রবে নীরবে । আরিফুর রহমান

  
    

সকালে নাস্তা করে ল্যাপটপ অন করল সালেকীনগতকাল থেকে চাকুরি নেই। তবুও অফিসের কাজ করবেঅফিস রুটিন অনুযায়ী কোন কাজনয়কিছু কাজ পেন্ডিং ছিল সেগুলো করে দিতে হবে। নাহলে গত দুইসপ্তাহের বেতন আটকে দেবে এদেশে চাকুরি হারানো আজ নতুন নয়। যখন তখন চলে যেতে পারে আবার যখন তখন পাওয়া যায় তাই তার চাকুরি হারানো নিয়ে মন খারাপ হয় না তেমনি কোন চিন্তায় বা মুশকিলকে মোকাবেলা করতে হয় না সালেকীনের

কিন্তু এবার তাকে বেশ ভোগাচ্ছে, বেশ ভোগাচ্ছে টাকা পয়সার টান পড়ে গেছে সব সমস্যা যেনো গিট্টু লেগে গেছেকিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছে নামোবাইলের হেডফোনের তারের মতো ছাড়াতে গেলেই আবার যেন নতুন রুপে লাগেজীবন টাই হয়ত গিট্টু। সমস্যা গুলো মিটে গেলেও সালেকীনের স্বস্তি ফিরে আসবে না সকল সমস্যা যে একটি জায়গায় আটকে আছে। একটি স্থানে স্থির হয়ে থাকে মিতুর স্মৃতিতে সকল স্মৃতি যেন থেমেগেছে। প্রায় সবাই যখন ফোন করে সালেকীনকে খোঁজ খবর নেয়নিজেদের কথা বলে কমিউনিটির ভিতরে অদৃশ্য এক অন্তঃস্রোতের যেনসন্ধান পেয়েছে সবাই এই স্রোতে হাজার গল্প রয়েছেহাজার দু: রয়েছেরয়েছে কান্না পাশাপাশি রয়েছে ঝকমকে আনন্দ সিডনিতে মেয়েদের আনন্দ বিনোদনে সালেকীনের চোখ ঝাপসা হয়না কিন্তু সব মিলেমেয়েতে মেয়েতে যেন এক আত্তীয়তা রয়েছে পুরুষ শাষিত সমাজ যেন এখানে বিলিন নিঃশেষ হওয়ার পথে

কাজ করতে করতে সালেকীন মোবাইলের দিকে তাকালো মুহূর্তের মধ্যে সে অন্যমনস্ক হয়ে গেলোফেসবুকের পর্দায় ভেসে উঠল মিতুর গান কি চমৎকার বেদনা মিতুরকন্ঠে কয়দিন আগে সিডনির এক প্রোগ্রামে মিতুর গান তুমুল জনপ্রিয়হয়েছে হল ভর্তি লোকজন মিতুর গানে মাতোয়ারা ছিল মিতু কি ধীরেধীরে বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছেনাকি মিতুকে বিখ্যাত বানাচ্ছে কিছু লোক। অনেকের কাছে শোনা মিতুর আশেপাশে ইদানিং কিছু উদ্ভট লোকজন ঘোরাফেরা করেসালেকীন সেকারনে বিব্রত হয় কিন্তু মিতু বিব্রত হয়কিনা তার ওর জানা নেই অবশ্য ওর বিব্রত হওয়ায় মিতুর আজকাল আসে যায় না সম্পর্ক যে জায়গায় বা যে স্থানে গড়িয়েছে তাতে মিতুর বিন্দুমাত্র যায় আসে না তা সালেকীন ভালো করে বুঝে অথচ কী অদ্ভুত এক মায়াময় সম্পর্ক ছিল মুহূর্তের মধ্যে সালেকীনের মন খারাপ হয়ে গেলো। ল্যাপটপের ঢাকনা বন্ধ করেএক গ্লাস পানি ঢকঢক করে খেয়ে মোবাইলটা হাতে নিলএকজনের সঙ্গে ফোন করলে তার ভালোলাগে। সব কথা শোনা যায় নিজের আবেগবেদনা কিছু সময়ের জন্য ভাগ করে নেয়া যায় আসলে একা বেঁচে থাকার জন্য সঙ্গী দরকার একটা ছায়া দরকার

 

সালেকীন ফোন করল একজন কে ধরলেন এক ভদ্রমহিলা

হ্যালো ?’

আপু আমি সালেকীন বলছি একটু কথা বলতে চাই আপনার সঙ্গেএকটু সময় দিবেন?’

বল সালেকীন

আমি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব উত্তর দিতে চাইলে দিবেন  দিতে না চাইলে দিবেন না

হুম বল তবে তাড়াতাড়ি করতে হবে আমি বাইরে যাব এক প্রোগ্রামে

তাহলে পরে ফোন করি আপু?’

না না এখুনি বল

আপনার নামটা একটু বলবেন আপু?’

সালেকীন নাম জিজ্ঞেস করাতে তিনি হতভম্ব এবং বিস্মিত হয়ে বললেন,

কী সর্বনাশের কথা তুমি আমার নাম ভুলে গেছোএই অবস্থা তোমারকি করে হলো সালেকীনতুমি কি ডাক্তার দেখিয়েছো? ‘

সালেকীন হোচট খেল খানিক সে বিমর্ষ কন্ঠে বলল,

‘ মারাত্মক কিছু হয়নি আপু ইদানিং কারো নাম মনে করতে পারছিনা। আপনাকে ফোন দেওয়ার আগে বহুবার ভেবেছি কিন্তু মনে করতে পারিনি। 

‘ তাহলে ফোন দিলে কিভাবেফোনের কন্টাক্ট লিস্টে আমার নাম লেখানেই?’

‘ না আপু নেইশুধু আপু নামে সেভ করা ‘

হুম বুঝলাম  কিন্তু আমার নাম দিয়ে কি করবেকেনইবা তোমারনামেরপ্রয়োজন হলো ‘

সালেকীন কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলো ফোনের ওপাশ থেকে তার আপুহ্যালো হ্যালো করল কয়েকবার  তারপর বলল,

‘ আমার নাম ফায়জুন নেসা

সালেকীন নামটা শুনে স্বস্তি পেল যেন মাথা থেকে এক বোঝা নেমেগেল সালেকীন বেশ তৃপ্তিময় হাসিতে বলল,

‘ আপু কি করেন আপনি?’

‘ এখন কি করি নাকি আমার প্রোফেশন কিকোনটা জানতে চাওআমার তো মনে হচ্ছে তুমি আমার সব ভুলে গেছ সালেকীন

সালেকীন চুপ মেরে অপেক্ষা করতে থাকলেন  কারণ তার কিছুই মনেনেই

‘ এখন বই পড়ছিলাম আর আমি জব করি হসপিটালে এখন তোবলবে হসপিটালে কিসের জব হয়ত তুমি ভুলে গেছ আমি ডাক্তারহাসপাতালে  ডাক্তারি করি রুগী দেখি

ফায়জুন নেসার কন্ঠে সামান্য বিরক্তির প্রকাশ সালেকীনের তাতে যায়আসলো না সে তার সব কিছু শুনে সামনে থাকা কাগজে লিখেফেলল

আপু আপনি এখন কী বই পড়ছেন? ‘

হাদিসের বই ‘

আপনি গান শোনের না আপু? ‘

‘ না

‘ কেনো আপু?’

‘ কারণ রোজার মাসে আর পাপ করতে চাইনা

সালেকীন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ গান শুনলে কি পাপ হয় আপু?’

‘ হুম হয় গান শুনলে শয়তান ভর করে

‘ তাহলে যে মিতু গান করে বেড়াচ্ছে তার জন্য কি ওর ঘারে শয়তানডাবল ভর করেছেকারণ শুধু শুনলে যখন শয়তান ভর করে নিশ্চয়গান গাইলে ডাবল শয়তান ভর করবে

ফায়জুন নেসা বেশ উচ্চ গলায় বললেন,

‘ নিশ্চয়ই ডাবল তো অবশ্যই ভর করবে জাহান্নাম অনিবার্য

সালেকীন হো হো করে হাসলো কঠিন এক হাসিতে বলল,

‘ আপু শয়তানের আর কি কি কাজ জানেনতাদের কাজ কি ভর করাইনাকি আরো কিছু কাজ আছে?

সালেকীনের এই কথাতে ক্ষেপে গেলেন ফায়জুন নেসা এবং বললেন,

‘ তুমি কি আমার কাছে ফোন দিয়েছো ধর্মকর্ম নিয়ে ফাইজলামি করারজন্য রোজা রমজানের দিনে এইসব ফাজলামো করবে না সালেকীন 

‘ আচ্ছা আপু করব না এইবার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন প্লিজ?’

খুব গম্ভীর ভাবে বললেন,

‘ বল

আপনি কি কাউকে ভয় পান আপু?’

একমাত্র আল্লাহ কে ভয় পাই

আপনি কোন জিনিসকে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন?’

কুটনামি করাকে‘ যাকে আমরা গীবত বলি

সালেকীন আরো কিছু প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল ফায়জুন নেসা রেগেবললেন,

‘ সালেকীন তুমি আর সুস্থ হওয়ার পূর্বে আমাকে ফোন দিবে না আরঅনুরোধ করছি তুমি অতি তাড়াতাড়ি একজন পাগলের ডাক্তার দেখাওআমি তোমাকে এখুনি ভালো সাইক্রিয়াটিস্টের নাম এবং ঠিকানা সেন্ডকরছি প্লিজ সালেকীন তুমি আমায় আর ফোন দিবে না তোমার কথাগুলো খুব অপ্রাসঙ্গিক 

বলেই তিনি ফোন কেটে দিলেন সালেকীন হাহা হা করে কিছুক্ষণহাসলো হেসে চেয়ার থেকে উঠে তার ১২ ফিটের রুমের এই পাশ থেকেওইপাশে হেটে গিয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল তার কেন যেন ভীষণমজা লাগছে দারুণ এক মজা সে আবার ফোনটি হাতে নিল,

ফোনের হোয়াটস অ্যাপে লিস্ট দেখল কয়েকশত মিসড কল জমে আছেহোয়াটস অ্যাপে অধিকাংশই বাংলাদেশের মানুষএত মিসড কল দেখেসালেকীন অবাক হলো না তার কোনকিছু আর অবাক লাগে না মনেহয় এটাই স্বাভাবিক মিল্টন ফোন করেছে অনেক বার মিল্টন তারফ্রেন্ড সে একজন সিরিয়াস কবি সালেকীন ডাকে মহাকবি মিল্টন কেফোন দিল

‘ হ্যালো দোস্ত

‘ কি খবর মহাকবি

‘ মহাকবি এখনো হতে পারেনি তোকে বলেছি যেদিন হবো সেদিন এইনামে ডাকিস তার আগে নয়

‘ তুই আমার কাছে মহাকবি হয়েছিস তোর জন্মের পর থেকেই

মিল্টন হাসলো হো হো করে হেসে বলল,

‘ কিন্তু তোরে ফোন দিলে ধরিস না ক্যানএতবার ফোন দিয়েছি যেআমার প্রেমিকাদেরও এতোবার ফোন দেইনা

‘ এই যে আমি নিজেই ফোন করলাম তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবঠিকঠাক উত্তর করবি কোন ভনিতা করবি না‘ তোর মনোজগতেঅশ্লীলতা আছে আমি জানি সেটাকে কাব্যিক রুপ দিয়ে ভালো হওয়ারভান সাজবি না

মিল্টন হো হো হো করে হেসে বলল,

ওকে করব না

‘ অল্প বয়সের ছেলেরা বয়স্ক মেয়েদের প্রেমে পড়ে কেনআর বয়স্কপুরুষেরা অল্প বয়সী মেয়েদের প্রেমে পড়ে কেন?’

মিল্টন সত্যি সত্যিই কোন ভনিতা না করে বলল,

‘ কারণ তাদের মস্তিস্কে নারীর ছবি আঁকা থাকে ভিন্ন ভিন্ন রুপে ছবিটিশুধু মুখের নয় নারীদের শরীর আঁকা থাকে তাদের মগজে কারো মধ্যেনির্মলতা থাকে কারো মধ্যে নোংরামি থাকে অবশ্য সব পুরুষের মস্তিস্কে  নারীর অবয়ব আঁকা থাকেতবে সবার কল্পনার কেন্দ্রিক একনা কিছুকিছু  অল্প বয়সী ছেলে একটু  বয়স্ক  নারীদের মাঝে সুখ খুঁজেবেড়ায়অনুভব করতে চায় সেই নারী ম্যাচুয়িডিটা সেটা নিজেদের ইনম্যাচিউরট কারনে সেই নারীর শরীর তাদের কাছে আরাধনা মনে হয়

‘ আর বয়স্ক পুরুষের বেলায়?’

‘ তাদের বেলায় আমি দুটি কবিতার লাইন বলব তাতেই বুঝে যাবি তারাকেন এমন

‘ বল

ফেলে আসা উর্বশী গোলাপ হাতে ছিল সেই জীবনে

ইন্দ্রোজালের মতো তাহারা হারাতে বসেছে চিরজীবনে

তাই তারা হারাতে চায়না বারবার সেই জীবনে ফিরে যেতে চায়তারানারীর সুন্দর মুখের দিকে তাকালেও ওই মুখের আদলে সে মেয়েটিরগোপনাঙ্গ ভেসে উঠে মনে গোলাপের মতো শরীর তার ভিতরে স্বপ্নের মতো নেচে উঠে

‘ হ্যা বুঝলাম আচ্ছা বলতনারীদের সমস্যা কী কী?’

মিল্টন খানিক হেসে বলল,

‘ বহুবিদ সমস্যা তাদেরকোনটা রেখে কোনটা বলব?’

‘ এক নম্বর সমস্যা টাই বল

‘ আচ্ছা ইদানিং কালের নারীদের মেইন সমস্যার কথাই বলি মেয়েরাতুখোর দৃষ্টি খুব পছন্দ করছে

‘ বুঝলাম নাতুখোর দৃষ্টিটা কি?’

মিল্টন হো হো করে হেসে বলল,

সোজা বাংলায় বলা যায় কুদৃষ্টিলুচু দৃষ্টি তারা ইদানিং কুদৃষ্টি খুব করেলুফে নিচ্ছে গ্রহন করছে তাদের ভালো লাগছে আসলে এর কারণআছে ইদানিং কালের মেয়েরা অন্য মনস্তত্তে ভুগছে তারা নিজেদের খুবসুন্দর মনে করে আর আশা করে ছেলেরা তুমুল ভাবে তাদের দেখুক

সালেকীন খুব গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ এসব কি তোর ধার করা কথাবার্তা নাকি নিজের কল্পনা?’

‘ কোনটাই না  এগুলো আমার অভিজ্ঞতা 

হুট করেই সালেকীন ফোন কেটে দিল ফোন আবারো বাজতে থাকলো কিন্তু সালেকীন ফোন ধরল না বারবার ফোনের আওয়াজে বিরক্ত হয়েঅফ করে দিয়ে আবারো জানালার কাছে এসে দাঁড়াল তাতেও যেন সস্তিপেল না বাইরে বের হলো সন্ধ্যা হয়ে আসছে এই সময়টায় পূর্ব সূয্যকেনিয়ে পশ্চিম দিক এগতে থাকে পশ্চিমের  আকাশে গাঢ় লাল বর্ণ হয়েআছে সে হাঁটতে লাগলো পকেটে হাত দিল সিগারেটের জন্য,কিন্তুনেই সিগারেটের দোকানে গিয়ে এক প্যাকেট সিগারেট কিনল এই দেশেসিগারেট স্বনে চেয়েও বেশী দামী একটা কিনতে চাইলেও কেনা যায়নাসিডনির পরিচ্ছন্ন ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো উঁচু নিচু ফুটপাতএদেশে যেখানে উঁচু সেখানেই উঁচু করে রেখেছে কিন্তু হাঁটার সময় টেরপাওয়া যায় না পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় সমতল পেরিয়ে পাহাড়েউঠে এসেছে মাঝে মাঝে অবশ্য খুব ক্লান্ত লাগে আজ সালেকীনেরক্লান্ত লাগছে না একদম দৌঁড়ে দৌঁড়ে হাঁটছে সে যেন তার তাড়া আছেআসলে কোনদিকে যাচ্ছেকি কারণে যাচ্ছে সে নিজেও জানেনা তারএই হাঁটার রোগ আগে থেকেই ছিল  তবে এমন ছিল না  বেগতিকভাবে রোগটা বেড়েছে তার চোখে শুধু মিতুর মুখখানা ভাসছেআরমিল্টনের কথা গুলো মিতুর সঙ্গে মেলাচ্ছে মিতু কী সেরকম হয়ে গেলতার সুন্দর মুখখানাআকর্ষনীয় শরীর খানা কি অন্যদের মতো করেঅপরকে দেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকে অন্যের দৃষ্টিকে নিজের শরীরেরউপর ফেলাতে তার অন্যরকম চলাএই কারণেই কি সালেকীন কে ভুলেযাওয়াসালেকীনের তো দৃষ্টি ছিল ভালোবাসার অন্তরে ছিল গভীরপ্রেম এসব কি আসলে মিতুর ভালোলাগেনিমিতুর পছন্দ হয়নিকিন্তুমিতু কিছুতেই এমন হতে পারে না সে যে মায়াবি সে চিরকাল তাইথাকবে এটা নিশ্চয় সালেকীন ভুল ভাবছে মিতুর মতো মেয়েরা আছেবলেই এখনো মেয়েদের অতি সুন্দর সৌন্দর্য আছে নারীত্ব আছেমমতাময় আছে সালেকীন তিন নাম্বার সিগারেট ধরালো গভীর একটাটান দিয়ে আরো জোরে হাঁটতে লাগলো মনে হচ্ছে সে আজ মাইলেরপর মাইল হাঁটবে আসলে কিছু মানুষ হয়ত এমনই তারা যখন নিজেরমনের কাছে পরাজিত হয় তাখন তাদের দিক দিশানা থাকে না তারাহয়ে উঠে মানুষবাহিত বাতাস যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই তাদের গন্তব্যছুটে যায়

মধ্যরাত আননোন নাম্বার থেকে ফোন বেজে যাচ্ছিলনাজমুল ফোনধরল ফোনের ওপাশের কথা শুনে সে চমকে উঠল তাতক্ষনিকচোখেমুখে বিষাদের কালো ছায়া নেমে এলো হন্তদন্ত ছুটে গাড়ি নিয়ে বেরহল তার আরো বন্ধুদের ফোন করল তারাও অতি দ্রুত বের হলমধ্যেরাতের সিডনি ফাঁকা রাস্তা নিয়ন আলো জলছে  কিন্তুনাজমুলের কাছে ভয়ংকর মনে হচ্ছে এই সৌন্দর্যময় শহর বুকের মধ্যেকেমন একটা ভীতিপূর্ণ শংঙ্কা তার হাত কাঁপছে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরেথাকতে সমস্যা হচ্ছে ক্যান্টোবেড়ি হাসপাতালের সামনে এসে গাড়ি পার্ককরল তার বন্ধুদের আবারো ফোন দিল তারাও কাছাকাছি এসেপৌঁছেছে নাজমুল সিগারেট ধরাল বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করতেলাগলো সবার চোখেমুখে এক ধরণের শংঙ্কাভীতি হসপিটালেরভিতরে ঢুকল সালেকীন চিত হয়ে শুয়ে আছে একটি বেডে নীরবনিস্তব্ধ সালেকীন পুলিশ কল করেছিল নাজমুল কে সালেকীনেরগার্ডিয়ান হিসাবে তার একটি কার্ডে নামমুলের নাম দেওয়া ছিল সেরাস্তার পাশে এক জঙ্গলের মধ্যে পড়ে ছিল পুলিশ সেখান থেকে তাকেউদ্ধার করেছে অবচেতন অবস্থায় সালেকীনকে পুলিশ হাসপাতেলেনিয়ে এসেছে নাজমুল হঠাত চমকে যায় মিতুকে দেখে মিতু এক বেঞ্চিরকোনায় বসে আছে মলিন মুখ মায়াবি মলিন সবাই অপেক্ষা করছেকখন সালেকীনের জ্ঞান ফিরবে নাকি সালেকীনের আর জ্ঞান ফিরবেনাএখন পর্যন্ত কিছুই জানেনা শেষমেষ নাজমুল ডাক্তারের সঙ্গে কথাবলে জানতে পারল জ্ঞান ফিরবে হয়ত কিন্তু বেশ দেরি লাগবে কারণতার ব্রেইন কোন কাজ করছে না অতিশয় মনস্তাত্তিক আঘাতের কারণেবেশ কয়েকদিন যাবত সালেকীন উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে একাকীত্ববিষন্নতা তাকে দিনে দিনে অন্য এক জগতে ব্রেইন কাজ করা শুরু করেদিয়েছে এসব কথা নাজমুল জানতে পারে ডাক্তারের কাছে

প্রায় এক সপ্তাহ যাবত সালেকীনের সঙ্গে তাদের কোন দেখা সাক্ষাত হয়না ফোন করলেও সে ফোন ধরেনা সবকিছু শুনে নাজমুল হতভম্ব হয়েযায় সালেকীনের মতো ছেলের কিছুতেই এরকম অবস্থা হতে পারে নানাজমুল মিতুর পাশে গিয়ে বসে মিতুর থেকে কিছু জানার চেষ্টা করেকিন্তু মিতু নীরব কোন কথা যে বলবে না এটা নিশ্চিতসে কিছু একটাবলতে যাচ্ছিল সেই মুহূর্তে মিতু উঠে অন্যদিকে চলে যায় নাজমুল আরকথা বলার চেষ্টা না করে চুপচাপ বসে থাকে

সালেকীন বাসায় এসেছে এক সপ্তাহ যাবত নাজমুল তাকে দেখাশোনাকরে মিতু দিনের মধ্যে কয়েকবার খোঁজ খবর নেয় নাজমুল কে ফোনকরে কিন্তু এতে সালেকীনের কোন সাড়া নেই নেই কোন ব্যস্ততাসারাক্ষণ কল্পনা করে কী ভাবে এই জগতের মানুষের জানার উপায়নেই কারণ সে কোন কথা বলে না ডাক্তার বলেছে তাকে কোন চাপ নাদিতে কারণ সে বিশাল এক ট্রমার মধ্যে আছে এসব ট্রমা আপনাআপনি ঠিক হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিজের কাছে মনে হবে না এইপৃথিবী অনেক মায়াময় যখন বুঝবে এই পৃথিবী আসলেই মায়াময়আসলেই এই পৃথিবীতে অনেক কাজ করার আছে অনেক কিছু নেওয়ারবা দেওয়ার আছে তখনই সে এই জগতে পদার্পণ করবে তাছাড়া নয়ডাক্তারের কথা অনুযায়ী নাজমুলও কোন চাপ দেয় না সালেকীনকেতবে সালেকীন কিছু একটা ভাবে 

 

একদিন শীতের সকাল। শীতল কন্ঠ তার কানে ভেসে আসছে মিতুরকন্ঠে গান শুনে সালেকীন বারান্দা থেকে উঠে এসে ঘরে ঢোকে মিতুনীল শাড়ি পরেছে নীল টিপ সে সুমধুর কন্ঠে সালেকীনের চেয়ারে বসেগান গাচ্ছে সালেকীন  বিস্মিত হয় না ভাবখানা এমন দেখায় মিতুইআজ ভোরে আসার কথা ছিল সে মিতুর পাশে বিছানায় বসে নিমগ্নমনে গান শোনে মিতুর পায়ের দিকে তাকায় মিতু নখ গুলোতে নেইলপালিশ দিয়েছে অবাক হয় মিতু পায়ে আলতা দেখে ফোকলা মুখেসালেকীন হাসে মিতু গান বন্ধ করে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

‘ হাসলেন কেন‘?

‘ কারণ পায়ের আলতাতে তোমাকে উর্বশী যুবতীর মতো লাগছেবেমানান তোমার পায়ের সাথে

‘ আপনি কখনো চেইঞ্জ হবেন নানাহ? ‘

‘ কী চেইঞ্জ হবো‘ যেমন লাগছে সেরকমই তো বললাম

‘ হায়রে সালেকীন রেযার জন্য পাগল প্রায় আর সে আসছে তার কাছেকিন্তু তার কোন উল্লাস নেইবিস্ময়তা নেই চোখে মুখেঅবাক কান্ড ‘

সালেকীন মৃদু হেসে বলে,

‘ কেনো থাকবে ওসব কারণ আমার মিতু তো আমার কাছেই আসবেএটাই তো সাভাবিক‘ এই জীবন যে মিতুর জন্যই

‘ ইশ কী শখ

‘ হ্যা শখ

‘ এতো ভালোবাসতে হয় একজন কে মানুষ কে?’

সালেকীন এবার একটু গম্ভীর ভাবে বলে,

‘ ভালোবাসা তো এতো ভালোবাসার জন্যই কম ভালোবাসা তোভালোবাসার জন্য না আকাশে অগণন নক্ষত্র থাকে তার ভিতরেকয়েকটি নক্ষত্র বেশি জলজল করে তেমনি মানুষের মধ্যে প্রচুরভালোবাসার মানুষ থাকে তার মধ্যে একটি মাত্র জলজলে ভালোবাসামিতুর জন্য ‘

মিতু মিটিমিটি হেসে বলে,

‘ আহা কী অদ্ভুত প্রেম সালেকীনের জঙ্গলে মঙ্গলে পরে থাকে প্রেমেরজন্য

সালেকীন হাত দিয়ে মুখ লুকায় আর বলে,

তাতে কী হয়েছে হ্যাজঙ্গলে মঙ্গলেনক্ষত্রের নিচে আমি মিতুরভালোবাসার দরজা খুঁজে বেড়িয়েছি তাতে কার কি সেই দরজার মধ্যেসেই ঘর ঠিকই আজ নীল শাড়ি পরে আছে আমারই ঘরে আমারইসামনে

‘ শয়ন মন্দিরে তুমি এসেছনীল শাড়িতে

অস্থির দুহাতে জরিয়ে ধরে ফেলি আমার নয়নে

 

সেই থেকে মিতু আর সালেকীন একই সঙ্গে একই জীবনে একই জগতেএকই বসবাসে

একটি জীবন,অপেক্ষায় ছিল

কখন তার ঠোঁট থেকে শব্দগুলো উচ্চারিত হয়!

তুমুল সমুদ্রে নৌকাছিন্ন পালযতদিন বাঁচে

তার ভালোবাসার মন্ত্র শোনার জন্য ভেসে যায় এখন তারা দুজন

সেই শব্দ মিতু উচ্চারণ করে,

সালেকীন আমিও তোমাকে ভালোবাসি‘।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments