়েছিলেন কিনা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবার সময়। নির্বাচনের সময়ে প্রার্থীদের ফাঁকা বুলি আর পরবর্তীতে বাস্তবিক কর্মকান্ডের বিস্তর ব্যবধানের যে ইতিহাস, তার সাথে নিদেনপক্ষে ভিক্টোরিয়ার বাংলাদেশীরা পরিচিত, তাই নিরপেক্ষ ভোটাররা এই বিষয়টাও আমলে নিবেন আমি নিশ্চিত।

একজন ভোটার ও একজন নাগরিক হিসেবে চাইবো যে প্রার্থীরা সারা বছর বাংলাদেশী সহ অন্যান্য কমিউনিটির জন্য কাজ করে যাবেন, তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাবেন কাউন্সিলে এবং এলাকার উন্নয়ন ঘটাবেন, যদি তারা নির্বাচিত হন। আর যদি তারা নির্বাচিত না হন, তাহলেও আমি চাইবো যে প্রার্থীরা তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখবেন। আনুষ্ঠানিক পদবি ছাড়াও কমিউনিটির জন্য কাজ করা যায়, এই কথাটি যদি আমাদের প্রার্থীরা মনে রাখতে পারেন নির্বাচনের পরেও, তাহলে কিন্তু সারা বছরই কমিউনিটিতে অনেক ভালো ভালো কাজ সম্পন্ন হওয়া সম্ভব। আর এই মন-মানসিকতা থাকলে বাংলাদেশী সহ অন্যান্য কমিউনিটির ভোটাররা ভবিষ্যতে সঠিক নেতৃত্ব চয়নে ভুল করবেন বলে আমার মনে হয় না।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments