মেলবোর্নে নারীদের উদ্যোগে বসন্তবরণ

  
    

মিতা চৌধুরী, মেলবোর্ন থেকে: বসন্ত মানেই ভালোবাসার দিন, তাই বাঙ্গালীর জীবনে বসন্তের আছে একটি বিশেষ গুরুত্ব। সবচেয়ে কাঠখট্টা মানুষটিও বসন্তে হয়ে ওঠে প্রেমিক, প্রিয়জনের হাতে সেও হয়তো তুলে দেয় একমুঠো রজনীগন্ধা। পৃথিবীর যে প্রান্তেই তাই বাঙ্গালী থাকুক না কেন এই বসন্ত বাঙালীকে করে তোলে ব্যাকুল। ঋতুর পরিক্রমায় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে তাই এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত, যদিও এই দক্ষিণে আসি আসি করছে শরৎ। দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎ আসি আসি করলেও, এখানের বাঙালীর  হৃদয়ে ঠিকই উপস্থিত হয়েছে বসন্ত।

বসন্তবরণ উৎসবে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরা।

এই বসন্তকে সামনে রেখেই মেলবোর্নের পশ্চিমে থাকা কিছু সমমনা নারী গত ১৩ ফেব্রুয়ারী রাতে তাই আয়োজন করেছিল অনলাইন বসন্তবরণের, যার নির্ধারিত দিন ছিল ১ফাল্গুন বা ১৪ ফেব্রুয়ারী যা বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। কিন্তু হঠাৎই মেলবোর্নে আবার আঘাত হানে কোভিড আর তাই মেলবোর্ন চলে যায় ৫ দিনের কঠিন লকডাউনে।

এই বসন্তবরণ ও আড্ডায়  মেলবোর্নের গুণী শিল্পীরা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্য থেকেও বিশিষ্ট শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। মেলবোর্নের পরিচিত মুখ সাংস্কৃতি কর্মী সেজুঁতি জামানের মূল সঞ্চালনায় এই আড্ডা জমে উঠেছিল গল্পে, গানে, কবিতায় আর নৃত্যে। বড়দের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশী ক্ষুদে শিল্পীরাও অংশ নেয় এই বসন্তবরণে। আড্ডার শুরুতেই উদ্দোক্তাদের অন্যতম সমন্বয়ক মিতা চৌধুরী ও সেজুঁতি জামান সকলকে ধন্যবাদ জানান তাদের এই অতি স্বল্প সময়ের নোটিসে সবাই এই আড্ডায় সাড়া দেয়ায়। সাংস্কৃতিক কর্মী ও চিত্রশিল্পী মিতা চৌধুরী বলেন, আমরা জানি যে আমাদের সবার মনেই হতাশা কাজ করছে আমাদের নির্ধারিত দিনে বহু প্রতীক্ষিত বসন্তবরণটি আপাততঃ না করতে পারার কারণে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ ও দায়িত্ব সুস্থ থাকা, নিজ কমিউনিটিকে সুস্থ রাখা ও স্বাস্থ অধিদপ্তর কর্তৃক আরোপিত বিধি নিষেধ গুলো মেনে চলা।

বসন্তবরণ উৎসবে গান পরিবেশন করেন শিল্পী অবনী মাহবুব।

আড্ডায় প্রথমেই গান পরিবেশণ করেন সংস্কৃতি কর্মী ও লেখক ফারিনা মাহমুদ যিনি নিজেও এই উদ্যোগের একজন নিবেদিত কর্মী। ব্রিসবেন থেকে গান পরিবেশন করেন সনামধন্য শিল্পী অবনী মাহবুব। উল্লেখ্য, আজই ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে মুক্তি পেতে যাচ্ছে এই গুণী শিল্পীর একটি নতুন গান। আড্ডায় নাচ পরিবেশন করেন অস্ট্রেলিয়ার সবার পরিচিত গুণী নৃত্যশিল্পী সৈয়াদা সায়রা, উদ্যোক্তারা এই গুণী শিল্পীর কাজে অত্যন্ত মুগ্ধ যে মাত্র ৩ঘন্টার নোটিসে সায়েরা সবাইকে একটি মনোমুগ্ধকর নৃত্য উপহার দেন। কবি ও শিল্পী ওয়াজিহ রাজীব এবং তার ছেলে অরিত্র অঞ্জন দত্তের গান পরিবেশন করেন, আয়োজকরা ওয়াজিহ রাজীবের নিকট আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এত স্বল্প সময়ের নোটিসে এই আড্ডায় যোগ দেয়ার জন্য।

আড্ডায় আবৃত্তি করেন উদ্যোক্তাদের অন্যতম রওনাক রাব্বানী সুবর্ণা। এছাড়া গান পরিবেশন করেন উদ্যোক্তাদের অন্যতম নুসরাত ফারাহ খান তৃনা, রানী ব্যানার্জি , তাসমি ও শারমিন কামাল। উদ্যোক্তাদের অন্যতম নুসরাত ফারাহ খান তৃনা তার সন্তানদের নিয়ে বাড়ির আঙিনায় বসন্ত উপলক্ষে একটু স্ট্রিট আর্ট করেন। তৃনা বলেন, আমার এই কাজটির মূল লক্ষ্য ছিল আমাদের সন্তানদের যারা প্রবাসে বড় হচ্ছে তাদের কাছে নিজ সংস্কৃতিকে ছবির মাধ্যমে উপস্থাপন করা।

আড্ডায় আরো অংশগ্রহণ করেন জীনাতুর রেজা খান, লিন্ডা গোমেজ ,লাবণ্য , নাহারুমা কামাল সাদিয়া, ইসরাত জাহান, আসমা সিদ্দিকা নিপা, ব্যারিস্টার নুরুল ইসলাম খান , ফারহানা, নাসরিন আক্তার, ড. মারজিয়া রহমান নিশু। অনুষ্ঠানে প্রবাসী ক্ষুদে বাংলাদেশী শিল্পী মানহা, ফাতিন, রাহিল , নূর, এশাল ও সায়ান গান কবিতা ও নাচ পরিবেশন করেন।

প্রায় টানা দুই ঘন্টার জমজমাট আড্ডায় চলে এই বসন্তবরণ। সব শেষে এই উদ্যোগের আয়োজকরা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির নারীদের নিয়ে ভবিষ্যতে আরো এই ধরণের আড্ডার আয়োজন করবো যেখানে সাংস্কৃতিক আড্ডার পাশাপাশি প্রবাসী নারীদের মানসিক স্বাস্থ ও সুস্থতা, নারী উদ্দ্যোগ, নারীর স্বাস্থ এই বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাবে। উল্লেখ্য, এই আয়োজকরা বিগত বছরগুলোতে প্রবাসী মহিলাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য ও ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments