রাঙার ঔদ্ধত্যের ক্ষমা নেই, প্রতিবাদের ঝড় দেশে বিদেশে

  
    

প্রশান্তিকা ডেস্ক: জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা গনতন্ত্রের প্রতীক শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবা ও ফেন্সিডিল খোর এবং মানসিক বিকৃতিগ্রস্ত’ মন্তব্য করায় দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিবাদের ঝর উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ না করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল ঢাকা প্রেসক্লাব চত্বরে নূর হোসেনের মা সহ তাঁর পরিবারের সকলে মন্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সন্মেলন করেছেন।

জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা

গতকাল বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনে
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ ছিল বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন যখন মারা গেছেন, তখন ইয়াবা বা ফেনসিডিল পাওয়া যেতো না। এই দুটি শব্দ স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। তবে সে সুস্থ প্রকৃতির মানুষ ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।’

নূর হোসেন

উল্লেখ্য, ১০ নভেম্বর রোববার বনানীতে জাপার চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ‘গণতন্ত্র দিবস’-এর এক আলোচনা সভায় রাঙা বলেছিলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করলেন? নূর হোসেনকে? কে নূর হোসেন? একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর।’

প্রতিবাদ:
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল হক প্রশান্তিকাকে বলেন, “জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙার বক্তব্য অশালীন, অপরিনামদর্শী, অবিবেচক, ইতিহাস বিবর্জিত ও মিথ্যের বেশাদী। সর্বোপরি অপ্রকৃতিস্ত মনের বহিপ্রকাশ। রাঙা জাতীয় পার্টি কেবল নয় যেকোন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বেমানান। আমরা অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে তার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

নূর হোসেনের মায়ের প্রতিবাদ

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের প্রধান উপদেস্টা গামা আব্দুল কাদির বলেন, “ ১০ নভেম্বর নূর হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যার বুকে ও পিঠে ছিলো গনতন্ত্র উদ্ধারের অমর বাণী, ‘গনতন্ত্র মুক্তি পাক ও স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’। সেই ঘটনার পর স্বৈরাচার রাস্ট্রপতি এরশাদ অনেকদিন বেঁচে ছিলেন, কিন্তু কখনই তিনি নিজে নূর হোসেনকে কটাক্ষ করে কিছু বলেননি। আজ হঠাৎ মহাসচিব রাঙার কি হলো যে এরকম মন্তব্য করতে হচ্ছে ! নূর হোসেন, ডা. মিলন সহ অনেকেই সে সময় শহীদ হয়েছেন। রাঙার বক্তব্যে আমি বিস্মিত হয়েছি। আসলে রাঙার নিজের মানসিক ভারসাম্য দেখা দিয়েছে এবং তাকে কাউন্সিলিং নিতে হবে। এটা হতে পারে তিনি বিশৃঙ্খলা করার সৃষ্টি করছেন। আমরা অচিরেই তার পার্টির মহাসচিব বা যেকোন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাই।”

অস্ট্রেলিয়াবাসী প্রখ্যাত কলামিস্ট অজয় দাশগুপ্ত বলেন, “এখন রাজনীতি নাই। নেতা নেতৃত্ব কিছুই নাই। থাকলে রাঙ্গাঁ এমন কথা বলতে পারতেন না। এরা ভাড়া করে মানুষ এনে মাঝে মাঝে উদ্ভট আর মনখারাপ করা কথা বলে পপুলারিটি চায়। খবরহীন, শুষ্ক মিডিয়া এগুলো লুফে নেয়। কিন্তু কারো সাধ্য নাই রাঙ্গাঁকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। এরা ধরে নিয়েছে তারা সবকিছুর ঊর্দ্ধে। ভোট লাগে না। সমর্থন লাগে না। মানুষও লাগে না। লাগে একটা সাইনবোর্ড। সেই সাইনবোর্ড এখন কতটা শক্তিশালী আর বেপরোয়া, রাঙ্গাঁর কথায় শহীদ নূর হোসেনের অপমানই তার বড় প্রমাণ।
আমরা কি এভাবেই সবকিছু হারিয়ে এতিম হতে থাকবো? রাঙ্গাঁরা এটা বুঝে গেছেন মাজাভাঙ্গা সমাজে কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। হায়রে রাজনীতি।” (সূত্র: বিডিনিউজ২৪)

সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী সাংবাদিক ও ব্লগার অমি রহমান পিয়াল বলেন, “আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মুখ খুলেন প্লিজ! রাঙ্গা হারামজাদা এখন সুর বদলাইছে, বলতেছে শহীদ নুর হোসেনরে এডিক্টেড বলাটা তার স্লিপ অব টাং, আসলে সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলো। আপনারাও কি তাই মনে করেন? মানসিক ভারসাম্যহীন একজন কিভাবে স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তিপাক বুকে পিঠে লেইখা জীবন্ত পোস্টারের রূপ নেয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারে মৃত্যুর দশ মিনিট আগে বলছিলেন- এই ছেলে তুমি তো টার্গেট হয়ে গেছো, তুমি এখান থেকে সরে যাও, ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। শহীদ নুর হোসেনের গর্বিত উত্তর ছিলো- মরণরে ভয় করি না আপা, তাতেও যদি স্বৈরাচারের হাত থেকে জনগনের মুক্তি মিলে। আপার কথা ফলছিলো, নুর হোসেনেরও। কিন্তু তারপর ভোটের হিসাবে সব বদলায়া গেলো। সেটা না হয় মাইনা নিছি। কিন্তু তার এই অবিস্মরণীয় আত্মদানরে নিয়া ঠাট্টা আপনারা কি কইরা এতো সহজভাবে নিতেছেন, সহ্য করতেছেন। নুর হোসেন কাদের জন্য রক্ত দিছিলেন? জীবন দিছিলেন? মানসিক ভারসাম্যহীন আসলে কারা?”

ডাকসুর বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রাঙা শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর বলে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের একজন শহীদকে যেভাবে অপমান ও অশ্রদ্ধা করেছেন, ডাকসু তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একই সাথে মশিউর রহমান রাঙাকে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার ও জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানায়। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করা গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।”

অন্যদিকে গতকাল সোমবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে বলা হয়, “সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা ৯০-এর গণআন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগকে কটাক্ষ ও বিকৃত করে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা জাতির জন্য অবমাননাকর। তাই এমন বক্তব্য প্রদানকারীকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবো।”

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments