রাতের ম্যাকুয়ারী ফিল্ডস ষ্টেশন
সিডনির বাংলাদেশী অধ্যুসিত ম্যাকুয়ারী ফিল্ডস সাবার্ব আবারো খবরের শিরোনাম হয়েছে। এবারের শিরোনামটা হয়েছে এই সাবার্বের রেল ষ্টেশনের ভৌতিক কর্মকান্ড নিয়ে। টেলিভিশন ও নামকরা সংবাদপত্রের সূত্রে বলা হয় এই ষ্টেশনটি বিশ্বের দশটি ভৌতিক ষ্টেশনের একটি।
সিডনির জনপ্রিয় ট্যাবলয়েড পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফ স্থানীয় ‘ম্যাকার্থার ক্রনিকল্স’র উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় গভীররাতে শেষ ট্রেন ষ্টেশন ত্যাগ করার পর এক তরুনীর কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। পত্রিকাটি জানায়, গভীর রাতে চারদিক নির্জন হয়ে এলে কান্নার আওয়াজ প্রথমে আস্তে শোনা গেলেও ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয়। আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ কেউ এমনও দেখেছেন ঐ তরুনী রক্তমাখা পোষাক পড়ে ষ্টেশন জুড়ে ঘুরে বেড়ায় বা কখনও সিঁড়িতে বসে থাকে।
জানা গেছে, ১৯০৬ সালের ১১ জুলাইতে এই ষ্টেশনেই ট্রেনের ধাক্কায় এক তরুনীর মৃত্যু হয়। সেই তরুনীর নাম এমিলি জন্সন। বিশেষজ্ঞদের মতে এমিলির প্রেতাত্নাই নির্জন রাতে কখনো কখনো ষ্টেশন জুড়ে হেটে বা কেঁদে বেড়ায়।
ষ্টেশনের সিঁড়িতে বসে থাকতে দেখা গেছে তাকে
আরবান ঘোস্ট মিডিয়া তাদের ওয়েবসাইটে বলছে, ম্যাকুয়ারী ফিল্ডসে রাতের শেষ ট্রেন যাওয়ার পরে বাতাসে মেয়েটির গোঙ্গানির আওয়াজ শোনা যায়। এই ঘটনার সাথে সিডনির ওয়েকহার্সট পার্কওয়েতে অন্য একটি তরুনী প্রেতাত্নার অস্তিত্বের মিল রয়েছে।
সিডনির দক্ষিণ পশ্চিম দিকের সাবার্ব ম্যাকুয়ারী ফিল্ডস এবং উত্তরের সৈকত বেস্টিত ওয়েকহার্সট পার্কওয়ের তরুনী প্রেতাত্নার ভৌতিক কর্মকান্ড নিয়ে প্রশান্তিকার পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
নিত্য ট্রেনযাত্রী জেমস কুপা
সরেজমিন ম্যাকুয়ারী ফিল্ডস: তখনো রাতের শেষ ক’টি ট্রেন ষ্টেশনে থামছিলো। আশেপাশের চারদিকে বড় বড় বৃক্ষ ও ঝোপঝাড়। ষ্টেশনের আলোতে শুধু প্ল্যাটফর্ম ও ষ্টেশন মাস্টারের অফিস আলোকিত হলেও চারদিকে বলা যায় অন্ধকারে ঢেকে আছে। গাছের ছায়ায় ষ্টেশনের নীচে বেশ আলো আঁধারির পরিবেশ।
তখন প্রায় রাত সাড়ে ১১টার মতো বাজে। সিটি থেকে ক্যাম্বেলটাউনমুখী একটি ট্রেন আসো থামলো ম্যাকুয়ারী ফিল্ডস ষ্টেশনে। বাংলাদেশী অধ্যুসিত হওয়ায় অধিকাংশ যাত্রীই বাঙ্গালী। একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই তার নাম বললেন, আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশী। এই এলাকায় থাকেন প্রায় পাঁচ বছর যাবত। ষ্টেশনে ভূত-প্রেত বিষয়ে তিনি বললেন, ‘ শিফ্টে কাজের জন্য আমি প্রায়ই রাতে ফিরি। ষ্টেশন থেকে নেমেই পার্ক করা গাড়ি নিয়ে বাসায় যাই। না, আমি কখনই কারো গোঙ্গানি বা কান্নার আওয়াজ পাইনি। তবে এটা শুনেছি যে, মানুষ কান্নার শব্দ শুনেছে।’ তবে একদিন রাতে তার গাড়িটি স্টার্ট নিচ্ছিলোনা। তখন রোড সাইট এসিসটেন্ট ‘এনআরএমএ’ মেকানিককে কল করেছিলেন। মেকানিক আসতে আসতে রাত প্রায় দু’টো বেজে গিয়েছিলো। সে সময় গাড়ির মধ্যে বসে থেকে তিনি ষ্টেশনে গা ছমছম করা কিছু দৃশ্য দেখেছিলেন। তবে কোন তরুনী প্রেতাত্নার অস্তিত্ব দেখতে পাননি।
এই ষ্টেশন নিয়ে ডেইলি টেলিগ্রাফের ফিচার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক বাংলাদেশী ডাক্তার ভদ্রমহিলা কখনো রাত করে ষ্টেশনে নেমে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফেরেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘একদিন রাত ৯ টার মতো হবে। আমার সামনে হাটছিলেন আরেক ভদ্রলোক। আশেপাশে নির্জন নিস্তব্ধ। এর মধ্যেই এক তরুনীর কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। সামনের ভদ্রলোক আমাকেই সেই প্রেতাত্না ভেবে এক দৌড়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। তখন আমিও খুব ভয় পেয়েছিলাম। এরকম আগে কখনও হয়নি। তবে শুনেছি ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ঐ মেয়েটার প্রেতাত্না কাউকে ক্ষতি করেনি। তিনি আরো বললেন, কোন এক রহস্যজনক কারনে ষ্টেশনের কর্মচারী বা ষ্টেশন মাস্টার সন্ধ্যার আগেই অফিস বন্ধ করে চলে যান।
সিডনির ওয়েকহার্সট পার্কওয়েতেও একই প্রেতাত্না দেখা গেছে
এবার জিজ্ঞেস করলাম এক অস্ট্রেলিয়ানকে। ট্রেন আসার পরে সকলেই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেলেও ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। এগিয়ে গিয়ে নাম জিজ্ঞাস করতেই বললেন জেমস কুপা। তিনিও বললেন, ‘নো নট হার্ড এনি ক্রাইং অর লাইক দ্যাট।’ তারপর তাকে ডেইলি টেলিগ্রাফের সংবাদটির স্ক্রিনশট দেখালাম। আমার সাথে যোগাযোগের নাম্বার নিয়ে রাখলেন তিনি। কখনো সেরকম কিছু দেখলে তিনি জানাবেন বললেন।
ডেটলাইন ওয়েকহার্সট পার্কওয়ে: ডেইলি টেলিগ্রাফের প্রেতাত্নার বিষয়ে রিপোর্টে অন্য একজন প্রেতাত্না তরুনীর ওয়েকহার্সট পার্কওয়েতে ঘুরতে দেখার খবর রয়েছে। আমার পরিচিত একজন বাংলাদেশী ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে ঐ প্রতেত্নার দেখা হয়েছিলো বলে তিনি দাবি করেছিলেন। তার থেকে শোনা সেই ভৌতিক গল্পটি ছিলো এরকম :
লেট নাইটে ট্যাক্সি চালাচ্ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বাঙ্গালী। ওয়েকহার্সট পার্কওয়ের দুই পাশে ঘন জঙ্গল। সেখানেই এক তরুনী মেয়ে তার ট্যাক্সি থামিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। প্রায় বিশ মিনিট গাড়ি চালানোর পর একটি নির্জন বাড়ির সামনে এসে মেয়েটি নেমে পড়ে। তার বাবার নিকট থেকে ভাড়ার টাকা নিয়ে আসছে বলে সে পেঁছনের গেট দিয়ে ঐ বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারপর অনেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তার দেখা না পেয়ে ট্যাক্সিচালক বাড়ির সামনে দরজায় কড়া নাড়ার পর বের হয়ে আসে বুড়ো ও বুডি দম্পতি। তারা জানালেন ঘরে কেউ প্রবেশ করেনি আর তাদের কোন সন্তানও বেঁচে নেই। চালকের কাছে মেয়েটির শারীরিক ও পোষাকের বর্ননা শুনে সেই দম্পতি বিস্মিত হলেন। তারা বললেন, হ্যাঁ সে আমাদের মেয়ে কিন্তু বেঁচে নেই। প্রায় ২০ বছর আগে সে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। ভদ্রলোক নিজের মেয়ে (প্রেতাত্না )বাড়িতে ফিরে এসেছে ভেবে ট্যাক্সিচালককে প্রাপ্য ভাড়াও দিয়ে দেন।
আমাকে সেই ট্যাক্সিচালক জানিয়েছিলেন, তারপর অনেকদিন তিনি রাতের শিফটে কাজ করেননি।