বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারন সম্পাদক আলহাজ্জ মাইনুল হাসান খান নিখিল ভাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা। শেখ ফজলুল হক মনি আমার বাবার খুব কাছের বড়ভাই ছিলেন। আমার বাবাকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর (১৯৬৩-৬৪) ভিপি পদে নমিনেশন পেতে সাহায্য করেছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি সাহেব (আল্লাহ উনাদেরকে জান্নাতবাসী করুন)। বাংলাদেশের যুবাদের একত্রিত করে দেশের জন্যে কাজ করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১১ই নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী নতুন স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ অতীতে অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত নূর হোসেন যুবলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

বিগত বছরগুলোয় সেই যুবলীগের কিছু নেতা কর্মীর অসামাজিক ও নিন্দনীয় কাজের ফলে যুবলীগের সুনাম বিনস্ট হয়। যুবলীগে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বেশী যা আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের মতো না। তাই সমালোচিত নেতা কর্মীদের দলে পদ দেয়া ও তাদের বিভিন্ন নিন্দনীয় কাজের প্রতিফল হিসেবে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অপসারন করা হয় (এমনকি তাকে সাম্প্রতিক সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে ডাকা হয়নি)। চেয়ারম্যান অপসারন করলেইতো যুবলীগ পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে না। ওখানে হয়তো দুর্নীতিবাজদের সিন্ডিকেটের আরো লোক রয়ে যেতে পারে। তাই সেই বিতর্কিত নেতৃত্ব বা সিন্ডিকেট থেকে যুবলীগকে বাঁচাতে জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির সুযোগ্য বড় সন্তানের হাতে যুবলীগের দায়িত্ব দিয়ে তার বাবার তৈরী করা সংগঠন পুনর্গঠিত করার সুযোগ দিয়েছেন। যদিও অনেকে রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকা একজনকে যুবলীগের চেয়ারম্যান বানানোর বিভিন্ন সমালোচনা করছেন তবে তিনি “বাইরের” লোক হলেও যুবলীগ পুনর্গঠনে উনার ভালোবাসা ও আবেগ কাজ করবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এতে করে যুবলীগ সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিমুক্ত হবে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। তাছাড়া উনাকে সাহায্য করার জন্যে এমন একজনকে সাধারন সম্পাদক করা হয়েছে যে কিনা তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে উঠে এসেছেন ও তুলনামূলকভাবে অনেক সৎ ও ধার্মিক লোক। আশা করা যাচ্ছে তাদের যৌথ উদ্দ্যোগে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ দুর্নীতিবাজ মুক্ত হবে।
অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেবার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। গত ১০ বছর ধরে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। নেত্রীর নির্দেশে তিনি অধ্যাপনা থেকে রাজনীতিতে এলেন। উনাকে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ দেয়াতে আরেকটা বিষয় জনগনের কাছে প্রায় পরিস্কার। আর তা হচ্ছে দলীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতার চেয়ে আওয়ামী পরিবারের সৎ ও যোগ্য লোকদের নেত্রী সামনে নিয়ে আসছেন। দুর্নীতিবাজদের মধ্যে অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ থাকাতে দল এখন অভিজ্ঞতার চেয়ে সৎ ও মেধাবী রাজনীতিবিদ যাদের বাবা এক সময় আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন তাদের দলে, সংসদে ও মন্ত্রী সভাসহ অন্যান্য অনেক জায়গায় স্থান দিচ্ছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতিতে ভবিষ্যতে মেধাবীদের সামনে নিয়ে আসা হবে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছিল তা সত্য বলে মনে হচ্ছে।

আলহাজ্জ মাইনুল হাসান খান নিখিল ভাই তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক যুবনেতা। তিনি বৃহত্তর লালবাগ থানা ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে জড়ান। পরে ১৯৮৭ সালে মিরপুরে ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৩ সালে তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০০১ সালে তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হন এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে তিনি ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
উনি আমাদের মতলব (উত্তর) থানার কৃতি সন্তান। উনাকে একজন ধর্মপরায়ণ সৎ মানুষ বলেই জানি। পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবনের বাইরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল ভাই একজন সমাজসেবক। একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে তার ভূমিকা সুবিদিত। যে স্কুলে তার পড়াশোনার হাতেখড়ি বর্তমানে তিনি সেই মতলব উত্তর থানার নিশ্চিন্তপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি।
আমার বাবার সাথে উনার বাবার ভালো সম্পর্ক ছিল। উনার বাবা অবিভক্ত মতলব থানার দুর্গাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং আমার বাবা ছিলেন অবিভক্ত মতলব থানার সভাপতি (পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য) । তাছাড়া উনার সাথেও আমার বাবার ভালো সম্পর্ক ছিল।
আশা করছি উনাদের দুইজনের মাধ্যমে যুবলীগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত থাকবে। যুবলীগের দ্বারা নিন্দনীয় নয় বরং নন্দন সব কাজের পরিধি বাড়বে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা।
মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক
: মেলবোর্ন প্রবাসী শিক্ষক, গবেষক, রাজনীতিবিদ, লেখক ও কবি।
সাধারন সম্পাদক, মেলবোর্ন আওয়ামী লীগ।