
ডুবে যাই
আমি ডুবে যাই
নিরন্তর ভাবনায়, আক্ষেপে, আস্ফালন,
ব্যর্থ আন্দোলনে – একঝাক তরুণের সমাজ বদলের ব্যর্থ চেষ্টায়
ভয়ঙ্কর সব দুঃস্বপ্নে প্রতিনিয়তই আমি হারাই
তোমায় – আমায় – প্রিয় দেশ।
আমি ডুবে যাই
অন্যদের ফেলে যাওয়া বিতর্কিত ইতিহাসের জঞ্জালে,
মৃত কথা, স্মৃতি, ভালোবাসা, আবেগে,
হাতড়ে ফিরি ফেলে আসা সময়ে দেশপ্রেমের প্রত্যয়,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মোহে খুঁজে ফিরি এক টুকরো স্বাধীনতা।
আমি ডুবে যাই
বিক্রি হয়ে যাওয়া বুদ্ধিজীবিদের ভিড়ে,
ভণ্ড মানুষ, রাজনীতিবিদ আর প্রশাসকদের মুখোশের আড়ালে,
উন্নয়নের ঝুড়ির তলার ছিদ্র আটকাতে না পারার বেদনাতে,
দুর্নীতির দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে না পারার কষ্টে।
আমি ডুবে যাই
দেশপ্রেমী অবহেলিতদের অপমানে,
মুক্ত দেশের এক শেণীর প্রভুদের প্রবল পরাক্রম,
আগামী প্রজন্মের নষ্ট হয়ে যাবার প্রচন্ড আগ্রহে,
শেনীবিভেদহীনতার পোস্টারে রংচঙ্গা বিভেদের প্রবঞ্চনায়।
আমি ডুবে যাই
নষ্ট এই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমা হওয়া দূষিত নেশায়,
উচ্চ শিক্ষিত বেকার শ্রেণীর অসহায় হতাশায়,
ভালোবাসা শব্দটার উচ্ছ্বাস রক্তমাংশের শরীরে হারিয়ে যাওয়ায়,
অহেতুক লোভ, বঞ্চনা, আর কপটতায় আত্মার নিঃশেষ হওয়ায়।
আমি ডুবে যাই
অতি উৎসাহী অনুপ্রবেশকারীদের দল বেঁচে খাওয়ায়,
ভণ্ড দেশপ্রেমের অন্তরালে গনতন্ত্রের দমবন্ধ খাঁচায়,
মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিলাসী হাতবদলে,
হারিয়ে যাবার ভয়ে থমথমে চেতনায়।
আমি ডুবে যাই
তোমার চোখে ভালোবাসা খুঁজে না পাওয়া স্তম্ভিত সময়ে,
কথা দিয়ে কথা না রাখা অতীতের হারিয়ে যাওয়া কোন এক সুরে,
নষ্ট হয়ে যাওয়া আমার একান্ত ব্যক্তিগত মন নদীর পানিতে,
নষ্ট সমাজের নষ্ট কবিতা, গান, সুর আর অভিমানে।
আমি ভেসে উঠতে চাই, বাঁচতে চাই
আমি চাই ধান্ধাহীন নিরেট খাঁটি মানুষ, নেতা, প্রশাসক,
আমি চাই আমার কণ্ঠস্বরের স্বাধীনতা, কপটতাহীন মুক্ত চিন্তার সমাজ,
আমি চাই নস্ট সমাজের অন্ধকার তাড়ানো শিক্ষার আলো,
আমি চাই বুক ভরে নিশ্বাস নেবার অধিকার…
১০ ডিসেম্বর, মেলবোর্ন।
এই শহরে
অস্থিরতা ভর করে সময়ের ডানায়,
কেবলই ট্রেন ছাড়ার তাড়ায় আন্দোলিত মন;
সুখেরা ভালো নেই স্বার্থপর কষ্টের অরণ্যে,
শুধু ভালোবাসা পথ খুঁজে নেয় – বাতাসের মতো।
পরিশ্রান্ত আমি – তবু ক্লান্তি থেমে থাকে না,
ঘরে ফিরে গেলেও মনে ভর করে শহর;
দুশ্চিন্তায় সর্বক্ষণ কি যেন দলা পাকিয়ে উঠে,
নিদারুন সংশয়ে কাটে স্বপ্নগুলো।
ক্ষমতা আর টাকার মরিচিকা মেঘের মতো ছেয়ে আছে-
মিথ্যার শৈল্পিক সৃজনশীলতায় আচ্ছন্ন সমাজে;
আলো আর অন্ধকার মিলে মিশে একাকার,
ভুলে গেছি শেষ কবে কেঁদেছি বৃষ্টিতে – মিষ্টি আর লোনা জলের প্রস্রবণে
শিশুদের সরলতা কেড়ে নিয়ে রেখে দিই যাদুঘরে,
যন্ত্রময় জীবনে করি ছন্দহীন ব্যস্ততার চাষ;
জোছনা দরজায় হাক দিয়ে ফিরে যায়,
আর আমি নীরবতায় জীবনের হিসেব মেলাই।
৬ই ডিসেম্বর, মেলবোর্ন।
অলংকরণ: আসমা সুলতানা মিতা