ম্যারাডোনা: ঈশ্বরের আগুনপাখি । প্রতীক ইজাজ

  
    

অন্য গল্পও আছে তাঁর। ডান বাহুতে স্বদেশী বিপ্লবী চে গুয়েভারার মুখের উল্কি। বাম পায়ে কিউবার মানুষের মুক্তির নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মুখ। অসীম শক্তি সাহসের আধার তারা। শক্ত চোয়াল, নীল জলে নীল মুখ, লাল কৃঞ্চচূড়া। চাইলেই তিনি মুখে আঁকতে পারতেন ল্যাটিন আমেরিকার এই বিপ্লবীদের আইকন। নিজেকে তুলে ধরার জন্য, ফ্যাশন বিবৃতির জন্য, ব্যবহার করতে পারতেন কিংবদন্তীদের আগুনমুখ। করেননি। কারণ এসব বিপ্লবী তার আদর্শ। তাদের থেকেই স্রোতের বিপরীতে, তীব্র সমালোচনার মুখেও, শক্তি পেতেন তিনি আরো অসংখ্য বিপ্লবের, মানুষের মুক্তির আন্দোলনের।

ঘন ঘন কিউবা যেতেন। বিপ্লবী কাস্ত্রোর সঙ্গে ছিল গভীর, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ২০১৬ সালে কাস্ত্রোর মৃত্যুর পর তাকে তিনি ‘দ্বিতীয় বাবা’ হিসাবে অভিহিত করেন। বলেন- ‘কারণ তিনি আমাকে পরামর্শ দিতেন। তিনি-ই আমার কাছে কিউবার দরজা খুলে দিয়েছিলেন’।
নিজেকে কোনওদিন বামপন্থী বলেননি। বরং বলেছেন, তিনি ফিদেল কাস্ত্রোর ভক্ত। বলেছেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই। মৃত্যু পর্যন্ত আমি ফিদেলিস্তা।’ হাতে বড় করে আঁকা চে’র উল্কি বারবার দেখিয়েছেন জনসমক্ষে। হাতে হাভানা চুরুট হাতে একাধিকবার ধরা পড়েছেন ক্যামেরার লেন্সে। তিনি নিজেকে ‘ফুটবলের চে গুয়েভারা’ বলেও অভিহিত করেছেন।

আমি ম্যারাডোনার কথা বলছি। ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। আমাদের কৈশোরে তিনি-ই প্রথম গতির ঝড় তুলেছিলেন মস্তিষ্কে। তার খেলা দেখেই মাঠে দলভুক্ত আমরা। মাঠে ও মাঠের বাইরে উদ্দীপ্ত করেছেন, উদ্দীপনা জুগিয়েছেন। ফুটবল পায়ে গতির ঝড় তোলা এই মানুষটির কারণেই ফুটবলের প্রতি ভালবাসা জন্মায় আমাদের। আমরা আর্জেন্টিনাকে নেই, মেসিকে নেই, নান্দনিক ফুটবলে হাসি, আনন্দ করি। বিশ্বকাপ এলেই আমরা এখনো আকাশী-সাদা জার্সিতে, মেসির মুখচ্ছবিতে হুল্লোড় জুড়ি মাঠে, মাঠের বাইরে।
তিনি ফুটবলের ঈশ্বর। ক্ষ্যাপাটে, প্রথাবিরোধী। মাঠ ও মাঠের বাইরে নানা কীর্তি, কীর্তিময় মানুষে রূপান্তর করেছে তাকে। পুরনো বস্তাপচা প্রথা ভেঙ্গেছেন। সাহসী, স্পষ্টভাষী ছিলেন। যা বিশ্বাস করতেন, অকপটে বলতেন, কর্মসাধন করতেন। তার পায়েই জন্ম গতির, ফুটবলের গতির স্রষ্টা তিনি। ব্যক্তিজীবনের কোন গল্প নেই তার। সবই সার্বজনীন, সব শ্রেণি ও ধর্মের মানুষের। তার পায়েই রচনা হয়েছে শত সহস্র বছরের ফুটবল কীর্তির ইতিহাস।

কিংবদন্তীদের ভালোবাসতেন ম্যারাডোনা। তাদের ভালোবাসার চিহ্ন তাঁর শরীরে উলকি এঁকে রেখেছিলেন।

মাঠ ও মাঠের বাইরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, সমালোচিত হয়েছেন ম্যারাডোনা। মাদক নিয়েছেন, খেলা ছেড়েছেন, নিন্দিত হয়েছেন। আগুন নেভেনি, তেজ কমেনি। খ্যাতির জন্য ছোটেননি, ভাবেননি। তুচ্ছ ছিল অর্থ। নিপীড়িত, অবহেলিত, সৃজনশীল মানুষই ছিল তার সংসার, স্বজন। যেখানে গেছেন, যা করেছেন, আলোর ছাপ রেখেছেন সেখানেই। ইতিহাস গড়েছেন। তাকে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, নিন্দা-ঘৃণা কুড়িয়েছেন। আবার সেই মানুষই বুকে টেনে নিয়েছেন তাকে, আদর-আহ্লাদে মাথায় তুলেছেন। সময় পরম্পরায় সেই মানুষই একদিন গড়লেন বিষ্ময়ের নতুন গল্প। শোকবিহ্বল হলো মানুষ তাঁর এমন প্রয়াণে। চিরঘুমের পর আরেকবার নতুন করে বিষ্ময় জাগালেন তিনি বিশ্বে।
যদিও ম্যারাডোনাকে বলা হয় পলিটিক্যাল ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট; আদতে তিনি ছিলেন বাম রাজনীতিক ও চিন্তক। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ল্যাতিন আমেরিকাসহ দুনিয়াজুড়ে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ও সমাজতান্ত্রিক নেতাদের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন ছিল তার। এদের কারো কারো সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন গভীর বন্ধুত্ব।

আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল কিংবা কিউবা- দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্রপীড়িত এই দেশগুলো নিয়েই বেশি ভাবনা ছিল তার। মনে করতেন, প্রথম বিশ্বের ধনী দেশগুলিই এই দীনতার জন্য দায়ী। কুশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। তাঁর অভিযোগ ছিল স্বয়ং পোপ থেকে শুরু করে সব দেশের রাজনীতিবিদেরা। তাঁর দুঃখ ছিলো, কেউ গরিবদের পক্ষে কথা বলেন না। বার্লিনের প্রাচীর ধ্বংসের পরে সারা পৃথিবীতে যখন দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তা দেখার কেউ না থাকায় ভীষন আক্ষেপ ছিল তার।
মানুষ তাকে ফুটবলের ঈশ্বর ডাকেন। আর তিনি লড়েন দারিদ্রের বিরুদ্ধে, অভুক্ত শিশুর পেটে খাদ্যের যোগানে। সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে ছিলেন সোচ্চার। লড়েছেন সমতার জন্য। ফুটবলে তার প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই কারো। বিতর্ক তুলেছেন, সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু ল্যাতিন আমেরিকায়, আর্জেন্টিনায়, ফুটবলের বাইরেও মানুষ তাকে মনে রাখবেন সাম্যের জন্য লড়ে যাওয়া এক ক্ষ্যাপাটে সাহসী যোদ্ধা হিসেবেও।

২০১৪ সালের ১২ জুন। ব্রাজিলের অ্যারেনা করিন্থিয়ান্স সাও পাওলো-তে ফিফা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে একটি কেবিনে বসেছিলেন ম্যারাডোনা। ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ যখন কথা বলা শুরু করলেন, ঠিক তখনই দামি কেবিনগুলো থেকে একটা হইচই ভেসে এলো। কেন চিৎকার, হইচই-টা কিসের, ঠিক বুঝতে না পেরে আর্জেন্টিনার লোকজন পাশে বসা এক ব্রাজিল কলামলেখকের সাহায্য চাইলেন। তিনি বুঝিয়ে বললেন, প্রেসিডেন্ট নারী হওয়ায় ব্রাজিলের ধনী ব্যক্তিরা তার জেন্ডার নিয়ে ভৎসনা করছেন। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হলেন ম্যারাডোনা। বললেন- ‘এটা অনুচিত, সম্পুর্ণ অনুচিত।’ কয়েক মাস পরে, সে দেশের কংগ্রেসে নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে দিলমাকে অভিশংসনের আবেদনটি গৃহীত হলো। ক্ষুব্ধ ম্যারাডোনা চিঠি দিয়ে জানালেন, তিনি তাকে পুর্ণ সমর্থন করেন, তিনি তার হৃদয়ে।
২৫ নভেম্বর বুধবার ২০২০ সাল। ম্যারাডোনা যখন বিদায় নিলেন চিরতরে, সেই দিলমা রু্সেফ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন এই কিংবদন্তিকে। বললেন, ‘ম্যারাডোনার মৃত্যু সমস্ত ফুটবলপ্রেমীদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। ল্যাটিন আমেরিকা ও কারিবিয়ান মানুষের অধিকার রক্ষায়; সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে যেভাবে লড়েছেন ম্যারাডোনা, আর্জেন্টিনার মানুষ সেই প্রশংসা পাওয়ার অধিকার রাখে।’
ম্যারাডোনার বয়স তখন ৬০ বছর, এ বছরের ৩০ শে অক্টোবর। সেদিনই জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার দেন আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র এল ক্লারিনকে। সাক্ষাৎকারে ভীষন আবেগ নিয়ে আশা করেন, ‘চলে পাওয়ার পর যদি তাকে লোকে ভালবাসতো!’
আহা, ম্যারাডোনা কি জানতেন, তাকে কতটা, কত গভীর ভালবাসে মানুষ। তার ‍চলে যাওয়ার পর কীভাবে মানুষ তাকে স্মরণ করছে, ভালবাসছে, শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। শোকাচ্ছন্ন পুরো লাতিন আমেরিকা। কী গভীর শোক নেমে এসেছে সেখানে। আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস থেকে কিউবার হাভানা, ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে চিলির সান্টিয়াগো; সবখানে, সব টেলিভিশন, সংবাদপত্র- চোখের জলে কীভাবে প্রচার করছে তার ‍মৃত্যুর খবর। কতটা ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে ফুটবলবোদ্ধারা স্মরণ করছে তার প্রতিভাকে, শ্রদ্ধা জানাচ্ছে মানুষ।
ম্যারাডোনা কি জানেন, লাতিন আমেরিকা কী গভীর শোক নিয়ে, বিষ্ময়করভাবে স্মরণ করছে তাকে। কেননা বিশ্বের এই অংশে ম্যারাডোনা শুধু একজন ফুটবলের ঈশ্বর-ই নন; এখানকার মানুষের অধিকার আদায়ে, সামাজিক ও রাজনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় লড়াইয়ে তাদের কতটা কাছের, ঘরের মানুষ!
অনেক আগেই ম্যারাডোনা বন্ধ করেছিলেন তার নান্দনিক খেলা, জাদুর গতি। মাঠ ছেড়েছিলেন। কিন্তু মানুষ তাকে ভোলেনি। তিনি মানুষের কল্পনা, নিপীড়িত দরিদ্র মানুষের উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে শেষদিন অবধি বেঁচে ছিলেন, সমুজ্জ্বল ছিলেন।
যখন তার শারীরীক অবস্থা খুবই খারাপ, রুগ্ন তিনি, তখনও সেই শেষ সাক্ষাৎকারেও করোনা মহামারীকালে স্বদেশের জন্য, দরিদ্র মানুষদের নিয়ে ভীষন উদ্বেগ উঠে এসেছে ম্যারাডোনার। সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্টকে অকপটে বলেন, ‘আমি আমাদের প্রেসিডেন্ট (আলবার্তো ফার্নান্দেজ) -কে বিশ্বাস করি। আমি জানি ক্ষুধা কি। আমি জানি খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকা, দিন অতিবাহিত করা কী কষ্টের। আমি চাই আর্জেন্টাইনদের সুখী দেখতে, কাজে দেখতে, প্রতিদিন খাবার পাক, খুব দেখতে ইচ্ছে করে।’
ম্যারাডোনা চোখ বুজেছেন। শোকে দুঃখে ডুবেছে তার দেশ আর্জেন্টিনাও। শোক জমেছে রাস্তায়, ঘরবাড়িতে, শপিংমল-বাজার-খেলার মাঠে, মানুষের চোখে। আর্জেন্টিনার বামপন্থি প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে গেছেন, আমরা তাতে প্রচন্ডরকম খুশি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আপনি আমাদের মাঝে ছিলেন, এর চেয়ে আনন্দের গর্বের আর কী হতে পারে। আমরা আপনাকে আজীবন মিস করবো।’
ঔপনিবেশিকতা ও দাসত্বের ইতিহাস লাতিন আমেরিকার। ফুটবল সেখানে ধর্মের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯ শতকে দেশটিতে ফুটবল আসার পর, ফুটবলই হয় দারিদ্র বিমোচনের একমাত্র পথ। সে দেশের প্রজন্মকে বেঁচে থাকার আশা জুগিয়েছে ফুটবল, বিশেষ করে ভুল পথে বিপথে যাওয়া প্রজন্মকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে, ফিরে এনেছে আনন্দময় জীবনে। আর সেই ফুটবলের-ই প্রতিভু ম্যারাডোনা। যে দেশ ছিল সমাজের নিচু সিঁড়িতে, ম্যারাডোনা তার খেলা ও বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে, শ্রম মেধা দিয়ে, সে দেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বালয়ে।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসের শহরতলির একটি বস্তিতে জন্ম। মাত্র নয় বছর বয়সেই বিষ্ময়করভাবে ফুটবল পেয়ে বসে তাকে। আর ১৬ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার ফুটবলার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরেরটা ইতিহাস, বিষ্ময়কর। কিন্তু ম্যারাডোনা কখনো ভোলেননি তার জন্মের ইতিহাস, কোথা থেকে এসেছেন, কী তার পরিচয়! এই যে দুনিয়াজোড়া তারকাখ্যাতি, দেশ-বিদেশে সুনাম, ফুটবলের ঈশ্বর তিনি- এসব কোনকিছুই বদলাতে পারেনি তাকে। কখনোই তিনি মিশে যাননি সেই উচু শ্রেণিতে, নিজেকে সেই শ্রেণির ভাবেননি কখনো। অবলীলায় তুচ্ছজ্ঞান করেছেন এতসব অর্জন। খেলা বাদ দিয়ে, তুলে রেখে বুট, তিনি নিজেকে রূপান্তর করেছেন সক্রীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে।
মৃত্যুর কিছুদিন আগেও সার্বিয়ান সংবাদপত্র পলিটিকায় দেয়া এক অকপট সাক্ষাৎকারে ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘বুয়েনস আইরেসের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত অংশ ফ্যাবেল ফিওরিটোতে আমার জন্ম। অঞ্চলের দারিদ্রের রূপ এখনও আগের মতোই আছে, বন্ধুরা এখনো সেই আগের মতোই আছে। শুধু রাজনীতিবিদ আর সরকারি লোকেরাই দিনদিন ধনী হয়েছে।’সহজ স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ‘ধনী হওয়ার সুযোগ আমারও ছিলো। কিন্তু আমি সুযোগ নিইনি, কারণ সেটা করতে গেলে আমায় গরিবের পেটে লাথি মেরে তাঁদের কাছ থেকে চুরি করতে হত।’
পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার দু’দিন আগে তিনি গেলেন আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেস্টর কির্চনারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে। ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর মারা যাওয়ার দু’মাস আগেও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার। সে সময় তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে বললেন, ‘তিনি ছিলেন একজন গ্ল্যাডিয়েটার। তিনি চে গুয়েভারার থেকে শিখেছিলেন, কি তার আদর্শ।’ আর্জেন্টিনার অনেক সাফল্যের কারিগর কির্চনারের সঙ্গেও ছিল ম্যারাডোনার সখ্যতা। কির্চনারের নেতৃত্বেই দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।
কিউবার মহান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ম্যারাডোনার বন্ধুত্বের শুরু ১৯৮৭ সালে। সেবারই প্রথমবারের মতো কিউবা যান ম্যারাডোনা। তার এক বছর আগেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে তার দেশ আর্জেন্টিনার জন্য ফুটবল বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে এসেছেন। তখন দুনিয়া জোড়া তার খ্যাতি। ফিদেল কাস্ত্রোর দিকনির্দেশনাতেই রাজনৈতিকভাবে আরো সচেতন, উচ্চকিত হয়ে ওঠেন ম্যারাডোনা। নিজের আত্মজীবনী এল দিয়েগো উৎসর্গ করেছিলেন যে কয়েকজন মানুষের প্রতি, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো অন্যতম।
১৯৯৯ সালে সমাজতন্ত্রের আরেক বিপ্লবী দেশ ভেনিজুয়েলা দিয়েই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু ম্যারাডোনার। তখন দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর বামপন্থী মোড় নেওয়ার সাথে সাথে ভীষণ ব্যস্ত মানুষ হয়ে ওঠেন, বাম রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছুটে বেড়ান এক দেশ থেকে আরেক দেশে। বাম নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, আদর্শের প্রচারণা চালান, সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে বেশি বেশি কথা বলতে থাকেন।
২০০৫ সালের ৫ নভেম্বর। আর্জেন্টিনার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন শহর মার ডেল প্লাটাতে আমেরিকার ‘আমেরিকার জন্য মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল ঘোষণা’ (Free Trade Area for the Americas-FTAA) শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলন। এই সংস্থা গঠনের মধ্য দিয়ে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্ত বাণিজ্যের নামে লাতিন আমেরিকান সংস্থা এবং রাজ্যগুলোকে চাপ দিতে থাকে আমেরিকান ক্রেতাদের থেকে কাঁচামাল এবং পণ্য কিনতে। জর্জ ডব্লিউ বুশের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল নীতির বিরুদ্ধে ঠিক সেদিনই পাল্টা সম্মেলন হয়। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস এবং ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজের সঙ্গে সে সম্মেলনে অংশ নেন ম্যারাডোনাও। তাদের সম্মেলন সফল হয়। তখন ম্যারাডোনা বলেন, ‘আমি পুরোপুরি বামপন্থী’। এমনকি ফুটবলের এই কিংবদন্তী আরও বলেন যে, লাতিন আমেরিকার এই অঞ্চলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আইকন হয়ে উঠলেন।
আজন্ম আমেরেকিনবিরোধী ছিলেন ম্যারাডোনা। আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তিব্র সমালোচনা করেছেন, দেশটির নানা কর্মকান্ডের তিব্র প্রতিবাদ করেছেন। ২০০৪ সালে ইরাক বিরোধী যুদ্ধ এবং মুক্ত বাণিজ্য বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেন। প্রতিবাদ সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের সামনে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। প্রতিবাদ শোভাযাত্রায় হুগো চেভেজকে ঘিরে রেখেছিলেন, ‘স্টপ বুশ’ লেখা টি-শার্ট পড়েছিলেন এবং মাইকের কাছে গিয়ে জোর গলায় বলেছিলেন- ‘জর্জ বুশের আবর্জনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এ্ই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পেরে আর্জেন্টিনার একজন নাগরিক হিসেবে আমি গর্বিত।’
দক্ষিণ আমেরিকার মতো আর কোন মহাদেশ তাৎক্ষনিকভাবে যাদুকর ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করতে পারেনি। অন্য সবার একই গল্প- দারিদ্রতা নিয়ে জন্ম, খেলার একই কৌশল, ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর সাথে বহু মিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে স্বাক্ষর, ফুটবলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, সবশেষে ক্লান্ত পা নিয়ে ঘরে ফেরা। এসব গৎবাধা প্রথায় থাকেননি ম্যারাডোনা, সে পথে হাঁটেননি কখনো। তাঁর জাদুকরি পা ফুটবলকে দিয়েছে নতুন গতি। ফুটবল খেলেও যে দারিদ্র ঘোচানো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মূলত তাঁকে দেখেই আর্জেন্টিনার পরবর্তী একটা প্রজন্ম নেশার জগৎ থেকে দূরে সরে পায়ে তুলে নিয়েছিলেন ফুটবল।
ভয় পাননি। ক্লাবে থেকে ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। খেলা ছাড়ার অনেক আগেই ‘ফিফা’কে ‘মাফিয়া’ বলেছেন। ২০১৫ সালে যখন ফিফার দুর্ণীতি প্রকাশ হয়, তারও বহু আগেই ম্যারাডোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন ফিফার কুকীর্তি। এমনকি পেলে ও জিকোর মতো খ্যাতিমান ফুটবলাররাও যেখানে ফুটবল জগতের অন্যায়ে চুপ থেকেছেন, নিরবে সমর্থন দিয়েছেন, সেখানে ম্যারাডোনা অনবরত কথা বলেছেন ক্লাবগুলোর অতিরিক্ত মুনাফার বিরুদ্ধে, সাধারণ মানুষের কল্যান ও খেলোয়ারদের অধিকারের পক্ষে। এ ব্যাপারে লাতিন আমেরিকার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কিংবদন্তি উরুগুয়ান লেখক এডুয়ার্ডো গ্যালানো বলেছেন, ম্যারাডোনার এসব প্রতিবাদ ক্ষমতাসীনদের অস্বস্তিতে ফেলেছে, বিশ্বব্যাপি নাড়া দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশের বামপন্থী সরকার ডানপন্থী রাজনীতির উত্থানের মুখে পড়ে। এ সময় ম্যারাডোনা বামদের রক্ষা করতে এবং ডানপন্থীদের আক্রমণ করার কোনও সুযোগ হাতছাড়া করেননি। এমনকি তার জন্মভূমি আর্জেন্টিনাতেও এসবের প্রভাব পড়তে দেখা যায়। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাকরি তার সময়কালে সে দেশের মানুষের ওপর যে নব্যতাবাদী নীতিমালা চাপিয়ে দেন; তার প্রতিবাদে ম্যারাডোনা তখন থেকে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ডানপন্থী নেতার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি করেন। কেননা এই নীতির কারণে আর্জেন্টিনার দরিদ্র মানুষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ম্যারাডোনা এসবের জন্য সরাসরি মরিসিও ম্যাকরিকে দোষারোপ করেন এবং বলেন, ‘তার সিদ্ধান্তগুলি আর্জেন্টিনার দুই প্রজন্মের জীবন কেড়ে নিয়েছে।’ এই ম্যাকরিও গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের কাছে পরাজিত হন।
রাজনৈতিক দর্শন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ম্যারাডোনা নিজেকে শুধু স্বদেশেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। ঘন ঘন ব্রাজিলে গেছেন। বিরোধীমতকে দমন করতে সে দেশের সরকারের ‘অপারেশন কার ওয়াশ’র বিরোধীতা করেছেন। ‘রাজনৈতিক ও আইনী নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার পক্ষে বারবার সমর্থন প্রকাশ করেছেন। ম্যারাডোনার  মৃত্যুতে প্রথম যারা শোক প্রকাশ করেন, তাদের মধ্যে ব্রাজিলের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলাও ছিলেন। এই কিংবদন্তীর প্রয়ানে গভীর শোক প্রকাশ করে লুলা বলেন –‘খেলার বাইরেও তিনি ব্রাজিলের দুর্দান্ত বন্ধু ছিলেন। তার জীবনের গভীরতা এবং লাতিন আমেরিকার সার্বভৌমত্বের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি প্রশংসনীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমন ফুটবল খেলোয়ার খুব কমই দেখেছি যিনে খেলা ছেড়েও ছাড়েননি, থামেননি। মাঠের বাইরেও ম্যারাডোনা খেলেছেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতামত, সমালোচনা ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে খেলা অব্যাহত রেখেছেন। পৃথিবীর দরিদ্র মানুষের জন্য ভিন্ন খেলা খেলেছেন, লড়েছেন।’
তিনি কখনও তার রাজনীতি, রাজনৈতিক দর্শন গোপন করেননি। লাতিন আমেরিকার বামপন্থী নেতাদের মিত্র হিসাবে দেখেছেন। একবার বলেছিলেন, ‘ফিদেল কাস্ত্রো একজনই, লুলা, চাভেজ একজনই। আর কোন কাস্ত্রো, লুলা বা চাভেজ নেই।’
ভেনিজুয়েলার মার্কিন বিদ্বেষী প্রয়াত সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজকে তার রাজনৈতিক জীবন জুড়ে সমর্থন দিয়েছেন। ২০০৫ সালে চাভেজের সাথে সাক্ষাতের জন্য তিনি ভেনিজুয়েলাও গিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে চাভেজের টক শোতে উপস্থিত হয়েছিলেন। নিজেকে চাভেজে বিশ্বাসী ‘চ্যাভিস্তা’ বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘ফিদেল, চাভেজ যা করে, আমার কাছে সেগুলোই ঠিক।’ওই টকশো’তে ম্যারাডোনা আরো বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা কিছু, তার সবকিছুকেই আমি ঘৃনা করি, আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে অমি ঘৃনা করি। তার এই অকপট উচ্চারণ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে তখন।
ভেনিজুয়েলার ২০১৮ সালের নির্বাচনে, ম্যারাডোনা চাভেজের উত্তরসুরী নিকোলোস মাদুরোর পক্ষ নেন। অংশ নেন নির্বাচনী প্রচারণায়। ওই নির্বাচনে চাভেজের বিরোধীশক্তিরা জোর করে ভেনিজুয়েলার ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়। সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো চাভেজই ক্ষমতায় আসেন।
২০০০ সালে কিউবায় চিকিৎসা নিতে অনুমতি পেয়েছিলেন ম্যারাডোনা। সেখানে চার বছর মাদকাসক্ত নিরাময়ের চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে এই কিংবদন্তী ফুটবলার তাকে বাঁচানোর জন্য কিউবার চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ফিদেল কাস্ত্রোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত বছর বরখাস্ত হওয়ার আগে পযন্ত, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল, সমাজতান্ত্রিক দেশ বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের সঙ্গেও দীর্ঘসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো কিংবদন্তি ম্যারাডোনার। সমাজতান্ত্রিক নেতা মোরালেস ছিলেন বলিভিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আদি ও মূল জনগোষ্ঠীর একজন প্রেসিডেন্ট। ২০০৮ সালে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজে মোরালেস আয়োজিত একটি দাতব্য ম্যাচে খেলেছিলেন ম্যারাডোনা। অধিক উচু স্থানে ফুটবল খেলার ব্যাপারে ফিফা তখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। কারণ বলিভিয়ায় কোন খেলা খেলাতে চায় না। সংস্থাটির এমন নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ হিসেবেই বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট মোরালেস ওই প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করেছিল। লা পাজ পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতার রাজধানী শহর। পরে মোরালেস ও ম্যারাডোনার যৌথ প্রতিবাদের মুখে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ফিফা।
ভ্যাটিকানের পোপ জন পল এবং পোপ ফ্রান্সিসের সরকারের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি ম্যারাডোনা। বেশ কয়েকবার কঠোর সমালোচনা করেছেন তাদের। ২০০৫ সালে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘আমি ভ্যাটিকানে গিয়ে সোনার সিলিং দেখেছি। অথচ পোপকে বলতে শুনেছি তাদের গীর্জা দেশের দরিদ্র শিশুদের জন্য উদ্বিগ্ন। এটা কি? তা হলে তারা সিলিং বিক্রি করে দিক!’
এক দশক পরে, ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিসের আমলে সেই ভ্যাটিকান সিটিতে এক প্রীতিম্যাচ খেলতে যান ম্যারাডোনা। সেবারও তিনি আগের মতোই সে দেশকে নিয়ে সেই একই সমালোচনা করেন। সেবার স্পেনের পত্রিকা এল পেইসকে বলেন, ‘আমি ভ্যাটিকানে গিয়ে সেই সোনার ছাদটি দেখেছি। নিজেকে বলেছি, এ-ও কি সম্ভব। একটি সোনার ছাদের নিচে বাস করে তারা কিভাবে দরিদ্র দেশে গিয়ে সেখানকার দরিদ্র শিশুদের নিজেদের ভরা পেটের সঙ্গে লাগিয়ে চুমু খায়! আমি বিশ্বাস করতে পারি না।’ পরে অবশ্য এমন মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা এবং পোপের প্রতি বিশ্বাস রাখতে সে দেশের মানুষকে অনুরোধ করেছিলেন।
ম্যারাডোনা নিজ দেশ আর্জেন্টিনায় কখনোই কোন নির্বাচিত পদে ছিলেন না। বরং তিনি এসব নিয়ে উপহাস, সমালোচনা করতেন। অবলীলায় বন্ধুদের প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনি নিন্দা সমালোচনা করতেও ছাড়েননি কখনো, কাউকে। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেনি- কোনকিছুই তাকে দমাতে পারেনি তার স্বকীয়তা, নিজস্বতা থেকে।
২০১৮ সালে, আর্জেন্টিনার সংবাদপত্র ক্লারিনকে ম্যারাডোনা বলেন, ‘ফিদেল আমাকে বলেছিলেন আমার রাজনীতিতে নিজেকে উৎসর্গ করা উচিত। ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজকে সাথে নিয়ে আমার তার ওখানে যাওয়া উচিত।’ ফার্নান্দেজ ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পযন্ত আর্জেন্টিনার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ম্যারাডোনা ফার্নান্দেজের নেতৃত্বাধীন পার্সনিস্ট দলের জাস্টিসিয়ালিস্টের একজন নিবন্ধিত সদস্য ছিলেন।
লাতিন আমেরিকা থেকে অনেক দূরের দেশ ফিলিস্তিন ও সে দেশের মানুষের স্বাধীনতার প্রতিও অকুন্ঠ সমর্থন ছিল ম্যারাডোনার এবং তিনি সে দেশের মানুষের স্বাধীন রাষ্টের ধারণার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বরাবরই। ২০১২ সালে, ম্যারাডোনা যখন দুবাই-ভিত্তিক ক্লাব আল-ওয়াসল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন একদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ফিলিস্তিনি জনগণের এক নম্বর ভক্ত। আমি তাদের শ্রদ্ধা করি এবং তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করি।’ এ সময় তিনি আরো বলেন যে, বুয়েনস আইরেসের বস্তিতে বেড়ে উঠা কারখানার শ্রমিকের পুত্র হিসাবে লড়াই করার কারণে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য তার সহানুভুতিটা সব সময়ের জন্য ‘
২০১৪ সালে, গাজায় ইসরাইলের বোমা হামলার ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ম্যারাডোনা। এরপর ২০১৪ সালে মস্কোয় ফিফা বিশ্বকাপের সময় প্যালেস্তিনি কর্তৃপক্ষের সভাপতি মাহমুদ আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেন, আমি মনে প্রাণে একজন ফিলিস্তিনি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments