মেলবোর্নে করোনা পরিস্থিতি নাজুকঃ সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড

  
    

মিতা চৌধুরী, মেলবোর্ন থেকেঃ মেলবোর্ন সহ ভিক্টোরিয়া রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় মোট ১৮৩৮ জন আক্রান্ত এবং ৫ জন মারা গেছে। করোনার নতুন ঢেউয়ে এটিই রাজ্যের সর্বোচ্চ রেকর্ড। তার আগের দিন আক্রান্ত হয়েছিলো ১৭৬৩।

গত আগস্টের ৪ তারিখে ৮টি সন্দেহভাজন কোভিড রোগী সনাক্তের পর ৬ আগস্ট মধ্য রাতে ভিক্টোরিয়া রাজ্য ষষ্ঠবারের মতো কঠোর লকডাউনে প্রবেশ করে যা এখনো বহাল। দীর্ঘ প্রায় ১০ সপ্তাহ ধরে চলমান এই লকডাউনে, করোনা আক্রান্ত আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। আর এই ক্রমবর্ধমান আক্রান্তের কারণে রাজ্যের স্বাস্থসেবার উপরে তৈরি করছে প্রচন্ড চাপ। এই বাড়তি রোগীদের সামাল দিতে হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

এই অতিরিক্ত রোগী শুধু হাসপাতালের সাধারণ সেবার উপরেই চাপ ফেলছে না, আর কারণে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও এম্বুলেন্স এই সেবাগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে হাসপাতালগুলোতে রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স’এ ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই এই অপেক্ষমান সময় ৫-৬ ঘন্টাও।
ডেল্টা ভেরিয়েন্টের দ্রুত সংক্রমণ হারের কারণে স্বাস্থসেবা দানকারী পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা উল্লেখযোগ্য হারে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজ্যের সুপারশপ চেইনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে রাজ্যজুড়ে বেশ কিছু সুপারশপ (কোলস, এলডি ও উলওয়ার্থস ) বন্ধ রাখতে হবে।  আর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক সুপারশপ প্রথম সারির এক্সপোজার সাইট হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় বিশাল সংখ্যার কর্মীরা আইসোলেশনে থাকতে বাধ্য হয়েছে।
রাজ্যে বৃহস্পতিবার ১৬৩৮টি নতুন সংক্রমণ ও দুইজনের মৃত্যু  রেকর্ড করা হয়েছে, যা মহামারীর সময় দেখা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দৈনিক সংখ্যা। এটি রাজ্যের টানা অষ্টম দিন ১১০০ এরও বেশি সংক্রমণ রেকর্ড করেছে।

গত মাসে নির্মাণকর্মীদের ভ্যাকসিনেশন বিরোধী চলা প্রতিবাদ, মিছিল ও সমাগম এবং এএফএল’র গ্রান্ড ফাইনালের লং উইকেন্ড সংক্রমণকে বিপদজনক হারে বাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্মাণকর্মীদের ইউনিয়ন অফিসের ভবনের বাইরে টিকা বিরোধী সহিংস বিক্ষোভের দুই সপ্তাহ পরে এর প্রধান কার্যালয় থেকে আরও তিনটি পজেটিভ কোভিড -১৯  কেস বেরিয়ে এসেছে। নির্মাণ ইউনিয়নের ভবনের সাথে এখন সাতটি পজেটিভ কোভিড-১৯ রোগীর সংযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন মঙ্গলবার জানিয়েছে, কোভিড -১৯’র এই সংক্রমণ এখন এর সদস্যদের (নির্মাণকর্মীদের) বৃদ্ধ বাবা-মা, চার মাসের শিশু এবং একটি শিশু সহ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

রোডম্যাপ টু ফ্রিডমঃ 
খুব শিগগিরই যে ভিক্টোরিয়া তথা মেলবোর্নিবাসী স্বাধীনতা পাচ্ছে না এটা অনেকটাই পরিষ্কার, যদিও রাজ্য প্রিমিয়ার ড্যান এন্ড্রুস বলেছেন, ক্রিসমাস সবাই পরিবারের সঙ্গে করুক এটাই সরকারের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রিমিয়ার একটি পরিকল্পনা পেশ করেন এই লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। রোডম্যাপের তারিখগুলি ভ্যাকসিন রোলআউট প্রজেকশনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যদি আমাদের ভ্যাকসিনেশন রোলআউট গতি বা ধীর হয়ে যায় তবে এগুলি পরিবর্তন হতে পারে।

বর্তমানে ১৬ বছরের উর্ধে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য উপযুক্ত এমন জনসংখ্যার ৮৪.১৩% অন্তত একটি টিকা নিয়েছে, এবং দুইটি টিকাই নেয়া সম্পন্ন হয়েছে এমন জনসংখ্যার হার ৫৫.৫৫% (সর্বশেষ উপডেট)। কিন্তু কতটা স্বাধীনতা মেলবোর্নবাসী পেয়েছে এই ৮০% লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরে ? মূলত তা খুবই সামান্য কিছু পরিবর্তন।

নিজ আবাস থেকে ১০ কিলোমিটার পরিবর্তে এখন থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যাবে এবং টেনিস এবং গল্ফের মতো যোগাযোগহীন বিনোদনের জন্য খোলা বহিরাগত সুবিধা ছাড়া খুব সামান্য পরিবর্তন হবে।
আপনি যদি পুরোপুরি টিকা নিয়ে থাকেন, ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের জন্য পাঁচজন পর্যন্ত দেখা করতে পারেন। যদি তা না হয় তবে এটি কেবলমাত্র দুজন লোকের পাশাপাশি প্রশিক্ষকের উপর থাকবে। পার্কে সম্পূর্ণ টিকা নেয়া এমন দুই পরিবার সামাজিক সাক্ষাৎ করতে পারবে।

অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে ভিসিই ৩ এবং ৪ বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের, পাশাপাশি চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলগুলোতে অন-সাইট লার্নিং পুনরায় শুরু হবে। সোমবার ১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহে, প্রেপ শিক্ষার্থীদের জন্য সাইট লার্নিং ফিরে আসবে, এরপর বৃহস্পতিবার-শুক্রবার থেকে গ্রেড ১ এবং ২ এর শিক্ষার্থীরা।

১৬ বছরের উর্ধে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য উপযুক্ত এমন জনসংখ্যার ৭০% যখন দুটি টিকাই সম্পন্ন করবে, তখন লকডাউনটি অবশেষে শিথিল হবে বলে আশা করা হচ্ছে, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সীমাবদ্ধ কারণ এবং চলমান কারফিউয়ের অবসান ঘটবে। কিন্তু মেলবার্নিয়ানদের চলাচল তখনও অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত থাকবে, ঘরের চারপাশে ভ্রমণ করার পরিধি ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত হবে।

পাশের রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলস’ এর নতুন প্রিমিয়ার যখন তার রাজ্যের বিধিনিষেধ শিথিল করার নির্ধারিত সময় এগিয়ে নিয়ে আসছে, সেই প্রসংগ টেনে ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ারকেও জানতে চাওয়া হয় এমন পরিকল্পনা ভিক্টোরিয়া রাজ্যের আছে কিনা। জবাবে প্রিমিয়ার ড্যান এন্ড্রুস বলেন যে, প্রতিটি রাজ্যেরই অধিকার আছে নিজ সিদ্ধান্ত নেয়া যেটা সম্পূর্ণই সেই রাজ্য সরকারের এখতিয়ার, ভিক্টোরিয়াবাসীর লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ টিকার গতি ও হার তরান্বিত করা।

বিজ্ঞাপন

 

5 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments