
এ্যানি আজিম, মেলবোর্ন থেকে: গত আট বছর ধরে মেলবোর্নে থাকার কারণে বাংলা সাহিত্যের বর্তমান ধারা বা নবীন সাহিত্যিকদের সম্পর্কে স্বভাবতই আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। এর মাঝে প্রশান্ত পাড়ের বাঙ্লা কাগজ, প্রশান্তিকার নাদিরা সুলতানা নদী আপার কাছে শুনলাম, হাল আমলের উদীয়মান কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন অস্ট্রেলিয়া আসছেন। স্বাভাবিক ভাবেই একটা আগ্রহ কাজ করলো। সাদাত হোসাইন সম্পর্কে নিতান্ত কিছু না জেনেই অনুষ্ঠানে গেলাম। প্রথমেই দেখলাম তাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র। আরও শুনলাম তার লেখা দুটি কবিতার আবৃত্তি এবং আমি অনুধাবন করলাম অনুষ্ঠানে না আসাটা কত বড় বোকামি হতো !



সাদাত হোসাইন সাহিত্যিক ছাড়াও তার অন্যান্য পরিচিতি গুলো জানতে পারলাম। একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, আলোকচিত্রী এবং নির্মাতা সাদাত হোসাইন আমাদের শোনালেন তার “জীবনের গল্প, গল্পের জীবন”। তার গল্পের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, লেখার জন্য শুধু পড়া নয়, বরং জীবনের অভিজ্ঞতা গুলোকে নিজের মত করে অনুধাবন করতে হয়, নিজের কল্পনা শক্তিকে শাণিত করতে হয় প্রতিটা মুহূর্তে । সত্যিই তো, জীবন আমাদের সবাইকে তার বাঁকে বাঁকে গল্প দিয়ে যায়। কিন্তু আমরা কয়জন সেই গল্প অন্যকে শোনাতে পারি? সাদাত হোসাইন তার সাবলীল আর সহজ-সরল বাচনভঙ্গি দিয়ে আমাদেরকে জীবনের ছোট ছোট গল্পগুলো শোনালেন, মুগ্ধ করলেন ! অবাক হয়ে দেখলাম, তার জীবনের গল্প গুলো তো আমাদের সবার জীবনেরই এক একটা গল্প। আমরা যারা হুমায়ূন আহমেদ কে পড়ে বড় হয়েছি, তাদের জন্য মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সামাজিক জীবনের গল্প বলার মানুষের এখন বড় অভাব! মেলবোর্ন আসার পর একবারই বইমেলায় যাবার সুযোগ হয়েছিল, ঘুরে ফিরে হুমায়ূন আহমেদেরই একটা পুরনো বই নিয়ে বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম, আবার কি এমন দিন পাব যে নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে নিতে দুরুদুরু বুকে বই খুলে পাতা উল্টাবো!


সাদাত হোসাইন এর সাথে দুই ঘণ্টা কথোপকথনের পর আমি আশাবাদী, নিশ্চিতভাবেই সেই অভাব তিনি অনেকটাই পূরণ করবেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল ছিমছাম, বাহুল্যবর্জিত। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আয়োজকদের আরও মনোযোগী হওয়ার সুযোগ ছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনজন উপস্থাপিকার ভেতরে কো-অর্ডিনেশন বা সমন্বয়ের অভাব কিছুটা হলেও অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। সম্প্রীতি মেলবোর্ন, প্রশান্তিকা ও মুক্তমঞ্চকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ উদীয়মান ও সম্ভাবনাময় এই তরুণকে মেলবোর্নের বইপ্রেমী পাঠকদের সামনে তুলে ধরার জন্য। তারা এই পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখুক এই শুভকামনা রইল।